নিউমার্কেটে পুলিশের ওপর হামলায় ১২ জন শনাক্ত
Published: 27th, January 2025 GMT
ব্যবসায়ী হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন মিথুনকে ছিনিয়ে নিতে রাজধানীর নিউমার্কেট থানার সামনে পুলিশের ওপর হামলা চালানো অন্তত ১২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনকে ঘটনার সময়ই গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিদের গত কয়েকদিনে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এখনও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
পরে শনাক্ত হওয়া ছয়জন হলেন– ধানমন্ডি থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি আশরাফুল আলম পারভেজ, যুবদলের কর্মী শরিফুল ইসলাম দুর্জয়, কলাবাগান থানা ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বেলাল, সদস্য আল ওয়াসি এরিক, ছাত্রদল নেতা চঞ্চল ও কর্মী সালমান। তাদের মধ্যে শরিফুল ও মেহেদী হামলার নেতৃত্ব দেন বলে জানা গেছে।
পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার তারিক লতিফ সমকালকে বলেন, সেদিনের হামলায় ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মী ছাড়াও ফুটপাতের হকাররা ছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও দেখে জড়িত সবাইকে শনাক্ত করা হচ্ছে ও শনাক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ২৩ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর পূর্বাচল থেকে ছাত্রদল নেতা মিথুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভোর ৪টার দিকে তাঁকে নিউমার্কেট থানায় নেওয়ার সময় হামলা চালান তাঁর অনুসারীরা। থানার ফটকের সামনেই তারা মিথুনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে হামলাকারী ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন– বশির ইসলাম, হাসান, ইমন, মাসুম মাহমুদ, আলামিন ও আকবর আলী। তারা সবাই এখন কারাগারে।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বশির হামলাকারী কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন। জানা গেছে, মিথুনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানোর সময়ই তিনি তাঁর আশপাশে থাকা ব্যক্তিদের কিছু নির্দেশনা দেন। সেইসঙ্গে ফোনে অনুসারীদের খবর দেন। তাদের মধ্যে শরিফুল ছিলেন অন্যতম। পরে তারা সংগঠিত হয়ে নিউমার্কেট থানার সামনে অবস্থান নেন। হামলার ভিডিওতে তাঁকে উত্তেজিত স্বরে কথা বলতে দেখা গেছে।
এর আগে ১০ জানুয়ারি এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে দোকান মালিক সমিতির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হককে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ‘ইমন গ্রুপের’ (সানজিদুল ইসলাম ইমন) সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন সমিতির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল হাসান। সেদিন তাঁর ওপরেও হামলা চালানো হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা রাসেল রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, সেদিন তাঁকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেন মিথুন। তিনি সন্ত্রাসী ইমনের হয়ে চাঁদাবাজি করেন। সম্প্রতি চাঁদার দাবিতে ধানমন্ডির একটি নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে গুলি চালায় এই গ্রুপের সদস্যরা। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই দৃশ্য। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ কর্মী অভিযোগ তুলে বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাটের অভিযোগও রয়েছে মিথুনের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারের পর দিনই তাঁকে ও ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান রাসেলকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে সংগঠনটি।
পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নিউমার্কেট থানার এসআই ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলা করেন। এজাহারে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে আসামি করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ছ ত রদল র স মন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকালে বৈদ্যুতিক লাইনের নেটের আঘাতে নিহত ১, আহত ৫
টাঙ্গাইলে ট্রেনের ছাদে অবৈধভাবে ভ্রমণের সময় বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম রিপন আলী (৩৭)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রেলওয়ে পুলিশের টাঙ্গাইল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর পর ছাদে রক্তাক্ত অবস্থায় ছয়জনকে পাওয়া যায়। আহত যাত্রীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা ঢাকা থেকে ট্রেনের ছাদে উঠেছিলেন। টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর ১৫–২০ মিনিট আগে রেলপথের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা একটি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নিচের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তাঁরা আহত হন।
আহত ছয়জনকে পুলিশ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে রিপন আলীর মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে আশরাফুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত আমিরুল ইসলাম (২৫), আলিম (২৫) ও ফয়সাল (২৭) চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অজ্ঞাতপরিচয়ের এক কিশোর (১৫–১৬) এখনো টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তার হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে। কর্তব্যরত নার্স জানান, ছেলেটি কথা বলতে পারছে না।
এদিকে নিহত রিপন আলীর রাজশাহীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কালিয়ানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আহাজারি করছেন। বাইরে রিপনের দাফনের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে, কেউ বাঁশ কাটছেন।
রিপনের বাবা ইসরাফিল হোসেন জানান, রিপন ঢাকার একটি ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে চাকরি করত। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন কাজ খুঁজছিল। গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল হাসপাতাল থেকে রিপনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার ছোট ছেলের ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, রিপন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।