ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও চেলসির বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ইপসউইচ টাউন লিভারপুলের মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শনিবার অ্যানফিল্ডে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ৪-১ গোলে জয় পেয়েছে অলরেডসরা। এই জয়ে ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করেছে তারা।  

লিভারপুলের হয়ে জোড়া গোল করেছেন কডি গ্যাকপো, যিনি একটি গোল বানিয়ে দিতেও ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া মোহাম্মদ সালাহ তার অ্যানফিল্ড ক্যারিয়ারের ১০০তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন।  

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে রাখে লিভারপুল। ১১ মিনিটে গোলের সূচনা করেন ডমিনিক সোবোসলাই। ইব্রাহিমা কোনাটের কাট ব্যাক থেকে পাওয়া বল নিচু শটে জালে পাঠান হাঙ্গেরিয়ান মিডফিল্ডার। ৩৫ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহ দলের ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এটি ছিল অ্যানফিল্ডে তার ১০০তম গোল, যা তার জন্য একটি বিশেষ মাইলফলক। চলতি মৌসুমে লিগে এটি তার ১৯তম এবং সব মিলিয়ে ২৩তম গোল।  

প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে, ৪৪ মিনিটে কডি গ্যাকপো তৃতীয় গোল করে লিভারপুলের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করে দেন। ইপসউইচ টাউন প্রথমার্ধে ২৭ শতাংশ বলের দখল রাখলেও কোনো শট নিতে পারেনি।  

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ইপসউইচ কিছুটা আক্রমণাত্মক খেলতে চেষ্টা করে। তাদের স্ট্রাইকার লিয়াম ডেলাপ পেনাল্টির আবেদন করলেও রেফারি তা নাকচ করে দেন। ওমারি হাচিনসন ইপসউইচের হয়ে প্রথম শট নেন, কিন্তু লিভারপুল গোলরক্ষক আলিসন সহজেই তা রুখে দেন। ৬৬ মিনিটে কডি গ্যাকপো তার দ্বিতীয় গোল করেন। ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ডের ক্রসে হেড থেকে গোলটি করেন তিনি। পরে আর্নল্ডের আরেকটি শট পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়, নাহলে স্কোর আরও বাড়তে পারত।  ৯০ মিনিটে ইপসউইচ টাউন সান্ত্বনার গোল পায়। ডিফেন্ডার জ্যাকব গ্রিভস হেড থেকে দলের একমাত্র গোলটি করেন।  

এই জয়ের ফলে লিভারপুল এক ম্যাচ কম খেলে ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে আর্সেনালের চেয়ে ৬ পয়েন্টে এগিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ