৯ বছর আগে বেহাত হওয়া প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব ফিরে পেল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বৃহস্পতিবার মেয়রকে চেয়ারম্যান করে ৯ সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশ অনুযায়ী, বোর্ড অব ট্রাস্টিজে চেয়ারম্যান হবেন মেয়র। সদস্য হিসেবে থাকবেন সদ্য সাবেক মেয়র, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব, সিটি করপোরেশনের শিক্ষাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি, হিসাব ও নিরীক্ষাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং দুই প্যানেল মেয়র। 

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১ এর উপসচিব মোছা.

রোখসানা বেগম স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। 
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখলে নিয়েছিলেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পরে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানও হন তিনি। বোর্ডের অন্যতম দু’জন সদস্য হচ্ছেন তাঁর মা হাসিনা মহিউদ্দিন ও ছোট ভাই বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন। অন্য সদস্যরাও তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠ। 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি।’ 

এদিকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিতে তিনজন করে ৯ জনের নামের তালিকা গত সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গত বছরের ৬ ডিসেম্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। পদত্যাগ করেছিলেন উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষও। এখনও কাউকে নতুন করে এসব পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে ৪০ কাঠা জমিতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে চসিক। ব্যয় হয় ৪৭ কোটি টাকা। তখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। পদাধিকার বলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১০ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন এম মনজুর আলম। পরবর্তী সময় তিনিও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাবেক মেয়র হিসেবে বোর্ডের সদস্য ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃত্ব নিয়ে কোনো আপত্তি ছিল না তাঁর।

২০১৫ সালে আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃত্ব নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে আইনি লড়াই শুরু হয়। তখন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী, আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। এক পর্যায়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব হারায় চসিক। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আইনগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃত্ব নিতে ব্যর্থ হন মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তাঁর পরিবার। তাঁর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রী হওয়ার পর নিজেই ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখলে নেন। অন্যদিকে নওফেল দাবি করে এসেছেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নিজ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখানে সিটি করপোরেশনের কোনো আর্থিক অনুদান নেই।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের অনেক নেতা আত্মগোপনে গেছেন। এর মধ্যে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও রয়েছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র কর ত ত ব সদস য আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়। 

সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।

তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।

সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”

তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”

তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ