মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী হাতে গোনা, ক্লাস নেন আয়া-নৈশপ্রহরী
Published: 20th, January 2025 GMT
উল্লাপাড়ার বড় কোয়ালিবেড় দাখিল মাদ্রাসায় এক বছরের বেশি সময় ধরে আয়া ও নৈশপ্রহরী ক্লাস নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে প্রতি ক্লাসে শিক্ষার্থী সংখ্যাও আবার হাতে গোনা। কোনো ক্লাসে তিনজন তো কোনো ক্লাসে সর্বোচ্চ দশজন। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। প্রশ্ন তোলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও।
সরেজমিনে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, ইবতেদায়ী শাখায় তৃতীয় শ্রেণিতে ৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে গণিত ক্লাস নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের আয়া রত্না খাতুন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ক্লাস নিচ্ছিলেন প্রতিষ্ঠানের ক্বারী শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাব। এই শ্রেণিতে শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল ২ জন। অন্যদিকে প্রথম শ্রেণিতে কোন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়নি।
তবে এই শ্রেণিতে মাদ্রাসার নৈশ প্রহরী নাঈম হোসেন নিয়মিত ক্লাস নেন বলে জানান সহকারী সুপার ইব্রাহিম খলিল।
তবে এই মাদ্রাসায় খাতা-কলমে ইবতেদায়ী শাখায় রয়েছে ১০০ জন শিক্ষার্থী এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে ২৭৬ জন। তবে সোমবার মাদ্রাসায় গিয়ে ইবতেদায়ী শাখায় পাওয়া যায় মোট ১০ জন শিক্ষার্থী এবং মাধ্যমিক শাখায় পাওয়া যায় ৪৩ শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইবতেদায়ী শাখার কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের তৃতীয় শ্রেণিতে ক্লাস নেন রত্না খালা (রত্না খাতুন) এবং প্রথম শ্রেণিতে ক্লাশ নেন নৈশপ্রহরী নাঈম হোসেন। তারা দুজনই দুইটি করে ক্লাস নেন। রত্না খালা নেন গণিত ও বাংলা ক্লাস এবং নাঈম হোসেন নেন ইংরেজি ও গণিত।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার আয়া রত্না খাতুন ও নৈশি প্রহরী নাঈম হোসেন জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে তারা ইবতেদায়ী শাখায় ক্লাস নিয়ে আসছেন। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রকৃত দায়িত্বও তাদেরকে পালন করতে হচ্ছে।
বড় কোয়ালিবেড় দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার ইব্রাহিম খলিল জানান, তাদের ইবতেদায়ী শাখায় মোট শিক্ষক সংখ্যা ৫ জন। সেখানে ৩ জন শিক্ষক দেড় বছর ধরে নেই। অপরদিকে মাধ্যমিক শাখায় শিক্ষক সংখ্যা ৯। এখানে শিক্ষক নেই ৩ জন। ফলে দুটি শাখা চালাতে হচ্ছে ৮ জন শিক্ষক দিয়ে। আর এই কারণে মাদ্রাসার আয়া ও নৈশ প্রহরী দিয়ে ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
ইব্রাহিম খলিল আরও জানান, তারা ইতোমধ্যে শিক্ষক চেয়ে একাধিকবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও কোন শিক্ষক দেওয়া হয়নি। তবে বছরের শুরুতে শীতের কারণে তাদের ছাত্র উপস্থিতি এমনিতেই কম থাকে।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম শামছুল হক সমকালকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট থাকতেই পারে। তবে শিক্ষক না থাকলে প্রতিষ্ঠানের আয়া বা নৈশপ্রহরী দিয়ে ক্লাস নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে এই মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় ১২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিলেও তাদের কেউ পাস করেননি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ জন শ ক ষ র থ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।