নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের দাতমণ্ডল গ্রাম থেকে ৭ জানুয়ারি রাতে সেচ প্রকল্পে ব্যবহৃত চারটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়। বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের জানানো হলে তারা নিজ খরচে ট্রান্সফরমরার স্থাপনের পরামর্শ দেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কৃষকরা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এ উপজেলা থেকে ৩১টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। তারা বলছেন, সেচ দিতে না পারলে বোরো চাষ ব্যাহত হবে। আতঙ্কে রাত জাগতে হচ্ছে তাদের। 

ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর ভাষ্য, শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই উপজেলায় চুরি বেড়েছে। গত শুষ্ক মৌসুমের মতো শীতেও নিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে। রাতে যখনই যে এলাকায় লোডশেডিং হয়, তখনই কোনো না কোনো এলাকা থেকে ট্রান্সফরমার চুরি হয়। তাদের ধারণা, এসব চুরির সঙ্গে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের প্রশিক্ষিত ইলেকট্রিশিয়ানরা জড়িত থাকতে পারেন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একাধিক কর্মকর্তা। তাদের নিয়োগ করা কোনো ইলেকট্রিশিয়ান এসবে জড়িত নন বলেও দাবি করেন। তাদের ভাষ্য, চুরি ঠেকাতে বারবার উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বাদী হয়ে মামলাও করেছে। তারপরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এক বছরে প্রায় ১০০ ট্রান্সফরমার চুরি হলেও এসব ঘটনায় কেউই আটক হয়নি। 

দাতমণ্ডল গ্রামের কৃষক উবায়দুল হকের ভাষ্য, চুরির ঘটনা জানানোর পর পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা নিজ খরচে ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে বলেন। এদিকে বোরো ক্ষেতে সেচ দেওয়া মৌসুম চলে যাচ্ছে। এ কারণে কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। 

একই গ্রামের কৃষক রহমত আলী সোমবার সমকালকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমাদের সেচ কাজ বন্ধ। জমিতে হালচাষ দিয়া রাখছি; পানির কারণে বোরো আবাদ করতে পারতেছি না। ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় জমি নিয়া বেকায়দায় পড়ছি।’

নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের শেষ দুই মাসে উপজেলা থেকে ৩১টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের ৯টি, পূর্বভাগ ইউনিয়নের ৩টি, বুড়িশ্বর ইউনিয়নের ৬টি, গোকর্ণ ইউনিয়নের ৮টি, কুন্ডা ইউনিয়নের ২টি ও চাপরতলার ৫টি। এ ছাড়াও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ৮টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় এক বছরে প্রায় ৯০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। 

এদিকে ৯ জানুয়ারি বুড়িশ্বর ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের দুইজন লাইনম্যানকে বেঁধে তিনটি সেচ প্রকল্পের ট্রান্সফরমার নিয়ে যায় চোরেরা। এতে ওই এলাকার কয়েকশ বিঘা জমির আবাদ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনটি ট্রান্সফরমার নতুনভাবে সংযোগ দিতে লাগছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। ওই এলাকার কৃষক গৌর পাল, গিয়াস উদ্দিন, মিজান শাহ, আলাউদ্দিন ও আলাল শাহ বলেন, সঠিক সময়ে পানি না পেলে তারা বোরো আবাদ করতে পারবেন না। জমিতে ফসল না ফলালে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে সবাইকে। 

উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো.

মজিবুর রহমান সমকালকে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়মিত সেচ প্রকল্পের ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। এতে করে কৃষক সঠিক সময়ে জমিতে পানি দিতে পারছেন না। ফলে আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টিকে খুবই দুঃখজনক হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। 

নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, প্রায় একশর কাছাকাছি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। এতে স্থানীয় কিছু অসাধু চক্র জড়িত। তাদের কর্মকর্তারা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে কেউই আটক হয়নি। চুরি রোধে পাহারা দেওয়াসহ এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। 

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলমের দাবি, ‘আমাদের কাছে পল্লী বিদ্যুৎ বা গ্রাহক কেউই ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে অভিযোগ করেননি।’ কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ন স রনগর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সংগঠনটির দেওয়া বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে ডুজার সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি ও সাধারণ সম্পাদক মাহাদী হাসান ছাত্রদলের এমন বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সরিয়ে নেওয়া, বিবৃতিতে সংবাদকর্মীদের নিয়ে আপত্তিকর শব্দচয়নের মতো আচরণকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে দাবি করেছে ডুজা।

আরো পড়ুন:

ঢাবিতে পাণ্ডুলিপিবিষয়ক কর্মশালা শুরু

ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে আইডিইএ পরিচালকের সাক্ষাৎ

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের কর্মসূচি নিয়ে ‌‘আওয়ামী এমপিকে পুনর্বাসন/ভাগ বাটোয়ারা দ্বন্দ্বে জাবিতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিত’ শিরোনামে জাগোনিউজ২৪.কম-এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদকে ঘিরে একটি বিবৃতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। যেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ কিছু শব্দচয়ন করে সংগঠনটি।

বিবৃতিতে ডুজা নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা মেনে নিউজ করার পরেও দু’একটি গণমাধ্যমের উপর ছাত্রদলের প্রভাব খাটিয়ে সংবাদ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। গত ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিবৃতিতে আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। কেউ নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত মনে করলে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিকার চাইবেন। কিন্তু ছাত্রদলের এ ধরনের আচরণ আমাদের সে আকাঙ্ক্ষাকে আশাহত করেছে।

ডুজা নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাগোনিউজ২৪.কম-এর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সৈকত ইসলামকে ‘সময়ের আলো’র স্টাফ রিপোর্টার সাব্বির আহমেদ নামে একজন ফোন দিয়ে চাপ প্রয়োগেরও নিন্দা জানাই।

নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্তৃক সাব্বির আহমেদের অপেশাদার ও অনৈতিক আচরণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাঙ্গীরনগরে পিটুনিতে নিহত সেই ছাত্রলীগ নেতাকেও ‘সাময়িক বহিষ্কার’ করেছে প্রশাসন
  • সিলেটে টিলা কাটার অভিযোগে বিএনপি নেতা, ইউপি সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • জুলাই হামলাকারীদের শাস্তি চেয়ে জাবি ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’
  • ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা
  • কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর আবার চালুর উদ্যোগ
  • সোনারগাঁয়ে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির সময় দুই চোর গ্রেপ্তার
  • আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর
  • বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের যন্ত্রাংশ চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু