Samakal:
2025-06-16@09:01:55 GMT

অবয়বের প্রতিধ্বনি

Published: 23rd, January 2025 GMT

অবয়বের প্রতিধ্বনি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে বুক চিতিয়ে হাতে হাত রাখা সাহসী কয়েকজন তরুণ-তরুণীর মিছিল নিয়ে গড়া রাজু স্মৃতি ভাস্কর্য কিংবা ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যের ভাস্কর শ্যামল চৌধুরীর কথা আপনাদের মনে আছে? 
আমাদের দেশের সমকালীন ভাস্করদের মধ্যে বিশেষ করে বাস্তবানুগ ভাস্কর্যে তিনি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন তাঁর পরিশ্রমী সৃজন দিয়ে। আমাদের দুর্ভাগ্য, কভিড মহামারিকালে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হয়ে এই সৃজনী ক্ষমতাধর ভাস্কর তাঁর কর্মসক্ষমতা হারিয়েছেন! অতি সম্প্রতি তাঁর আগের কিছু ভাস্কর্য এবং অঙ্কন দেখার বিরল একটা সুযোগ হয়েছিল দর্শকদের।
‘অবয়বের প্রতিধ্বনি’ শিরোনামে বাংলাদেশের কৃতী এই ভাস্করের একক ভাস্কর্য ও অঙ্কন প্রদর্শনীর ঘরোয়া আয়োজন হয়েছিল। শ্যামলীতে অ্যাম্ব্রোসিয়া নামের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে তাঁর থাকার জায়গার ঠিক পাশেই ভাস্করের বড় কন্যার আবাসনের কক্ষগুলো সেজে উঠেছিল তাঁর ভাস্কর্য ও অঙ্কনে। শ্যামল চৌধুরীর ছোট কন্যা শিল্পী রূপকল্পা চৌধুরীর কিউরেটিংয়ে ১০ থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিনের এই আয়োজন চলেছে। ভাস্করের সৃজনকর্মের ভক্ত এবং তাঁর সমসাময়িক অগ্রজ-অনুজ শিল্পী, সংস্কৃতিসেবী, এমনকি শিক্ষকরাও হাজির হয়ে দেখে এসেছেন ভাস্কর শ্যামল ও তাঁর কাজগুলো। আমি দেখছি আর মনে করছি গত শতকের পুরো আশির দশকের স্মৃতি! আমরা পড়েছি চারুকলায়, থেকেছি ঢাকা নিউমার্কেটের পেছনের শাহনেওয়াজ ভবনে। ছাত্রাবাসের নিচতলায় ৩ নম্বর কক্ষে থাকতেন শ্যামল চৌধুরী। এই কক্ষে আরও থাকতেন তাঁর সহপাঠী প্রয়াত ভাস্কর মৃনাল হক ও আমার সহপাঠী অশোক কর্মকার। একই কক্ষে পরে বসবাস করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। সেই সূত্রে ৩ নম্বর রুম ছিল আমাদের সৃজন, আলাপ আর আড্ডার একটা উপযুক্ত স্থান।
ছেলেবেলা থেকেই ভাস্কর শ্যামল চৌধুরীর ছবি আঁকার ঝোঁক ছিল। এলাকার উন্নত সাংস্কৃতিক পরিবেশে তিনি সংগীতচর্চাও করেছেন। তাঁর কাছে শুনেছি নিজ এলাকার এক উচ্চাঙ্গসংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছিলেন, প্রথম হয়েছিলেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী মিতালী মুখার্জি! ছাত্রজীবনে তিনি বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহকে সঙ্গ দিয়েছেন ও তাঁর দেখভালের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৬১ সালে নেত্রকোনায় তাঁর জন্ম। স্থানীয় স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকায় এসে চারুকলায় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং ভর্তি হন।
শিক্ষার্থী জীবনেই শ্যামল চৌধুরীর ড্রয়িংয়ের হাত ছিল ভালো। তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে চারুকলার অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য, জার্মানপ্রবাসী শিল্পী মুর্শিদা আরজু আল্পনা, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শিল্পী মাসুদুল হাসান গামাসহ অনেকের অঙ্কনদক্ষতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তাদের মধ্যে একজন আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তুমুল প্রতিযোগিতা দেখেছি। তাদের অনেকের সঙ্গে আমিও আউটডোরে স্কেচ ও জলরঙের কাজ করতে গেছি আর সবিস্ময়ে লক্ষ্য করেছি– কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতায় অর্জিত দক্ষতায় তারা কত সহজে একের পর এক ছবি এঁকে শেষ করছেন!
আমরা শিক্ষকদের কাছে শিখতাম যতটুকু, প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তারও বেশি শিখেছি অগ্রজ শিল্পশিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।
শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য ও শ্যামল চৌধুরী আমাকে মাঝেমধ্যে ড্রয়িং দেখাতেন। বিশেষ করে হিউম্যান ফিগারের অ্যানাটমি বিশ্লেষণের সূত্র যা শিখেছি, সেটি তাদের হাত ধরেই। তখন থেকেই দেখেছি অঙ্কনে শিল্পী শ্যামল চৌধুরীর বিশেষ ঝোঁক ও পারদর্শিতা। এই অঙ্কনদক্ষতাকে ত্রিমাত্রিক রূপে ফুটিয়ে তোলার প্রবল ইচ্ছেয় তিনি চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগে ভর্তি হন। এরপর ভাস্কর হিসেবে তাঁর উত্থানপর্বের ক্রমবিকাশ।
শ্যামলের আরেকটি ভূমিকা পালনের খবর অনেকে জানেন না। ছাত্রজীবনে তিনি বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহকে সঙ্গ দিয়েছেন ও তাঁর দেখভালের দায়িত্ব পালন করেছেন।
চারুকলার শিক্ষার্থীদের আঁকা ও গড়া নির্বাচিত শিল্পকর্ম নিয়ে বার্ষিক চিত্র প্রদর্শনী হয়। তাতে নানা মাধ্যমে ভালো কাজের জন্য পুরস্কার প্রদানের রেওয়াজ রয়েছে। আশির দশকে দেখেছি শ্যামল চৌধুরী ভাস্কর্য বিভাগে শ্রেণি পুরস্কার থেকে শুরু করে ভাস্কর্য মাধ্যমে সেরা পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮৩ সালে তিনি চারুকলার স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং স্নাতকোত্তর পর্বে পাঠ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করে পুরোদস্তুর পেশাদার ভাস্কর হিসেবে আবির্ভূত হন। একে একে গড়ে তোলেন বৃহৎ আঙ্গিকের বহিরাঙ্গন ভাস্কর্য। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য আরেকটি অসামান্য সৃষ্টি।
১৯৯২ সালে টিএসসি-সংলগ্ন এলাকায় ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীর সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলে থাকা ছাত্রনেতা মঈন আহমেদ রাজু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছাত্র-শিক্ষকসহ সবার আর্থিক অংশগ্রহণে অকুতোভয় রাজুর স্মরণে শিল্পী ও ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী টিএসসি সড়কদ্বীপে রাজু স্মৃতি ভাস্কর্য গড়ে তোলেন। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ভ স কর ভ স কর য চ র কল র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আরও ৩৭ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ

দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও নওগাঁ সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ আরও ৩৭ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তাদের সবাইকেই বিজিবি আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করেছে। আটকরা সবাই নিজেদের বাংলাদেশি বলে দাবি করেছেন। বিভিন্ন সময় কাজের জন্য অবৈধভাবে তারা ভারতে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে গত ৪০ দিনে ১ হাজার ৪৩৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিল বিএসএফ। 

শুক্রবার ভোরে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার অচিন্তপুর সীমান্তের ২৯৫ নম্বর মেইন পিলারের ১ নম্বর সাব-পিলার এলাকা দিয়ে একই পরিবারের ১৪ জনসহ ১৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করেন। আটকদের মধ্যে ৯ শিশু ও ৩ নারী রয়েছেন। 

বিজিবি জানায়, আটকরা নিজেদের বাংলাদেশি বলে দাবি করেছেন। সবার দাবি, তারা নড়াইল জেলার কালিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা। ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে কাজের জন্য মুম্বাই যান। তাদের বিরামপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 

একই দিন ভোরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। বিজিবির নিউ পাল্লাথল বিওপির টহল দল তাদের আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। আটকদের মধ্যে তিন নারী ও ছয় শিশু রয়েছে। বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ জানান, আটকদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

পঞ্চগড়ের গোলাবাড়ি সীমান্ত দিয়ে গতকাল ভোরে নারী, শিশুসহ সাতজনকে ঠেলে দেয় বিএসএফ। এর মধ্যে তিন নারী, দুই পুরুষ ও দু’জন শিশু। সীমান্তের মেইন পিলার ৭৪৩-এর ১ নম্বর সাব-পিলার এলাকা থেকে তাদের আটক করে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অমরখানা ক্যাম্পের টহল দল। জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা নিজেদের বাংলাদেশি দাবি করেন। সবার দাবি, তারা নড়াইল ও যশোর এলাকার বাসিন্দা। এর আগেও চার দফায় নারী, শিশুসহ ৬০ জনকে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ।

এ ছাড়া নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্ত দিয়ে আছিয়া বেগম (৫০) নামে এক নারীকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। গতকাল দুপুরে উপজেলার জগদ্দল মাঠের মধ্যে থেকে তাঁকে বিজিবি আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করে। ওই নারী ১০ বছর ধরে ভারতের মুম্বাইতে একটি হাসপাতালে আয়ার কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি যশোর জেলার ইশবপুর নামক এলাকায়। 

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার মুন্সিপাড়া বিওপি কড়ইগড়া সীমান্ত দিয়ে দুই শিশুসহ ৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। তাদের মধ্যে আটজনের বাড়ি বাগেরহাট এবং একজনের ধোবাউড়ায়। তারা সবাই আট বছর ধরে ভারতের চেন্নাইয়ের বিভিন্ন স্থানে কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন। 

বিজিবি জানায়, চেন্নাই পুলিশের ধাওয়া খেয়ে এই ৯ জন দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের মেঘালয়ের শীবগঞ্জ পুলিশ তাদের আটক করে। 
 

(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো খবর)


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • ‘ভয়ে’ সরকারি তালিকায় নাম না তোলা ইমরান চলে গেলেন নীরবে
  • ‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
  • কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর ময়মনসিংহে স্বস্তির বৃষ্টি
  • ময়মনসিংহে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত
  • নান্দাইলে বাস-ইজিবাইক স্ট্যান্ড দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬
  • হু হু করে বাড়ছে অপরিকল্পিত ভবন, মিলছে না ময়লা ফেলার জায়গা
  • আরও ৩৭ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • তাপপ্রবাহ আরও দুয়েক দিন, এর পর বৃষ্টি