হ্যালির ধূমকেতুর কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি, যা ৭৫ বছর পর দেখা যায়। এবার বিজ্ঞানীরা এমন এক ধূমকেতুর খবর দিয়েছেন, যেটি ১ লাখ ৬০ হাজার বছর পর পৃথিবী থেকে দেখা যাচ্ছে। ধূমকেতুটি এই সপ্তাহে সৌরজগৎ পার হচ্ছে। সূর্য থেকে ৮৩ লাখ মাইল কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করায় একে দেখাটা কঠিন।
ধূমকেতুটির নাম ‘সি/২০২৪ জি৩’ বা অ্যাটলাস। অ্যাস্টরয়েড টেরিস্ট্রিয়াল– ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেম একটি সংস্থা। এরা শনাক্ত করায় ধূমকেতুটির এমন নাম দেওয়া হয়েছে। ধূমকেতুটি এ বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের নাসার (ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) মেটিওরয়েড এনভায়রনমেন্ট অফিসের প্রধান বিল কুক বলেন, ‘এটা অবশ্যই ২০২৫ সালের উজ্জ্বলতম ধূমকেতু। কেউ যদি প্রশ্ন করেন, এটা কি ২০২৫ সালের সবচেয়ে উজ্জ্বল ধূমকেতু? এর উত্তর কেউ জানে না। কারণ এখনও ১১ মাস বাকি।’
কীভাবে ধরা পড়ল সি/২০২৪ জি৩ ধূমকেতু হলো আন্তঃনাক্ষত্রিক গোলক। ধুলা, পাথুরে পদার্থ এবং বরফে ঠাসা। একে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, বড় তুষারময় ধুলার বল। এটা কখনও কখনও আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘ থেকে উৎপন্ন হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক নিকোল লুইস জানান, সি/২০২৪ জি৩ গত বসন্তে আবিষ্কৃত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা নিয়মিত নক্ষত্র এবং মহাকাশের অন্যান্য বস্তুকণার ওপর নজর রাখেন। তারা এজন্য সমীক্ষা ও ক্যাটালগ ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিতভাবে আকাশ পর্যবেক্ষণ করি। পৃথিবীতে আঘাত করতে পারে– এমন যে কোনো কিছু খুঁজি। সেই অনুসন্ধানে ধূমকেতুটি ধরা পড়ে।’
বাংলাদেশ থেকে কি দেখা যাবে?
বিজ্ঞানীরা জানান, যত উজ্জ্বল হোক না কেন, ধূমকেতুটি দেখা খুব কঠিন; খালি চোখে হোক বা দুরবিন দিয়ে। সে আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তের বাসিন্দাই হোন না কেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) টেকনিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর এবং অবজারভেটরি ম্যানেজার টিম ব্রাদার্স জানান, এই বিরল মুহূর্ত উদযাপনে সবচেয়ে বড় বাধা শীতকালীন কুয়াশা এবং দূষণজনিত ধোঁয়া। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘ধূমকেতুটি সূর্যের এত কাছে যে এটি দেখার জন্য দূরবীন ব্যবহার করলে তা দৃষ্টিশক্তির জন্য ক্ষতিকর পারে।’
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক অ্যাস্ট্রনমারস উইদাউট বর্ডার্সের অ্যান্ড্রু ফাজেকাস বলেন, ‘সূর্যের দিকে তাকানোটা বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলার দিয়ে। ফলে এবারের ধূমকেতু দেখার কাজটা আরও উন্নত অপেশাদার জ্যোতির্বিদদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। তারাই চেষ্টা করে দেখুক না?’
বিল কুক বলেন, আজ বুধবার রাতেই সম্ভবত এটি পৃথিবী থেকে শেষ দেখা যাবে। এরপর সরঞ্জাম ছাড়া এটি দেখতে পারা প্রায় অসম্ভব।
অ্যান্ড্রু ফাজেকাস জানান, আকাশে গ্রহ-নক্ষত্র দেখা অনেক ধৈর্য ও কষ্টের ব্যাপার। তাঁর পরিচিত বিজ্ঞানীরা ধূমকেতুটিকে দেখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। কারণ এর অবস্থান সূর্যের খুব কাছাকাছি। সূর্যের আলোর যে তীব্রতা, তাতে ধূমকেতুর আলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেটা দেখা কঠিন হয়ে উঠেছে। এটি বর্তমানে সূর্যকে ঘিরে রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে এটি সূর্য থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করবে। তিনি আরও জানান, দক্ষিণ গোলার্ধের মানুষ এটিকে আরও ভালোভাবে দেখতে পাবে।
দক্ষিণ গোলার্ধ বলতে অ্যান্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকাকে বোঝায়। এশিয়ার পূর্ব তিমুর, ইন্দোনেশিয়া এবং মালদ্বীপের একাংশও দক্ষিণ গোলার্ধে পড়েছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে যে এটা দেখা যাবে না, তা সহজে অনুমান করা যায়। আর ঢাকা থেকে তো নয়ই। কারণ আলোর দূষণে ঢাকার আকাশ থেকে কোনো নক্ষত্র দেখা যায় না।
ধূমকেতুটি কোথা থেকে কীভাবে দেখব?
যারা ধূমকেতুটি দেখতে নাছোড়বান্দা, তাদের জন্য বিজ্ঞানীরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তারা জানান, অস্ট্রেলিয়ার মানুষ সম্ভবত এটি খালি চোখে দেখতে পারবে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এটা দেখা যাবে অনেকটা সন্ধ্যাতারার মতো। এ ক্ষেত্রে পরামর্শ, ধূমকেতু দেখার জন্য অন্ধকার স্থান বেছে নিন। অস্ট্রেলিয়ার দিগন্তবিস্তৃত খোলা স্থানে যেতে পারেন। যদি শেষ পর্যন্ত ধূমকেতুটি আপনার নজরে পড়ে, তাহলে খালি চোখেই দেখতে পারবেন।
নিকোল লুইসের পরামর্শ, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে এটি দেখার সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে টাইমসঅ্যান্ডডেট.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
ইরানের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অন্তত ছয়টি ভারতীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একই পদক্ষেপের আওতায় বিশ্বজুড়ে মোট ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের পেট্রোলিয়াম পণ্য কেনাবেচা ও বিপণনের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনে’ ইচ্ছাকৃতভাবে অংশ নিয়েছে। ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিষয়ক নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছে।
নিষেধাজ্ঞার শিকার কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের কিছু বড় পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস, গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস, জুপিটার ডাই কেম, রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি, পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম ও কাঞ্চন পলিমার্স।
নিষিদ্ধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের কিছু বড় পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল, বিশেষ করে মিথানল কিনেছে।
জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধেও এ সময়ে টলুইনসহ ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পণ্য আমদানির অভিযোগ রয়েছে।
রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি মিথানল ও টলুইনসহ ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কেনার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ কিংবা যেসব সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা জব্দ করা হবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নিষিদ্ধ হবে। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যেকোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান—যেগুলোর অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা তাদের হাতে, তা–ও একইভাবে নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে।পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য, বিশেষ করে মিথানল আমদানি করেছে বলে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া কাঞ্চন পলিমার্স নামে একটি কোম্পানি ১৩ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পলিথিন পণ্য কিনেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিষেধাজ্ঞার ফলে এখন এসব প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ কিংবা যেসব সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা জব্দ করা হবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নিষিদ্ধ হবে। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যেকোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা তাদের হাতে, তা–ও একইভাবে নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে।
এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নীতির অংশ। এর মাধ্যমে ইরানের কথিত ‘ছায়া নৌবহর’ ও মধ্যস্বত্বভোগী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যারা বিশ্বব্যাপী ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য পরিবহনে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৫ ঘণ্টা আগেমার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, এসব পণ্য রপ্তানি থেকে ইরান যে রাজস্ব পায়, তা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ছড়ানো ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তায় ব্যয় করা হয়।
ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আগের নিষেধাজ্ঞা চালু হওয়ার পর ভারত ইরানি তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্পেশালি ডেজিগনেটেড ন্যাশনালস (এসডিএন) তালিকা থেকে নিজেদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, এ নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য শাস্তি দেওয়া নয়; বরং আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।
ভারতের পাশাপাশি তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এ বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ইরানের তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল–বাণিজ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
উল্লেখ্য, ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বাইরেও দেশটি থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল তিনি এ ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে এবার ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেন ট্রাম্প২২ ঘণ্টা আগেআগামীকাল ১ আগস্ট থেকে ভারতের পণ্যে নতুন এ পাল্টা শুল্কনীতি কার্যকর হবে। পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার জন্য ভারতকে ‘দণ্ড’ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে কী ধরনের দণ্ড দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।