রামগতি উপজেলার উপকূলীয় এলাকার জমিতে গত আগস্টের বন্যার পর লাগানো বীজে ধান হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে কাঁচা ধান গাছ কেটে ফেলছেন কৃষকরা। বিলম্বে চারা রোপণের কারণে এমন হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার চর বাদাম, চর আলগী ও চর আফজলের বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে দেখা গেছে কাঁচা ধান কাটার করুণ দৃশ্য। বীজে ধান না হওয়ায় কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে কাঁচা সবুজ ধান কেটে গরুর ঘাস হিসেবে ব্যবহার করছেন।
চর বাদাম গ্রামের স্থানীয় কৃষকরা জানান, শত শত একর জমিতে আমন ধানের গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে– একেবারে সবুজ কাঁচা ধান, পাক ধরার লক্ষণ নেই। আবার বেশির ভাগ ক্ষেতে আছে শুধু গাছ, ধান নেই। ধানের শীষ বের হচ্ছে না অথবা বের হলেও ধান গাছে ছিটা। 
তারা আরও জানান, ২০২৪ সালের আগস্টের ভয়াবহ বন্যার পর দূর-দূরান্ত থেকে বীজ সংগ্রহ করেছিলেন ফসলের আশায়। কিন্তু বর্তমানে ধান না পেয়ে তারা আবারও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অন্যদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার পদটি শূন্য থাকায় উপকূলের কৃষকরা সঠিক পরামর্শ নিতে পারছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
চর বাদাম গ্রামের কৃষক জয়নাল মিয়া জানান, বন্যার কারণে পরপর চারবার বীজ লাগিয়েও চারাগাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পঞ্চম বার বাজার থেকে ধানের চারা কিনে জমিতে লাগিয়ে ছিলেন। কিন্তু জানুয়ারির শেষ ভাগেও গাছ থেকে শীষ বের হচ্ছে না। ধান পাবেন বলে আর আশা নেই। তাই এখন সবুজ ধান গাছ কেটে ফেলছেন। এতে তার অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে।
চরআলগী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘বন্যা-পরবর্তী সময়ে মোট চারবার বীজ লাগিয়েছি। কষ্টের ধানে কোনো ফলন না পাওয়ায় ঘাস হিসেবে ধানের সবুজ গাছ কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছি।’
মাঠঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার শত শত একর জমিতে এখন এমন অবস্থা রয়েছে। এতে হতাশ কৃষকরা। অনেক কৃষক সবুজ ধান গরুর ঘাস হিসেবে বিক্রি করছেন। অনেকে ধান গাছ কেটে নতুন করে সয়াবিন চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। 
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ সামছুদ্দিন মো.

ফিরোজ বলেন,  ‘এ জেলায় বন্যার পর লাগানো আমন ধানের ৬০ শতাংশ ফলন ভালো হয়েছে। আমন ধান আলোক সংবেদনশীল উদ্ভিদ। মূলত বিলম্বে লাগানোর কারণেই এমন সমস্যা হয়েছে।’ 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল ক ষকর

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ