যাত্রীবাহী বাস খাটছে ভাড়ায় কর্মকর্তাদের পকেট ভারী
Published: 24th, January 2025 GMT
পরিবহন সংকটে অসহনীয় ভোগান্তিতে চট্টগ্রামের মানুষ। সকাল ও সন্ধ্যায় বাস পেতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। শুধু তাই নয়, কর্মস্থল ও বাসাবাড়ি যেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় তাদের। ঠাসাঠাসি করে যেতে হয় গন্তব্যে। ভাড়াও গুনতে হয় বেশি। এমন পরিবহন সংকট নিরসনে ভালো একটি উপায় হতে পারত বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন-বিআরটিসির বাসগুলো। কিন্তু এসব বাসের বড় একটি অংশ সাধারণ যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে না। গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিয়ে-পিকনিকে ভাড়ায় খাটছে। ফলে বিদ্যমান গণপরিবহন সংকট নিরসনে আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে পারছে না সরকারি বাস।
চট্টগ্রামে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাস পরিচালনা করছে বিআরটিসি। এ বাসগুলো সংস্থারই চালক-হেলপারদের দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়ায় দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইচ্ছামতো গাড়িগুলো পরিচালনা করছেন তারা। এটা অনেকটা যে সংস্থায় চাকরি, সেই সংস্থার সঙ্গে ব্যবসা করার মতোই। চালকদের সঙ্গে থাকেন এলাকার প্রভাবশালী লোকজন এবং কতিপয় দালাল। রুটভিত্তিক এসব গাড়ি বণ্টনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থ লেনদেন হয়ে থাকে। তাছাড়া চালক-হেলপার থাকার পরও নিজেরাই গাড়ি পরিচালনা না করে দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়ায় লাগিয়ে দেওয়ায় অনেকটা আরাম-আয়েশে সময় কাটে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আবার পকেটও ভারী হয় তাদের।
বিআরটিসির নীতিমালা অনুযায়ী কোনো কারণে আয় বৃদ্ধি কিংবা লোকসান হ্রাসে স্বল্পমেয়াদে অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে গাড়ি ইজারা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা না করে খোদ বিআরটিসির চালক ও কিছু দালালের হাতে দৈনিক ভিত্তিতে গাড়ি তুলে দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
বিআরটিসির একাধিক চালক জানিয়েছেন, রুট ও গাড়িভিত্তিক বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ দিয়ে বাস নিতে হয়। দিনে প্রতি বাসের জন্য ‘অফিস খরচ’ হিসেবে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এ ছাড়া নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ দিতে হয় একশ্রেণির শ্রমিক নেতাদেরও। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন আর শ্রমিক নেতাদের সেই টাকা দিতে হচ্ছে না।
গত ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা যায়, অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত বন্দর নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ মোড়ে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। চোখের সামনে দিয়ে একের পর এক চলে যাচ্ছে বাস-মিনিবাস। মাঝে মাঝে যাচ্ছে বিআরটিসির বাসও। কিন্তু এসব বাস-মিনিবাস যাত্রী ওঠানামা করছে না। দেখলে মনে হবে এগুলো ‘বিরতিহীন সার্ভিস’। হঠাৎ কোনো একটি বাস একটু থামলেই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সাধারণ যাত্রীরা। অনেক পুরুষ যাত্রী কোনোভাবে ঠাসাঠাসি করে বাসে উঠতে পারলেও বেশির ভাগ নারী যাত্রীকে হতাশ হতে হচ্ছে। পরে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাদের। গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় ভাড়ায় চলাচলের কারণে সাধারণ যাত্রীরা এসব বাসের সুফল পাচ্ছে না। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই গাড়িগুলো ভাড়ায় খাটায় বিপাকে পড়তে হয় যাত্রীদের।
প্রতিদিন আগ্রাবাদ থেকে বহদ্দারহাট যাওয়া-আসা করেন ব্যাংক কর্মচারী নাছির উদ্দিন। রোববার সন্ধ্যায় আগ্রাবাদ মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, বিআরটিসির বাসগুলো বিভিন্ন শিল্প-কারখানার সঙ্গে চুক্তি করে শ্রমিক-কর্মচারীদের আনা-নেওয়ায় ব্যস্ত থাকে। সাধারণ যাত্রীদের পরিবহন করে না। অথচ এসব বাস যদি নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করত তাহলে নগরীতে গণপরিবহন সংকট কমে আসত।
চট্টগ্রাম বাস ডিপো সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে বিভিন্ন রুটে বিআরটিসির একতলা এবং দ্বিতল মিলে ৬৭টি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে। এর বাইরে দুটি বাসকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। চলাচলরত বাসগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে ছয়টি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে ১২টি, স্মার্ট স্কুল বাস হিসেবে চলে ১২টি এবং ছাদখোলা বাস দুটি। এ হিসেবে ৩২টি বাসই ব্যস্ত থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবহনে এবং ছাদখোলা দুটি বাস চলে পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কাজে। নগরীর নতুন ব্রিজ হয়ে জেলার পটিয়া রুটে চলে ১০টি বাস, আনোয়ারা রুটে চারটি, চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে দুটি, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা কোম্পানীগঞ্জ রুটে একটি, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি রুটে চারটি, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি রুটে চারটি, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে দুটি এবং চট্টগ্রাম থেকে সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জ রুটে চলে দুটি বাস। এর বাইরে কয়েকটি বাস শহরে চলাচল করে। রিজার্ভ ভাড়ার যাত্রীদের নামিয়ে সময় পাওয়া গেলে নগরীর সাধারণ যাত্রীদের পরিবহন করে কয়েকটি বাস। তবে পিক আওয়ারে এসব বাসে ওঠার সুযোগ পান না সাধারণ যাত্রীরা। সব মিলিয়ে বিআরটিসি বাস থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল সমকালকে বলেন, নগরীতে যাত্রীর অভাব নেই। তাই বিআরটিসির বাস চলাচল নিয়ে আমাদের তেমন কোনো ক্ষতি নেই। বরং নগরীর গণপরিবহনের সংকট নিরসনে আমরাও চাই বিআরটিসির বাসগুলো সাধারণ যাত্রী পরিবহন করুক। কিন্তু তারা সেটি না করে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় ভাড়ায় লাগিয়ে দিচ্ছেন। কিছু গাড়ি নিজেদের চালকদের দৈনিকভিত্তিতে দিয়ে পরিচালনা করছে।
তবে এমন সব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন বিআরটিসি চট্টগ্রাম ডিপোর ম্যানেজার (অপারেশন) জুলফিকার আলী। তিনি বলেন, বিআরটিসি বাস বিভিন্ন গার্মেন্ট ও শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদেরও পরিবহন করছে। নিউমার্কেট থেকে পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন রুটে কয়েকটি বাস নিয়মিত চলাচল করে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব আরট স র ব স এসব ব স নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন, মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের চাকায় মৃত্যু নারীর
চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ার পর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম ফজিলাতুন নেসা (২৮)। তিনি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার মহেশপুর গ্রামের আলিমুজ্জামান সুজনের স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে বেড়াতে আসেন ফজিলাতুন নেসা। তাঁদের ছয় বছর বয়সী সন্তানও সঙ্গে ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের একটি বাসায় তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। সকালে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। আলিমুজ্জামান মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর পেছনে ছয় বছর বয়সী সন্তান হুমায়ের হাম্মাদ, এরপর ফজিলাতুন নেসা বসে ছিলেন।
সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার নয়াহাট এলাকায় পৌঁছায় মোটরসাইকেলটি। সেখানে সামনে থাকা একটি লেগুনা হঠাৎ সড়কে থেমে গেলে তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেলটির ব্রেক কষেন আলিমুজ্জামান। এ সময় ফজিলাতুননেসা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এর পরপরই পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ফজিলাতুন নেসাকে পিষ্ট করে। তাঁকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের যে বাসাটিতে ফজিলাতুন নেসা ছিলেন, সেটি তাঁর স্বামী আলিমুজ্জামানের বন্ধু রবিউল ইসলামের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রবিউল ইসলামের বোন আশরিফা আহমদ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফজিলাতুন নেসার স্বামী নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক। পরিবার নিয়ে পাহাড় দেখতে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। বেড়াতে যাওয়ার পথেই স্বামী-সন্তানের সামনে দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণহানি হয়েছে।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট ওয়াসিম আরাফাত দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত নারীর লাশ আইনি–প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লেগুনা ও বাসের চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।