ভারতীয় সিনেমার অপর্ণা সেনকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার নানা তকমাই রয়েছে। ওপার বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীরা তাকে ‘রিনাদি’ বলেই ডাকেন। চল্লিশের দশকে জন্ম নেওয়া অপর্ণা সেন ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। বয়স যখন দশের ঘরে তখন অভিনয়ে হাতেখড়ি।

বড় হয়ে অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান অপর্ণা। তবে এই পরিচয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি। বরং পরিচালক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। নির্মাতা অপর্ণা তার প্রাপ্তির ঝুলিতে অর্জন হিসেবে জমা করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

অপর্ণা সেনের জীবনে বারবার প্রেম এসেছে। প্রেম রঙিন হয়ে এলেও শেষটা বিষাদের। সত্তর দশকের গোড়ায় সঞ্জয় সেনকে বিয়ে করেন অপর্ণা। এ সংসারে একটি কন্যা সন্তানের (কমলিনী) মা হন। কিন্তু এ বিয়ে টিকেনি। পরে মুকুল শর্মার সঙ্গে ঘর বাঁধেন অপর্ণা। সেখানেও একটি কন্যা সন্তানের (কঙ্কনা সেন শর্মা) মা হন। তারপর এ সংসারও ভেঙে যায়। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে অর্থাৎ ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই লেখক কল্যাণ রায়কে বিয়ে করেন অপর্ণা। এরপর কেটে গেছে প্রায় ৩২ বছর। তিন দশক পরও এক ছাদের নিচে বসে ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দেন তারা।

বয়স্ক দম্পতির গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘এই রাত তোমার আমার’ সিনেমার গল্প। এতে জয়িতা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এর কারিগর অভিনেতা-নির্মাতা পরমব্রত চ্যাটার্জি। সিনেমাটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নিজের সংসার জীবনের নানা তত্ত্ব, অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন এই অভিনেত্রী। অপর্ণা বিশ্বাস করেন— সম্পর্কের ভিত বন্ধুত্বে হওয়া প্রয়োজন।

ব্যাখ্যা করে অপর্ণা সেন বলেন, “এটা আমি আমার জীবন দিয়ে বিশ্বাস করি। আমার মেয়েরা দূরে থাকে, তাদের সঙ্গে যদি গভীর বন্ধুত্ব না থাকে, তাহলে ওদের জন‌্য এটা জাস্ট একটা দায়িত্ব পালন হয়ে থেকে যেত। মায়ের সঙ্গে গল্প করার ইচ্ছাটা থাকত না। আর আমি জেনারেশন গ‌্যাপ বুঝতে পারি না। আমার দিদিমা-ঠাকুরমা বা বাবা-মায়ের সঙ্গেও সেই গ‌্যাপ হয়নি। আমার মেয়ে, নাতি-নাতনিদের সঙ্গেও গ‌্যাপ নেই; হয়তো আমি মানুষটা আধুনিক।”

বিবাহিত জীবনেও বন্ধুত্ব না থাকলে সেটা ঠিকভাবে টিকিয়ে রাখা মুশকিল। স্বামী কল‌্যাণ রায়ের সঙ্গে অপর্ণার সেই বন্ধুত্ব কতটা গভীর? এ প্রশ্নের জবাবটা অপর্ণা কেবল ‘বন্ধুত্বের’ ফ্রেমে বন্দি না করে মূল্যবোধে নিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। অপর্ণা সেন বলেন, “বন্ধুত্ব তো আছেই; আমাদের মানসিকতা, আইডিওলজি বা মূল‌্যবোধ একরকমের। তা ছাড়াও আমাদের রুচির মিল আছে। আমি জানি, পছন্দ করে কিছু কিনলে কল‌্যাণের সেটা পছন্দ হবে। ধরেন, একটা দামি পেইন্টিং কিনতে চাই, দুজনের মতে মিল না হলে তো কিনতে পারব না। কল‌্যাণ একবার আমাকে বলেছিল, ‘থ‌্যাংকস গড আমাদের পছন্দটা একরকমের। বড়বড় গোলাপফুল দেওয়া পর্দা, চাদর পাতলে, আমি তোমার সঙ্গে থাকতাম না।’ ম‌্যারেজ ইজ দ‌্য মোস্ট কমপ্লেক্স অ‌্যান্ড ডিফিকাল্ট থিং ফর পিপল টু মেক ইট ওয়ার্ক।”

দাম্পত্য জীবনে নারী-পুরুষের ব্যক্তিগত ‘বিশ্বাস-অবিশ্বাস’ ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে। তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উদাহরণ টেনে আনেন উনআশির অপর্ণা। তার মতে, “দুজন মানুষের ব‌্যাকগ্রাউন্ড মিল থাকলে ভালো। আমি কিন্তু গরিব বা বড়লোক অর্থাৎ অর্থনৈতিক ব‌্যাকগ্রাউন্ডের কথা বলছি না। আমি বলছি, রুচি বা মূল‌্যবোধ এক হলে সহজ হয় মানিয়ে নেওয়াটা। ধরেন, আমি কাউকে খুব ভালোবাসি, বিয়ে করে দেখি সেই বাড়িতে পূজার চল, ছোঁয়াছুঁয়ির ব‌্যাপার আছে, আমাকেও পূজা করতে হচ্ছে— আমি তো মানিয়ে নিতে পারব না। সেটাই আর কী!”

দাম্পত্য জীবনের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের পুরোনো হলে পরস্পরের ত্রুটি না ধরার একটা প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। এটা কি কেবলই অভ্যাসের ফল, নাকি মেনে নেওয়া বা সমঝোতার ব্যাপার? সমঝোতা ছাড়া একটা যৌথ জীবন পার করা কঠিন, তার সঙ্গে সম্মতি জানিয়ে অপর্ণা সেন বলেন, “কিছুটা কম্প্রোমাইজ তো আমাদের মেনেই নিতে হয়, তা না হলে থাকতে পারব না। এবার মানুষ যদি খুব বদলাতে থাকে তাহলে হয়তো জাজমেন্টাল হতেই হয়। চোখের সামনে যদি আমূল বদলে যায় তখন ভাবতেই হবে। এখন আমি যদি দেখি কল‌্যাণ হঠাৎ করে ‘রাইটিস্ট’ হয়ে গেল তখন তো আমি জাজমেন্টাল হবো, তাই না!”

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন অপর ণ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘অসাবধানতাবশত ভুল শব্দ চয়ন’, জামায়াত আমিরের দুঃখ প্রকাশ

নারী বিষয়ক কমিশনের রি‌পোর্ট‌কে শরীয়তবিরোধী ও অগ্রহণযোগ্য রিপোর্ট উল্লেখ ক‌রে এর ওপর বুধবার প্রদত্ত বক্তব্যের এক পর্যায়ে একটি শব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ভুল শব্দ চয়ন হয়েছে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন বাংলা‌দেশ জামায়া‌তে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

বৃহস্প‌তিবার (১ মে) নি‌জের ও দ‌লের ফেসবুক পে‌জে এ কথা ব‌লেন তিনি।

এতে তি‌নি জানান, অসাবধানতাবশত ভুল শব্দ চয়ন হয়েছে, যা একান্তই অনিচ্ছাকৃত। এজন‌্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন তি‌নি।

আরো পড়ুন:

প্রতিহিংসার রাজনীতিতে শান্তি আসতে পারে না: জামায়াত আমির

দেশকে যে ভালোবাসে, সে দেশ ছেড়ে পালায় না: শফিকুর রহমান

জামায়াত আমির ব‌লেন, “রেইপ হচ্ছে বিবাহবহির্ভূত এক ধরনের জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক, যা সাধারণত বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে ঘটে, যেখানে অপরাধী ব্যক্তিটি অসৎ ও দোষী, কিন্তু ভিকটিম সম্পূর্ণ নিরপরাধ।”

“আমি এটাও মনে করি যে, বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে ‘রেইপ' এর মতো জঘন্য শব্দকে প্রবেশ করানো পবিত্র এই সম্পর্কের জন্য অবমাননাকর এবং দীর্ঘ মেয়াদে দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার ক্ষেত্রে কারো দ্বারা সীমালঙ্ঘন বা জুলুম সংঘটিত হলে তা স্বাভাবিক বিচারের আওতায় অবশ্যই আনতে হবে। কিন্তু বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যকার কোনো অনাকাঙ্খিত বিষয়কে রেইপ বা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সাথে তুলনা করা অবাঞ্ছণীয় এবং দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যাজনক।”

“আমার এই অনিচ্ছাকৃত শব্দ চয়নের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায় এবং জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান সর্বদা সেই মূলনীতির ওপরই প্রতিষ্ঠিত,” ব‌লেও দা‌বি ক‌রেন তি‌নি।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ