Samakal:
2025-06-17@11:43:56 GMT

ভাঙা ব্যালাড অথবা তুষারবীথিকা

Published: 23rd, January 2025 GMT

ভাঙা ব্যালাড অথবা তুষারবীথিকা

টানা নয়-দশ দিন ধরে তুষার পড়েছে। সূর্যের দেখা নেই। বিকেল ৪টা বাজতেই চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়–রাত নেমে আসে দিনের বুকে। ইনস্টাগ্রামে মেঘে ঢাকা শহরের রিল দেখতে গিয়ে জানলাম, ১৯৯৫ 
সালে টানা তেষট্টি দিন রোদ ওঠেনি এ শহরে। আশ্চর্যের বিষয়, তখন তুষারও পড়েনি। চারপাশ ছিল ধূসর আর খয়েরি। 
এ বছর দৃশ্যটা ভিন্ন। শুভ্র তুষার ঢেকে দিয়েছে সিরাকিউজের শরীর। লিভিং রুমে কফির মগ হাতে জানালার বাইরে তাকালে দেখি, অনবরত তুষারের মাঝে যেন পৃথিবী দুলছে কোনো সিনেমার পর্দায়। কোনো কোনো দিন আকাশ পরিষ্কার হলে, গাছের ডালে আটকে থাকা তুষারগুলো দেখে ‘ও হেনরি’র গল্পদৃশ্য মনে হয়। 
কখনও কখনও অবশ্য প্রবল বাতাস এসে সেই দৃশ্য এলোমেলো করে দেয়। জানালার কাচের বাইরে তখন তুষারকণাগুলো উড়ে পাখির পালকের মতো। এই দৃশ্য যতবার দেখি, ততবার কেন যেন ‘আমেরিকান বিউটি’ সিনেমার রিকি ফিটসের কথা মনে পড়ে।
রিকি একদিন দমকা বাতাসে ভেসে বেড়ানো তুচ্ছ একটা প্লাস্টিক ব্যাগ টানা পনেরো মিনিট মুগ্ধ হয়ে ভিডিও করেছিল। সে জানত, শহরের কোনো মানুষ এই ব্যাগের সৌন্দর্য দেখবে না। কেউ দেখলেও মনে রাখবে না। কারণ ব্যাগটা কোনো বিখ্যাত ভাস্কর্য নয়, নয় কোনো রঙিন বিলবোর্ড। তবু রিকি দেখেছিল। আর বলেছিল,
“Sometimes there’s so much beauty in the world I feel like I can’t take it, like my heart’s going to cave in.


দমকা বাতাসে গাছের ডাল থেকে উড়তে থাকা তুষারকণা আমাকে ঠিক এভাবেই আচ্ছন্ন করে। মনে হয়, রিকির সেই প্লাস্টিক ব্যাগ তুষারের রূপ নিয়ে নাচছে। আমি জানালার এপাশে ভিউফাইন্ডারে চোখ রেখে তাকিয়ে দেখছি–অন্যপাশের শুভ্র পৃথিবী। সেই পৃথিবীর মাঝে ধীরে ধীরে উড়ছে অসংখ্য তুষারকণা; যেন বহু আগে পেছনে রেখে আসা কোনো স্তব্ধ গল্পের পৃষ্ঠা উল্টে যাচ্ছে আমার সামনে।
জীবন এত সহজে মানুষকে ক্লান্ত-বিপন্ন করে তোলে। তবু মাঝে মাঝে কিছু মুহূর্তে নতুনভাবে বাঁচার আনন্দ জাগে। তখন মনে হয়, স্বস্তি সন্ধানের চিরাচরিত প্রোটোকল ভেঙে, কারা আমাদের সন্ধ্যার হাওয়ায় বেঁচে থাকার গান শোনাবে...? 
লেখকের ফেসবুক থেকে

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছোট্ট মেয়েকে কেন নিয়মিত ই মেইল পাঠাচ্ছেন আলিয়া
  • মেয়েকে কেন ই মেইল পাঠাচ্ছেন আলিয়া
  • নদীর কোলে শিক্ষার সংগ্রাম: চরের শিশুদের গল্প
  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে