দুই সংসারে ভাঙন, কল্যাণের বাহুডোরে ৩২ বছর, দাম্পত্য রসায়নে সরল অপ
Published: 18th, January 2025 GMT
ভারতীয় সিনেমার অপর্ণা সেনকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার নানা তকমাই রয়েছে। ওপার বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীরা তাকে ‘রিনাদি’ বলেই ডাকেন। চল্লিশের দশকে জন্ম নেওয়া অপর্ণা সেন ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। বয়স যখন দশের ঘরে তখন অভিনয়ে হাতেখড়ি।
বড় হয়ে অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান অপর্ণা। তবে এই পরিচয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি। বরং পরিচালক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। নির্মাতা অপর্ণা তার প্রাপ্তির ঝুলিতে অর্জন হিসেবে জমা করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
অপর্ণা সেনের জীবনে বারবার প্রেম এসেছে। প্রেম রঙিন হয়ে এলেও শেষটা বিষাদের। সত্তর দশকের গোড়ায় সঞ্জয় সেনকে বিয়ে করেন অপর্ণা। এ সংসারে একটি কন্যা সন্তানের (কমলিনী) মা হন। কিন্তু এ বিয়ে টিকেনি। পরে মুকুল শর্মার সঙ্গে ঘর বাঁধেন অপর্ণা। সেখানেও একটি কন্যা সন্তানের (কঙ্কনা সেন শর্মা) মা হন। তারপর এ সংসারও ভেঙে যায়। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে অর্থাৎ ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই লেখক কল্যাণ রায়কে বিয়ে করেন অপর্ণা। এরপর কেটে গেছে প্রায় ৩২ বছর। তিন দশক পরও এক ছাদের নিচে বসে ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দেন তারা।
বয়স্ক দম্পতির গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘এই রাত তোমার আমার’ সিনেমার গল্প। এতে জয়িতা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এর কারিগর অভিনেতা-নির্মাতা পরমব্রত চ্যাটার্জি। সিনেমাটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নিজের সংসার জীবনের নানা তত্ত্ব, অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন এই অভিনেত্রী। অপর্ণা বিশ্বাস করেন— সম্পর্কের ভিত বন্ধুত্বে হওয়া প্রয়োজন।
ব্যাখ্যা করে অপর্ণা সেন বলেন, “এটা আমি আমার জীবন দিয়ে বিশ্বাস করি। আমার মেয়েরা দূরে থাকে, তাদের সঙ্গে যদি গভীর বন্ধুত্ব না থাকে, তাহলে ওদের জন্য এটা জাস্ট একটা দায়িত্ব পালন হয়ে থেকে যেত। মায়ের সঙ্গে গল্প করার ইচ্ছাটা থাকত না। আর আমি জেনারেশন গ্যাপ বুঝতে পারি না। আমার দিদিমা-ঠাকুরমা বা বাবা-মায়ের সঙ্গেও সেই গ্যাপ হয়নি। আমার মেয়ে, নাতি-নাতনিদের সঙ্গেও গ্যাপ নেই; হয়তো আমি মানুষটা আধুনিক।”
বিবাহিত জীবনেও বন্ধুত্ব না থাকলে সেটা ঠিকভাবে টিকিয়ে রাখা মুশকিল। স্বামী কল্যাণ রায়ের সঙ্গে অপর্ণার সেই বন্ধুত্ব কতটা গভীর? এ প্রশ্নের জবাবটা অপর্ণা কেবল ‘বন্ধুত্বের’ ফ্রেমে বন্দি না করে মূল্যবোধে নিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। অপর্ণা সেন বলেন, “বন্ধুত্ব তো আছেই; আমাদের মানসিকতা, আইডিওলজি বা মূল্যবোধ একরকমের। তা ছাড়াও আমাদের রুচির মিল আছে। আমি জানি, পছন্দ করে কিছু কিনলে কল্যাণের সেটা পছন্দ হবে। ধরেন, একটা দামি পেইন্টিং কিনতে চাই, দুজনের মতে মিল না হলে তো কিনতে পারব না। কল্যাণ একবার আমাকে বলেছিল, ‘থ্যাংকস গড আমাদের পছন্দটা একরকমের। বড়বড় গোলাপফুল দেওয়া পর্দা, চাদর পাতলে, আমি তোমার সঙ্গে থাকতাম না।’ ম্যারেজ ইজ দ্য মোস্ট কমপ্লেক্স অ্যান্ড ডিফিকাল্ট থিং ফর পিপল টু মেক ইট ওয়ার্ক।”
দাম্পত্য জীবনে নারী-পুরুষের ব্যক্তিগত ‘বিশ্বাস-অবিশ্বাস’ ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে। তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উদাহরণ টেনে আনেন উনআশির অপর্ণা। তার মতে, “দুজন মানুষের ব্যাকগ্রাউন্ড মিল থাকলে ভালো। আমি কিন্তু গরিব বা বড়লোক অর্থাৎ অর্থনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কথা বলছি না। আমি বলছি, রুচি বা মূল্যবোধ এক হলে সহজ হয় মানিয়ে নেওয়াটা। ধরেন, আমি কাউকে খুব ভালোবাসি, বিয়ে করে দেখি সেই বাড়িতে পূজার চল, ছোঁয়াছুঁয়ির ব্যাপার আছে, আমাকেও পূজা করতে হচ্ছে— আমি তো মানিয়ে নিতে পারব না। সেটাই আর কী!”
দাম্পত্য জীবনের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের পুরোনো হলে পরস্পরের ত্রুটি না ধরার একটা প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। এটা কি কেবলই অভ্যাসের ফল, নাকি মেনে নেওয়া বা সমঝোতার ব্যাপার? সমঝোতা ছাড়া একটা যৌথ জীবন পার করা কঠিন, তার সঙ্গে সম্মতি জানিয়ে অপর্ণা সেন বলেন, “কিছুটা কম্প্রোমাইজ তো আমাদের মেনেই নিতে হয়, তা না হলে থাকতে পারব না। এবার মানুষ যদি খুব বদলাতে থাকে তাহলে হয়তো জাজমেন্টাল হতেই হয়। চোখের সামনে যদি আমূল বদলে যায় তখন ভাবতেই হবে। এখন আমি যদি দেখি কল্যাণ হঠাৎ করে ‘রাইটিস্ট’ হয়ে গেল তখন তো আমি জাজমেন্টাল হবো, তাই না!”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন অপর ণ কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।