শীতার্তদের মাঝে মানবিক পাঠশালার উষ্ণতা
Published: 18th, January 2025 GMT
শীতে বান্দরবানের সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মাঝে যতটা আনন্দ বয়ে আনে, ঠিক এর বিপরীতে পাহাড়ে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত শীতার্তদের জন্য অনেকটা দুর্ভোগ হয়ে নেমে আসে। পাহাড়ি জনপদে শীতের প্রকোপ অনেকটাই বেশি। সুবিধাবঞ্চিত অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য শীত কখনও শহুরে জনজীবনের মতো রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে না। ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের থাবায় নিদারুণ কষ্ট ও দুঃসহ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অসহায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা। কেউ অট্টালিকায় আরামের ঘুমে বিভোর, কেউ আবার রাস্তার পাশে, রেলস্টেশনে বা বাসস্ট্যান্ডে কোনো রকমে একটা গরম কাপড় নিয়ে রাত পার করছে, কেউ বা আবার গরম পোশাক না পেয়ে সারারাত আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এটিই বাস্তব চিত্র! এসব দেখে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ‘মানবিক পাঠশালা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন’-এর তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা।
বান্দরবান আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শীতে সুবিধাবঞ্চিত প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের সকালের ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে শীতের পোশাক ছাড়া ক্লাসে আসা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। এ পরিস্থিতিতে শীতার্তদের মাঝে উষ্ণতার পরশ নিয়ে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মানবিক পাঠশালা ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। যারা দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় শতাধিক মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন।’
এ বিষয়ে মানবিক পাঠশালা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন বান্দরবানের ডেপুটি টিম লিডার ছমিরা আক্তার শিরিন বলেন, ‘বান্দরবান সদর, রুমা উপজেলা এবং শহরের অলিগলিতে ভবঘুরে, ছিন্নমূল মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।’
শীতবস্ত্র পেয়ে উচ্ছ্বসিত আইডিয়াল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রহিম বলে, ‘কম্বল আর চাদর উপহার পেয়ে আমরা অনেক খুশি। যারা আমাদের উপহার দিয়েছেন ওনাদের ধন্যবাদ।’
বান্দরবানের টিম লিডার ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘বান্দরবানের শীতার্ত মানুষের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে মানবিক পাঠশালা সবসময় কাজ করে যাবে।’
মানবিক পাঠশালা ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘বান্দরবানের পাশাপাশি চট্টগ্রামেও সুবিধাবঞ্চিত শীতার্ত মানুষের মাঝে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে মানবিক পাঠশালা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন। আগামীতে সারাদেশে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব।’
২০১৯ সালের একদল স্বপ্নবাজ তারুণ্যের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় মানবিক পাঠশালা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নিবন্ধিত যুব সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সংগঠনটি। বর্তমানে কক্সবাজার, বান্দরবান এবং চট্টগ্রামের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন সংগঠনটির সদস্যরা। u
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন র
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।