ট্রাম্পের শুল্কের আশঙ্কায় মেক্সিকোতে কারখানা খুলছেন চীনা ব্যবসায়ীরা
Published: 18th, January 2025 GMT
চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উচ্চহারে কর আরোপ করতে পারেন। সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মেক্সিকোতে কারখানা খুলছেন চীনা ব্যবসায়ীরা।
গত বছরের নভেম্বরে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বাণিজ্য নীতির অংশ হিসেবে চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রথম দফা ক্ষমতায় আসার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর ৭ দশমিক ৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিল। এবার তিনি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার সিএনএন জানিয়েছে, টেক্সাস সীমান্ত থেকে প্রায় এক ঘণ্টা পথের দূরত্বে উত্তর মেক্সিকোতে বড় আকারে বিভিন্ন শিল্পের কারখানা স্থাপন করেছে চীনা ব্যবসায়ীরা। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো বাণিজ্য চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেতে চীনা কোম্পানিগুলো এসব উৎপাদন স্থানান্তর করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম প্রশাসনে মেক্সিকো এবং কানাডার সাথে এই চুক্তিটি করেছিলেন। কিন্তু এবার তিনি মেক্সিকো ও অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক আরোপের এবং বকেয়া আদায়ের জন্য একটি ‘বহিরাগত রাজস্ব পরিষেবা’-এর হুমকি দিচ্ছেন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় কার্যকাল শুরু হতে আর কয়েকদিন বাকি। এই কোম্পানিগুলো এবং তাদের মেক্সিকান আয়োজকরা এখন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এলে কী করবেন তার বিকল্প পরিকল্পনা করছে।
মেক্সিকোর মন্টেরিতে আসবাবপত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কুকা হোম নর্থ আমেরিকার সভাপতি ম্যাট হ্যারিসন আশঙ্কা করছেন যে, ট্রাম্প অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে মেক্সিকোতে তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে পারে।
তিনি বলেন, “সহজভাবে বলতে গেলে, মেক্সিকোর উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ আমাকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে দেবে। আমরা অপেক্ষা করছি ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কী হয় তা দেখার জন্য - আমরা উন্নতি অব্যাহত রাখতে পারি কিনা।”
কিন্তু সিজার সান্তোস, যিনি তার জমিতে প্রচুর চীনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন, তিনি এখনো ভালো ব্যবসার আশা করছেন।
তিনি সিএনএনকে বলেন, “এমনকি মেক্সিকান পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরেও, অনেক কোম্পানি বিশ্বাস করে যে এটি এখনো চীনে উৎপাদনের চেয়ে একটি ভাল বিকল্প।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ল ক আর প আর প ক ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।