গণপরিষদ নির্বাচনসহ ১১ দফা বিপ্লবী পরিষদের
Published: 29th, January 2025 GMT
জুলাই বিপ্লবের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আগামী জুনে গণপরিষদ নির্বাচন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠনসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান এ ডাক দেন।
এ সময় জুলাইয়ের শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন, শহীদ নাইমা সুলতানার মা আইনুন নাহার ও শহীদ রানা তালুকদারের মা রুবি বেগম জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আন্দোলনকে সমর্থন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপিকে গভীরভাবে ভাবার আহ্বান জানিয়ে আনিছুর রহমান বলেন, “দেশে দীর্ঘদিন নির্বাচিত সরকার না থাকলে বিদেশি শক্তি ও পতিত ফ্যাসিবাদ নানা ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে। এমনকি বন্ধু দেশগুলোও লবিস্টদের দৌরাত্ম্যের কারণে ভুল পদক্ষেপের খপ্পরে পড়তে পারে। আবার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছাড়া দ্রুত নির্বাচন দিলে অশুভ শক্তি পতিত ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন করে বসতে পারে।”
তিনি বলেন, “এ অবস্থায় গণপরিষদ নির্বাচন হলো একমাত্র বিকল্প। যার মাধ্যমে দ্রুত সময়ে দেশ একটি নির্বাচিত কর্তৃপক্ষ পাবে। এর ফলে গণপরিষদের সম্ভাব্য বড় দল বিএনপির ক্ষমতা বিষয়ক আতঙ্ক দূর হবে। পাশাপাশি দলটি সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব পেয়ে কেমন সংস্কার করে, ভিন্নমত কতটা শোনে এবং জনগণের কতটা অধিকার দিতে রাজি হয়, তাও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
এ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক প্রধান মো.
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মো. মেহেদি হাসান মাহি ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ ইসতেকার ইসলাম অর্ণব, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব ফরহাদ আহমেদ প্রমুখ।
তাদের দাবিগুলো হলো-
১. জুলাই গণহত্যা, শাপলা চত্বর, পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের হত্যার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। জড়িতদের দেশ-বিদেশ থেকে বন্দী করে আনার জন্য বিশেষ বাহিনী গঠন। ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাতিল এবং ৬ মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা।
২. শহীদ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা।
৩. জুন ২০২৫-এ গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। গণপরিষদে শহীদ পরিবারের সদস্য, ছাত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি করতে হবে।
৪. গণপরিষদ কর্তৃক '৭২ এর সংবিধান বাতিল, রাষ্ট্রপতি অপসারণ এবং উপদেষ্টা সরকার ভেঙে দিতে হবে।
৫. ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি শাসিত বিপ্লবী সরকার গঠন। এ সরকারের একটি অন্তর্বর্তী মন্ত্রিপরিষদ থাকবে, যার নেতৃত্ব দিবেন গণপরিষদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী।
৬. জানুয়ারি ২০২৬ এর মধ্যে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং ৩ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন।
৭. ড. ইউনূসকে চেয়ারম্যান এবং সেনাপ্রধানকে ভাইস-চেয়ারম্যান করে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করতে হবে। এ পরিষদ দেশ বিরোধী সকল চুক্তি পর্যালোচনা করে বাতিল করবে, সব বাহিনীকে পুনর্গঠন করবে এবং পুনর্গঠনকালীন সময়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।
৮. ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ গঠন করে অর্থনীতি সচল ও সংস্কার, কালো টাকা উদ্ধার ও সিন্ডিকেট ভাঙা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য জনগণের আয়ত্তের মধ্যে রাখা।
৯. আধুনিক, উন্নত মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। শিক্ষকতাকে প্রথম শ্রেণীর পেশা ঘোষণা করে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ বেতন প্রদান, মাস্টার্স পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের জন্য সুদমুক্ত শিক্ষা ঋণ চালু এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সারাদেশে উন্নত আবাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
১০. সব গরিব ও মেহনতি মানুষের চিকিৎসা খরচ রাষ্ট্র বহন করবে। সব নাগরিকের জন্য ব্যয়বহুল জটিল রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে হতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সব বিভাগে একাধিক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১১. ঘণ্টা প্রতি সার্বজনীন মজুরি ঘোষণা করতে হবে। বিনা সুদে কর্মসংস্থান ঋণ প্রদানের পাশাপাশি শ্রমজীবীদের জন্য আবাসন ও সন্তানদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য চ ত কর র গঠন গঠন ক সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।
বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।
বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।
এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।
অবরোধকারীদের দাবি
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।