জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে আড়াই শতাধিক বিনিয়োগকারীর প্রায় ৮৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া দুই এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর খোঁজ মেলেনি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এখন টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ বিষয়ে সমকালে গত ১৪ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

এনজিও দুটির ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে থাকা সদস্যরা এর দায় নিতে চাইছেন না। তারা বলছেন, কমিটির পদে থাকার বিষয়ে তারা জানতেনই না। আবার উপজেলা সমবায় অফিস বলছে, অডিটে কখনোই ওই তিন এনজিওর প্রতারণার বিষয়টি তারা জানতে পারেননি। গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ওই দুই এনজিও হলো পারভীন সমাজকল্যাণ সংস্থা ও সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি। প্রতিষ্ঠান দুটির তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবু হাশেম মো.

মোকারম হোসেনের দাবি, সমতা ও পারভীন প্রতিষ্ঠান দুটি তথ্য গোপন করে বেআইনিভাবে আমানত সংগ্রহ ও অন্যের অফিস ব্যবহার করে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। আমরা প্রতিনিয়ত সমিতিগুলো অডিট করি। অডিটে কখনোই তাদের প্রতারণার বিষয়টি আমরা জানতে পারিনি। তারা আমাদের অগোচরে আমানত সংগ্রহ করেছে। সমিতি বা এনজিওর নামে নিবন্ধন নিয়ে কখনোই আমানত নেওয়া যাবে না। 

জানা গেছে, ২০১৭ সালে আক্কেলপুরের ছয় ব্যক্তি উপজেলা সমবায় অফিসে আবেদন করে সমতা সমবায় সমিতি নামে নিবন্ধন নেয়। পরে সেটি সংশোধন করে সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি নামে আওতাভুক্ত সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচি পরিচালনা করে। ওই সমিতিতে ২০২২ সালে ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন হয়। তার পর থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত কমিটির সভাপতি রায়কালী ইউনিয়নের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে সুলতান মাহমুদ, সহসভাপতি পোপীনাথপুর ইউনিয়ের আব্দুল আজিজের মেয়ে স্বপ্না বানু, সম্পাদক তিলকপুর ইউনিয়নের আলতাফ হোসেনের ছেলে কে এম নুরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ রায়কালী ইউনিয়নের ফারুকুল ইসলামের ছেলে এনায়েত আহম্মেদ এবং সদস্য তিলকপুর ইউনিয়নের রেজাউল ইসলামের মেয়ে নূরুন নেছা এবং রায়কালী ইউনিয়নের আহম্মেদ আলীর ছেলে মুক্তার হোসেন দায়িত্বে রয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের অডিট অনুযায়ী, তাদের মূলধন ছিল ২৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫০৪ টাকা। মোট সদস্য ছিল ৪৮৫ জন।  

সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির প্রধান কার্যালয় উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের চন্দনদীঘি বাজারে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির পদে থাকা ছয় ব্যক্তিই আক্কেলপুরের। অপরদিকে পারভিন সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান কার্যালয় বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে। কিন্তু গ্রাহকদের বলা হতো, সান্তাহার ও নওগাঁয় সদরদপ্তর তাদের। উপজেলায় ছয়টি শাখায় দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম একই কার্যালয় এবং একই কর্মী দ্বারা পরিচালিত হতো। 

এ বিষয়ে জানতে সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুলতান মাহমুদ, সম্পাদক কে এম নুরুজ্জামান ও সদস্য মুক্তার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, তারাও ফোন বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তবে অপর তিনজন বলছেন ভিন্ন কথা। সহসভাপতি স্বপ্না বানু ও কোষাধ্যক্ষ এনায়েত আহম্মেদের ভাষ্য, তারা সমতাতে চাকরি করতেন। এর বেশি তাদের জানা নেই। ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থাকার বিষয়টিও তারা অস্বীকার করেন।

কমিটির আরেক সদস্য নূরুন নেছা বলেন, কয়েক বছর আগে আমি ওই প্রতিষ্ঠানে একটি সঞ্চয় রেখেছিলাম। এর বেশি আমার জানা নেই। আমি কখনও ওই প্রতিষ্ঠানে যাইনি। তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। 

এ প্রসঙ্গে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মর্জিনা বেগম জানান, সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন। অডিটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণে আছি; এখন কথা বলতে পারব না।

এ বিষয়ে আক্কেলপুরের ইউএনও মনজুরুল আলম বলেন, সাধারণ মানুষ বেশি মুনাফার লাভে পড়ে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানে টাকা আমানত রেখেছিলেন। দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় বর্তমানে তালাবদ্ধ রয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে এখনও কেউ অভিযোগ দেয়নি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ষ দ র ব যবস য় কম ট র এনজ ও ইউন য় সদস য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ