Samakal:
2025-05-01@05:37:05 GMT

মাঘের শীতে কাঁপছে উত্তর-পশ্চিম

Published: 23rd, January 2025 GMT

মাঘের শীতে কাঁপছে উত্তর-পশ্চিম

এবার পৌষের শুরু থেকেই জেঁকে বসে তীব্র শীত। এর মধ্যে কয়েক দফায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহও বয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হয়েছে বৃষ্টিপাত, যা শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়েছে। পৌষ শেষে এসেছে মাঘ। প্রথম কয়েকদিন শীতের তীব্রতা ছিল কিছুটা কম। তবে দু’দিন ধরে তা বাড়তে শুরু করেছে।

গতকাল বুধবার দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও ছিল হিমেল হাওয়া। ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক জেলার মানুষ। রংপুরের কয়েকটি জেলায় তীব্র শীতে কাবু হন শিশু ও বৃদ্ধরা। খড়কুটো জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন অনেকে। অবশ্য রাজধানীর চিত্র ছিল উল্টো। ঢাকায় হাঁড়কাপানো শীত নেই। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ মৌসুমে ঢাকাবাসী শৈত্যপ্রবাহের দেখা পাবেন না।

গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, আজ বৃহস্পতিবার দেশের উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে, যা ক্রমান্বয়ে পুরো দেশে শুরু হবে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে দিনের শুরুতে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা থাকতে পারে।  রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি কমতে পারে। এ ছাড়া দিনেও তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।

গতকাল রংপুরে ১৩, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১২, ডিমলায় ১২ দশমিক ৬, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ১২ দশমিক ৩, দিনাজপুরে ১২ দশমিক ৮, লালমনিরহাট ১২ দশমিক ৫ এবং গাইবান্ধায় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

দু’দিন ধরে রংপুরে সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকায় হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। দূরপাল্লার পরিবহন চলছে ধীরগতিতে। কুয়াশার কারণে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী চারটি বাস দুর্ঘটনায় পড়ে সাত যাত্রী আহত হন। গতকাল বুধবার ভোর ৫টার দিকে মহাসড়কের জায়গীরহাট এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। শীতে খেটেখাওয়া মানুষের পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েক গুণ। 

নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষ রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বাড়ছে রোগবালাই। গত এক মাসে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চারজন মারা গেছেন; ৪০ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক মাহফুজার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় বেশি বিপর্যস্ত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। সেখানে কষ্টে দিন কাটছে নিম্ন আয়ের মানুষের। বিশেষ করে জেলার চরাঞ্চলের মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছেন। শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত রোগে। গতকাল কুড়িগ্রামে সারাদিন দেখা মেলেনি সূর্যের। শীত নিবারণের জন্য সরকারিভাবে দুস্থদের জন্য যে কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা খুবই অপ্রতুল। এখনও জেলার চরের বাসিন্দারা পাননি এসব কম্বল। 

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে অসহনীয় ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে। চাহিদার তুলনায় সেখানে সরকারি-বেসরকারি শীতবস্ত্র বিতরণ একেবারেই অপ্রতুল। চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে এ পর্যন্ত কম্বল বিতরণ করা হয়েছে ৮ হাজার। দিনমজুর ও চরের ছিন্নমূল পরিবার খড়কুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণ করছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ-শিশু ও প্রসূতি মায়েরা নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। 

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গতকাল সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। এতে ধান লাগানো ও বীজতলা থেকে চারা তুলতে গিয়ে কষ্ট পোহাচ্ছেন কৃষক। কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কুয়াশায় ট্রেনের শিডিউলেও বিপর্যয় ঘটে। সকাল ৭টার কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেন আসে বেলা ১১টায়। ঠান্ডায় ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দিসহ শীতজনিত রোগ বেড়েছে। 

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর চরাঞ্চলে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় দুর্ভোগে আছেন অসচ্ছল ও নিম্ন আয়ের খেটেখাওয়া মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। দু’দিনে শীতজনিত রোগে ৪০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। একই অবস্থা জয়পুরহাটেও। মঙ্গলবার থেকে সেখানে বেড়েছে শীত। মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ