প্রকল্পের সাড়ে ৪ বছরেও কাটেনি জনদুর্ভোগ
Published: 18th, January 2025 GMT
কুলাউড়ায় মনু নদের ওপর নির্মিত হয়েছে রাজাপুর সেতু। কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কের এই সেতুটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে। এখনও সেতুর দুই পাশে করা হয়নি সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ।
সংযোগ সড়ক না থাকায় এ সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু করা যায়নি। স্থানীয় লোকজন নিজ উদ্যোগে সেতুর দুই পাশে বালু দিয়ে ভরাট করে কোনো রকমে ব্যবহার করছেন। এতে করে কোটি টাকার এই প্রকল্প সঠিকভাবে কাজে আসছে না। বরং বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ। রাজাপুর সেতু ও এর সংযোগ সড়ক নির্মাণের এ প্রকল্পের সময়কাল প্রায় সাড়ে ৪ বছর। এখন পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশের।
এদিকে সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য বালু পরিবহনে বাধার মুখে পড়ার কথা জানিয়েছেন বর্তমান বালু ইজারাদার। তিনি জানান, ভূমি অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ায় শরীফপুর ইউনিয়নের চাতলাপুর এলাকায় স্থানীয়রা কাজে বাধা দেন। এতে সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না।
গত ৩০ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের কাজে ধীরগতির অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের লোকজন। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর মৌলভীবাজার ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে ২০১৮ সালে রাজাপুর সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের অধীনে সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে ২৩২ দশমিক ৯৪ মিটার পিসি গার্ডার সেতু, সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও এ কাজে জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ জুলাই। ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ হয়। ২০২০ সালে কার্যাদেশ পাওয়া প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর দুই পাশে সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স মো.
২০২২ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ভূমি অধিগ্রহণে নানা জটিলতা থাকায় পর দুই দফায় কাজের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বর্তমানে রাজাপুর-চাতলাপুর সংযোগ সড়কের কাজে শরীফপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর মৌজায় শতাধিক লোক এখনও জমি অধিগ্রহণের টাকা পাননি। যার জন্য শরীফপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লাল মিয়ার নেতৃত্বে জমির মালিকরা টাকা না পাওয়ায় কাজে বাধা দিচ্ছেন।
অন্যদিকে সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য বালু পরিবহনে বাধার অভিযোগ এনে ৩ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন বালুর সাবেক ইজারাদার দীপক দে। এদিকে জেলা প্রশাসক বরাবরে পৃথক আরেকটি অভিযোগ দেন সংযোগ সড়কের কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবালও।
পৃথক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ১৪৩০ বাংলা সনে কুলাউড়া মনু নদ থেকে বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল ইজারাপ্রাপ্ত হন দীপক দে। সরকারি নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঠিকাদার মেসার্স মো. জামিল ইকবালের কাছে মনু নদ থেকে উত্তোলনকৃত সম্পূর্ণ বালু বিক্রি করেন তিনি। এটিসহ আরও কয়েকটি কাজের জন্য কুলাউড়া উপজেলার কটারকোনা মৌজার সালন গ্রাম এবং কাউকাপন মৌজার হরিরচক ও সাধনপুর গ্রামে প্রায় দেড় কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হয়। পরে বালু পরিবহনে বাঁধের সড়ক ব্যবহারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন পেতে দেরি হয় এবং প্রকল্প এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় যথাসময়ে কাজ শুরু করা যায়নি।
বর্তমানে সংযোগ সড়কের অধিকাংশ জায়গায় অধিগ্রহণ কাজ শেষ হওয়ায় এবং অনুমোদন পাওয়ায় প্রকল্প এলাকায় বালু সরবরাহ শুরু করতে গেলে নতুন ইজারাদার উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ খালেদ আহমদ, তাঁর সহযোগী ইউপি সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকনসহ স্থানীয়দের বাধা ও হমকি দেন। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল সরকারি প্রকল্পের কাজে বালু ব্যবহার করতে পারছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা আতাউর রহমান বাবলু ও গিলমান আলী জানান, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে রাজাপুর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কের কাজ হয়নি। সেখানে কিছু বালু ভরাট করলেও বালু উত্তোলনে সৃষ্ট জটিলতার কারণে সংযোগ সড়কের কাজে দেরি হচ্ছে। গ্রামবাসীরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বালু ইজারাদারসহ কর্তৃপক্ষকে কাজ শেষ করার তাগিদ দিলে তারা শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। বর্ষা মৌসুম এলে স্থানীয়রা চরম দুর্ভোগে পড়বে।
শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লাল মিয়া জানান, ইউনিয়নের মনোহরপুর মৌজায় শতাধিক মানুষ এখনও জমি অধিগ্রহণের টাকা পায়নি। যাদের জমি সংযোগ সড়কে পড়েছে, তারাই কাজে বাধা দিচ্ছেন– এটা স্বাভাবিক বিষয়। তিনি কোনো কাজে বাধা দেননি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বর্তমান ইজারাদার খালেদ আহমদ জানান, জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বিধি অনুযায়ী বর্তমান সালে তিনি বালু উত্তোলনের ইজারাপ্রাপ্ত। মনু নদের নির্ধারিত ঘাট থেকে বালু উত্তোলন করে যেখানে বালু রাখা হবে, সেই স্থানে আগের ইজারাদার দীপক দে বেআইনিভাবে বালু স্তূপ করে রেখে বাধা সৃষ্টি করছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জানানো হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবালের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাইফুল আহমদ জানান, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও বালু পরিবহনে বাধার কারণে কাজ বন্ধ আছে। সওজ অধিদপ্তরের কুলাউড়া সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আক্কাছ আলী জানান, সংযোগ সড়কের কাজের জন্য পুরোপুরিভাবে জমি বুঝে না পাওয়ার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি।
সওজ বিভাগ মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়ছার হামিদ জানান, রাজাপুর সেতুর কাজ প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে শেষ হয়েছে। আর সংযোগ সড়কে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন।
ইউএনও মো. মহিউদ্দিন জানান, সংযোগ সড়কের কাজে স্থানীয় লোকদের বাধার খবর পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কুলাউড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন ও সওজ কর্মকর্তা চাতলাপুর এলাকায় গিয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স য গ সড়ক ন র ম ণ স য গ সড়ক র ক জ র স য গ সড়ক জ ম ল ইকব ল প রকল প র ব যবহ র র জন য এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।