বিয়ের অনুমতি না দেওয়ায় অসুস্থ স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা
Published: 19th, January 2025 GMT
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার রাথুরা গ্রামে গলা কেটে এক নারীকে হত্যার ঘটনায় তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অসুস্থ স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দেওয়ায় তাঁকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার হওয়া সেকেন্দার আলী (৬৬)। গতকাল শনিবার মানিকগঞ্জ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ইয়াসমিন খাতুন।
পুলিশ সুপার জানান, রাথুরা গ্রামের সেকেন্দার আলী ও লায়লা আরজু দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে বসবাস করেন। ১৫ জানুয়ারি বাড়ি থেকে লায়লার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন তাঁর ভাই ময়নুল ইসলাম মুকুল ঘিওর থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার পর পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, এ ঘটনায় সেকেন্দার আলী যুক্ত। পরে তাঁকে শুক্রবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তিনি স্ত্রীকে হত্যার কারণ পুলিশকে জানান।
সেকেন্দার আলী পুলিশকে বলেন, তাঁর স্ত্রী ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড ও ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাঁর অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। ২০২২ সাল থেকে তিনি অসুস্থ। এ কারণে তারা আলাদা কক্ষে থাকতেন। একপর্যায়ে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করবেন বলে জানান। স্ত্রী অনুমতি না দেওয়ায় গত ১৪ জানুয়ারি রাতে তাদের ঝগড়া হয়। পরদিন সকালেও ঝগড়ায় লিপ্ত হন তারা। একপর্যায়ে স্ত্রী লায়লা খাট থেকে নিচে পড়ে গেলে রান্না ঘর থেকে ফল কাটার ছুরি এনে তাঁর গলায় খোঁচা দেন বলে জানিয়েছেন সেকেন্দারা আলী। এ সময় স্ত্রীর গলা দিয়ে রক্ত বের হলে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে দিয়ে বাজারে চলে যান তিনি। পরে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি ফিরে চিৎকার করে বলেন, তাঁর স্ত্রীকে কে বা কারা গলা কেটে হত্যা করেছে।
পুলিশ সুপার বলেন, মামলার দু’দিনের মধ্যে হত্যার রহস্য উন্মোচনসহ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার আসামি দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত তাঁকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ স ক ন দ র আল
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।