গিভিংনাও অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাংবাদিক হাসান মাহামুদ
Published: 21st, January 2025 GMT
গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে সমাজসেবায় অবদানের জন্য ‘গিভিংনাও অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’ পেলেন সাংবাদিক হাসান মাহামুদ। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে অর্গানাইজেশন ফর ডিসএবলড ইম্প্রুভমেন্ট অ্যান্ড রাইটস (অদির বাংলাদেশ)-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব শাকিল আজাদ মননের হাত থেকে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন। এর আগে, গত ৩ জানুয়ারি পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
৬টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে সমাজ ও জনগণের কল্যাণে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে হাসান মাহামুদ এই পুরস্কারটি অর্জন করেন।
হাসান মাহামুদ গণমাধ্যমকর্মী, সংগঠক এবং লেখক। তিনি জনপ্রিয় নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের প্রধান প্রতিবেদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর পাশাপাশি তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস রিপোর্টার্স ফোরাম’ (আইআরএফ) এর প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশে এসএমএ আক্রান্তদের কল্যাণে কাজ করা রোগী ও অভিভাবকদের একমাত্র সংগঠন ‘কিউর এসএমএ বাংলাদেশ’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে তিনি সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘শেরেবাংলা গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ অর্জন করেন। একই বছরে তিনি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অব বাংলাদেশের (এএসবিএমইবি) যৌথ মিডিয়া ফেলোশিপ-২০২৪ অর্জন করেছেন।
এ ছাড়া, তিনি ২০২১ সালে উপন্যাসে মৌলিক অবদানের জন্য বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ডের বিশেষ সম্মাননা অর্জন করেন।
২০০২ সাল থেকে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হাসান মাহামুদ। কাজ করেছেন দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক ভোরের ডাক, দৈনিক মানবকণ্ঠ এবং দৈনিক বর্তমান পত্রিকায়। ২০১৫ সালে তিনি রাইজিংবিডিতে যোগ দেন।
হাসান মাহামুদ গবেষণা ও লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এ পর্যন্ত তার সাতটি গবেষণাপত্র এবং পাঁচটি মৌলিক বই প্রকাশ হয়েছে। তিনি ২০২১ সালে উপন্যাসে মৌলিক অবদানের জন্য বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ডের বিশেষ সম্মাননা অর্জন করেন। তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে ভূমিপুত্রের প্রেম (উপন্যাস), সরল ভাবনা দুই খণ্ড (নিবন্ধ), সুবোধরা কেমন হয় (শিশুসাহিত্য), মেধা মননে নন্দিতরা (জীবনীগ্রন্থ)।
তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ইয়ুথ জার্নালিস্ট ফোরাম এবং ফেনী সাংবাদিক ফোরামের সদস্য।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘রাষ্ট্রীয় শোক’ প্রত্যাখ্যান
গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন–নিপীড়ন–হয়রানি চলছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ক তখনো আটক ছিলেন ডিবি কার্যালয়ে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগে লোকদেখানো ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ পালন করা হচ্ছিল ৩০ জুলাই। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের এই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে সেদিন ‘মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং তা অনলাইনে প্রচারের কর্মসূচি’ পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে ২৯ জুলাই রাত (২০২৪ সাল) থেকেই ফেসবুকের প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম ব্যবহার শুরু হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, সাংবাদিক, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান।
ফেসবুকে অভূতপূর্ব সাড়ার পাশাপাশি নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ৩০ জুলাই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস ও সড়কে মিছিল করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দিতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকার করা রিটের শুনানিতে ৩০ জুলাই হাইকোর্ট মন্তব্য করেন ‘এসব মৃত্যু আমাদের সবার জন্যই দুঃখজনক’।
সেদিন দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা)। অধ্যাপক আসিফ নজরুল (বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা), টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী
শিরীন হক, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর যে মাত্রায় বলপ্রয়োগ ও সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করা হয়েছে, তা দেশের জনগণ ও বিশ্ববিবেককে স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করেছে।’
অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ দেওয়া ও আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ৩০ জুলাই বিবৃতি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গণ–অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলো সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের (বর্তমানে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক) চলতি জুলাই মাসের ৬ তারিখ রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ২৯ জুলাই (২০২৪ সাল) সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় শোক এবং কালো ব্যাজ ধারণের ঘোষণা দেওয়ার পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। নাছির উদ্দীন তাঁকে রাষ্ট্রীয় কালো ব্যাজের বিপরীতে লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাব দেন। পরে মো. আবু সাদিক কায়েমকে (ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা) ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন আবদুল কাদের। সাদিকও সম্মতি দেন। নাছির উদ্দীন ও আবু সাদিকের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেই মুখে–চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা ও তা অনলাইনে প্রচার করার কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।