‘অযোগ্য ডাক্তারদের ঢাকায় রাখেন মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন’
Published: 20th, January 2025 GMT
ঢাকার আশেপাশে কোন ভালো ডাক্তার রাখেননি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। ভালো ভালো ডাক্তারদের দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছে অযোগ্য ডাক্তারদের ঢাকায় রেখেছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এদিন ভোরে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মনসুরাবাদ হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়।
বিকেল ৫টার দিকে রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। মোস্তফা জালালের অসুস্থতার কথা আদালতকে জানান তার আইনজীবীরা। বিচারকের কাছে চেয়ার প্রার্থনা করে সেখানে বসার অনুমতি চান। বিচারক অনুমতি দেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শুনানি চলে।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সহযোগী ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা তাদের পরামর্শে ছাত্র জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়েছেন। নিউ মার্কেট এলাকায় ১৯ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্মিলিত গুলি বর্ষণে সেদিন ব্যবসায়ী ওয়াদুদ মারা যান।”
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী মো.
তিনি আরো বলেন, “তিনি লালবাগ চকবাজার এলাকার সাবেক এমপি। এ ঘটনা সেখানকারও না। তিনি ডাক্তার ও বয়স্ক মানুষ। বর্তমানে তিনি অনেক অসুস্থ। তার সময় ডাক্তারি ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা ওনার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করছি।”
এরপর প্রসিকিটর ফারুকী বলেন, “ওনারা বেশি বললে আমাদেরও বেশি বলতে হয়। উনি স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। উনি ভিন্ন মতের কোনো ডাক্তারদের নির্বাচনের সুযোগ দেননি। ঢাকার আশেপাশে কোন ভালো ডাক্তার রাখেননি। ভালো ভালো ডাক্তারদের দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছে অযোগ্য ডাক্তাদের ঢাকায় রেখেছেন। এ এলাকা ছিল হাজী সেলিমের এলাকা। তিনি এখানে নির্বাচন করলেও পুরো ঢাকা শহরে ওনার প্রভাব রয়েছে।”
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, “আমরা আপনার কাছে ন্যায়বিচার চাই। ওনার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। রিমান্ড দেওয়া হলে উনি সহ্য করতে পারবেন না। এছাড়া উনি অনেক জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত।”
এরপর মোস্তফা জালালকে লক্ষ্য করে বিচারক বলেন, “আপনি কিছু বলতে চান? এরপর মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বলেন, আমার নামে যেসব কথা বলা হয়েছে, সেটা সত্য না। বিএনপির পক্ষ থেকে মাজেদ স্যারসহ অনেকে নির্বাচন করেছেন। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন বিএনপি-জামায়াতের কারো সঙ্গে অন্যায় করিনি। তাদের সবার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। সেজন্য ডাক্তাররা আমাকে মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রথমে সেক্রেটারি, এরপর সভাপতি করেন। বিএনপি জামায়াতের কেউ আমার কাছে কোন কিছু চেয়ে পায়নি, এমন হয়নি। আমার বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমার বড় ভাই যুদ্ধে হারিয়ে গেছেন। দেশের মেডিক্যাল অঙ্গনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা অনেক কাজ করেছি। আমার একটাই অপরাধ, আমি শেখ হাসিনার রাজনীতি করেছি।আমার নির্বাচনী এলাকা চকবাজার, লালবাগ, বংশাল ও কোতোয়ালি এলাকা। এ এলাকার কোনো মানুষের আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ নাই। নিউমার্কেট এলাকার এসব হত্যার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ মানুষ। সরকারের কোনো সিদ্ধান্তে আমি ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে।”
এরপর আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
ঢাকা/মামুন/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ষ র আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় চালান পৌঁছে প্রতি মাসে পান ৬ লাখ টাকা
আট বছর ধরে গাড়ি চালানোর পেশায় আছেন মো. শাহীন। প্রথমে চালাতেন ট্রাক, এখন যাত্রীবাহী বাস। তবে এটা তার মূল কারবারের আড়াল মাত্র। বাস চালানোর আড়ালে তিনি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনেন ইয়াবার বড় চালান। প্রতি চালানে ১০–২০ হাজার পিস ইয়াবা থাকে। এগুলো পৌঁছানোর বিনিময়ে তিনি পান মোটা অঙ্কের টাকা। প্রতি মাসে গড়ে ছয়টি চালান এনে তিনি অন্তত ছয় লাখ টাকা পান। ফলে লাভজনক এ কারবারে তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছেন।
সম্প্রতি রাজধানীর পূর্ব রামপুরা এলাকা থেকে বাসচালক শাহীন ও সুপারভাইজার সঞ্জিত রাজবংশীকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। ওই সময় বাসটিতে তল্লাশি চালিয়ে ১৫ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। এই চালানটি ঢাকার গাবতলী এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল বলে জানা গেছে।
ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ জানান, আন্তঃজেলা বাসের চালক–হেলপারদের একটি অংশ মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বিভিন্ন রুটের পরিবহনকর্মীদের মাদকসংশ্লিষ্টতার তথ্য পেতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এরপর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজার থেকে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস পূর্ব রামপুরার মোল্লা টাওয়ারের সামনে থামানো হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে চালক ও সুপারভাইজার স্বীকার করেন, তাদের কাছে মাদকদ্রব্য আছে। এরপর তাদের দেখানো অনুযায়ী চালকের আসনের নিচ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন ডিএনসি ধানমন্ডি সার্কেলের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, শাহীনের ভাষ্য অনুযায়ী, দুই বছর ধরে তিনি বাসে মাদক পরিবহনের কাজ করেন। এর আগে ট্রাক চালানোর সময় অন্য চালকদের মাধ্যমে এ কারবারের বিষয়ে জানতে পারেন। পরে টেকনাফের মাদক কারবারিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও সখ্য গড়ে ওঠে। তিনি প্রতি ১০ হাজার পিস ইয়াবা ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আনুমানিক এক লাখ টাকা করে পান। এবারের চালানের জন্য পেতেন দেড় লাখের কিছু বেশি। তবে পৌঁছানোর আগেই তিনি ও তার সহযোগী ধরা পড়েন।
অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইয়াবার চালানের প্রেরক ও প্রাপকসহ আরও কয়েকজনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।