বিশেষ মার্কিন অভিবাসন ভিসা পাওয়া আফগান নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ফ্লাইট স্থগিত হয়ে গেছে। সম্প্রতি সব বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত রাখার যে সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিয়েছেন, তার কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া নিয়ে ৪০ হাজারের বেশি আফগান নাগরিক এ অনিশ্চয়তায় পড়লেন।

তবে এ ঘটনায় এসব আফগান নাগরিক আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের প্রতিশোধের শিকার হতে পারার ঝুঁকিও রয়েছে। প্রভাবশালী একজন আইনজীবী ও এক মার্কিন কর্মকর্তা শনিবার এসব তথ্য জানান। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে অনেকগুলো নির্বাহী আদেশ জারি করেন ট্রাম্প। এমনই একটি আদেশে বিভিন্ন দেশের জন্য প্রায় সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেন তিনি। পাশাপাশি নতুন করে কোনো সহায়তা দেওয়া বন্ধেরও নির্দেশ দেন। তবে জরুরি খাদ্যসহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিসরের জন্য সামরিক সহায়তা কার্যক্রম চলমান রাখা রয়েছে।

আফগানদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংগঠন ‘হ্যাশআফগানইভ্যাক’–এর প্রধান শন ভ্যানডাইভার বলেন, ওই আফগানদের অধিকাংশই আফগানিস্তানে এবং অন্যরা পাকিস্তান, কাতার ও আলবেনিয়ায় আটকা পড়েছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান সব বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রম ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। এ সময়ে এসব সহায়তা কার্যক্রম পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। সহায়তা কার্যক্রমের কার্যকারিতা ও ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ কি না, সেসব বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, বৈদেশিক সহায়তার ওপর কঠোর বিধিনিষেধসংক্রান্ত ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ অর্থাৎ ‘সবার আগে আমেরিকার স্বার্থ’ নীতি গ্রহণ করবেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, বৈদেশিক সহায়তা স্থগিতের ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ঘোষণাটির ফলে বৈশ্বিক পুষ্টি, স্বাস্থ্য, টিকাদান ও অন্যান্য কর্মসূচিও স্থগিত হয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসে আগ্রহী আফগানদের স্পেশাল ইমিগ্রেশন ভিসার (এসআইভি) আওতায় দেশটিতে আবাসন, স্কুল ও চাকরি সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের তহবিলে অর্থায়নও আটকে গেছে ওই সিদ্ধান্তে।

নির্বাহী আদেশ জারির আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চালানোর সময়ই ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

ভ্যানডাইভার বলেন, ‘মার্কিন বিশেষ ভিসার অনুমোদন পাওয়া আফগানদের ফ্লাইট স্থগিত করা উদ্দেশ্যমূলক বলে আমি মনে করি না। আমার ধারণা, এটি ভুলক্রমে হয়েছে।’

তবে তার প্রত্যাশা, ট্রাম্প প্রশাসন ওই সিদ্ধান্ত থেকে আফগানদের বাদ দেবে। কেননা, আফগানিস্তানে যুদ্ধচলাকালে এই আফগানরা মার্কিন সরকারের পক্ষে কাজ করেছেন। ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে চূড়ান্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি হয়।

‘এই আফগানরা আমাদের পাশে থেকে লড়াই করেছেন এবং আমাদের মতো তাদেরও রক্ত ঝরাতে হয়েছে’ উল্লেখ করে ভ্যানডাইভার আরও বলেন, এসআইভি আবেদন মঞ্জুর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন আরও হাজারো আফগান।

এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউস ও মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের মন্তব্য জানতে চাইলে তারা এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি।

২০২১ সালে পশ্চিমা মদদপুষ্ট আশরাফ গনি সরকারকে হটিয়ে আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতা গ্রহণ করেন তালেবান যোদ্ধারা। এর আগে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চালানো তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে বহু আফগান সে দেশের হয়ে কাজ করেছেন। বিশিষ্ট ব্যক্তি ও পরামর্শক গোষ্ঠীর জোট ‘হ্যাশআফগানইভ্যাক’ এই আফগানদের দেশত্যাগ ও পুনর্বাসনে কাজ করছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন আফগ ন স ত ন ক জ কর র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ