ওয়ালটন টিভি সার্ভিস প্রকৌশলীদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ শুরু
Published: 30th, January 2025 GMT
বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে টিভি উৎপাদনে বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছে ওয়ালটন। গ্রাহকদের জন্য নিশ্চিত করছে সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা। এরই ধারাবাহিকতায় টিভি সার্ভিসিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান ও সংশ্লিষ্টদের জন্য মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করছে দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন।
কর্মশালার মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের সব সার্ভিস প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে এবং সার্ভিসিংয়ে দক্ষতা বাড়াতে অংশগ্রহণকারীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, কর্মশালায় সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা আরো বৃদ্ধি, সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করতে গ্রাহকদের সঙ্গে কথোপকথন ও আচার-আচরণসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে গত ২৮ জানুয়ারি শুরু হয়েছে ‘টিভি সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার কারিগরি এবং সফট স্কিল প্রশিক্ষণ কর্মশালা-২০২৫’। ওয়ালটন ট্রেইনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং টিভি সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মশালা ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বিভিন্ন ব্যাচে চলবে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন প্রসঙ্গে ওয়ালটনের ট্রেইনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তা রওশন আলী বুলবুল বলেছেন, “টিভি সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের সুপ্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশব্যাপী গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
ওয়ালটনের টিভি সার্ভিসের প্রধান ব্রজগোপাল কর্মকার জানিয়েছেন, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সকল পর্যায়ের সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যই প্রতি বছরের মতোই এ কর্মশালার আয়োজন। পাশাপাশি, সার্ভিস ইঞ্জিনিয়াররা যাতে সার্ভিস দিতে আরো পারদর্শী ও মেরামতের ব্যাপারে নিজে সচেতন হন এবং গ্রাহকদের ভালো সার্ভিস দিতে পারেন, সেজন্য এ উদ্যোগ।
প্রশিক্ষণ সম্পর্কে চিফ সার্ভিস অফিসার নিয়ামুল হক বলেছেন, “গ্রাহকসন্তুষ্টিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সার্ভিস দিতে আমাদের এ কার্যক্রম বছরব্যাপী চলবে।”
প্রশিক্ষণ কর্মশালা সম্পর্কে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেছেন, “ওয়ালটন শুধু পণ্য বিক্রয়ই করে না, গ্রাহকদের দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রাহকদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উন্নত সেবা দিতেই বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক দ্বারা ওয়ালটন সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেওয়ার এ উদ্যোগ। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা ও সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।”
গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টির জন্য তিন দিনের মধ্যে সার্ভিস সম্পন্ন করার লক্ষ্যে টিভি সার্ভিস সেকশন কাজ করছে। এ কর্মশালায় সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তা গ্রাহকসন্তুষ্টি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র হকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
তাণ্ডব হচ্ছে ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট
তান্ডব সিনেমা কি সত্যিই তান্ডব বইছে নাকি অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই না? সবই মিডিয়ার হাইপ? মোটাদাগে তান্ডবের প্রধান দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, প্রতিশোধ নিতে একদল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের জিম্মি করে স্বাধীনে টিম (শাকিব)। জিম্মিদের সাথে আলোচনা হবে টিভি লাইভে, যেনো দেশবাসী সরাসরি জানতে পারে। কেনো জিম্মি করলো, শুরু হয় শাকিবের গ্রামের গল্প। প্রেম ভালোবাসা, পাওয়া না পাওয়া, আশা-নিরাশা- হতাশার গল্প পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। এর মাঝে উঠে আসে, বেকারত্ব, মামা-চাচার জোর না থাকলে চাকরি না পাওয়ার চিত্র। এই সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনীতিবীদ, প্রশাসন, টিভি চ্যানেল ও বড় ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধাবাদিশ্রেনি সিন্ডিকেট করে সব কিছু নিজেদের দখলে রাখে, বঞ্চিত হয় দেশের সাধারণ মানুষ। এই হল তাণ্ডবের গল্প। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়, এখান থেকে শুরু মাত্র।
সিনেমার শেষের দিকে একবার মনে হতে পারে গল্প শেষ, কিন্তু নিশোর আগমন বাড়তি টুইস্ট যোগ করে। তান্ডবের সিক্যুয়ালে শাকিব, নিশোর লড়াই বেশ জমজমাট হবে, এমন ইংগিত দেওয়া হয়েছে এতে। গল্পে সাবিলা নূরের ট্রাজেডি খুব একটা যুক্ত সঙ্গত ছিল না। পরিণতি ভিন্ন হতে পারতো। গল্পে ইমপেক্ট পড়ে নাই সিয়ামের ক্যামিও চরিত্র। তবে সিনেমা তার চরিত্রে সিয়াম অসাধারণ অভিনয় করেছে। অনেক তারকার ভীড়ে তান্ডবের সব আলো কেড়ে নিয়ে একাই জ্বলজ্বল করছেন শাকিব খান।
চেনা চেনা লাগে: ক্রাইম থ্রিলার জনরার সিনেমা তাণ্ডব। গল্পে থ্রিল আছে তবে ইউনিক না। থ্রিলগুলো খানিকটা ধার করা বলা যায়। কারো কারো মনে হতে পারে, বহু সিনেমার বহু দৃশ্যের সুষম মিশ্রণ। দৃশ্যটি দেখলে, চরিত্রের ডিটেইলটা চেনা চেনা লাগতে পারে। বিশেষ করে গল্পের শুরুতে সবাই মুখোশ পড়ে আসে। এটি বহুল প্রচারিত দৃশ্য কিন্তু ভালো লাগবে। গল্পে শাকিব খান মুখোশ পড়ে যে ভাবে হাত দিয়ে উড়ার মতো করে আসে, এই দৃশ্যও দর্শকদের আনন্দিত করেছে, সিনেমা হলে উল্লাস করেছে। তবে গল্পাংশ, চরিত্রায়ণ যেখান থেকেই মিল থাকুক না কেনো, সব মিলিয়ে সিনেমাটি দেখতে দারুণ লাগবে।
গান: তিনটি গানের মধ্যে “লিচুর বাগান” গানটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গানের বিশেষ দিক হলো, বাংলা লোকগানের আধুনিক মিউজিক আয়োজন। এটা দারুণ ব্যাপার। তবে এই ধরণের গান কোক স্টুডিও বাংলায় বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না এই গান। যদিও গানটি মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট খুব ভালো ছিল। একটি টাইটেল ট্রাক ছিল, সেই গানের শব্দগুলো বুঝতে সমস্যা হয়েছে। রোমান্টিক গানটা শ্রুতিমধুর ছিল।
অভিনয় ও চরিত্রায়ণ: শাকিব খান দারুণ অভিনয় করেছেন। একটা গ্রামের ছেলে আরেকটা গ্যাংস্টার। দুইটা কন্ঠ দুই রকম ছিল। বডি ল্যাগুয়েজ, হাঁটা চলা, কথা বলার ধরণে ভিন্নতা ছিল। গ্যাংস্টারে খষখষে কন্ঠ হওয়াতে চরিত্রের মধ্যে ডায়মেনশন এসেছে। শাকিব দিন দিন অভিনয়ে গড হয়ে উঠছে যেনো। সাবিলা নূর এই চরিত্রের জন্য খুবই মানানসই। এক ঝাঁক তারকা অভিনয় করেছে সিনেমাটিতে। সবাই চরিত্র অনুযায়ী ভালো অভিনয় করেছেন। তবে আলাদা করে বলতে হয় জয়া আহসানের কথা। জয়া ঠিকই নিজের চরিত্রে সেরাটা দিয়েছে, এবং তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কল্পনা করার সুযোগ ছিল না। আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, নাঈম, সালাউদ্দীন লাভলু, ফজলুর রহমান বাবু, সাইফুল জার্নাল, রোজী সিদ্দিকী নিজ নিজ চরিত্রে দারুণ। যদিও কারো কারো চরিত্র প্রস্ফুটিত হয়নি ঠিক মতো।
সেট, লাইট, কস্টিউম: তান্ডবের সেট লাইট দারুণ। দৃশ্যে আয়োজন, আলোর ব্যবহার খুবই মানানসই। টিভি চ্যানেলের সেট বিশ্বাসযোগ্য ছিল। চরিত্রানুযায়ী পোশাক ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে শাকিব, জয়া, সাবিলার পোশাক সুন্দর লেগেছে। অন্যান্য চরিত্রের পোশাকও ছিল দারুণ।
আবহ সঙ্গীত, সংলাপ: সংলাপ দারুণ। কিছু কিছু গালি দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। গল্পের সাথে গালিগুলো যথাযথ ভাবেই মানিয়ে গেছে, তাই অশ্লীল লাগে নাই। আবহ সঙ্গীত মনে দাগ না কাটলেও খারাপ লাগে নাই। গল্পের মুড বুঝেই আবহ সঙ্গীত এগিয়ে গেছে। সংলাপে যখন দেশের কথা বলে, তখন বুকিশ লাগে নাই, শুনতে ভালো লেগেছে।
নির্মাণ: আধুনিক নির্মাণের সকল বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। শট ডিজাইন, ট্যাকিং, ক্লোজ আপের ব্যবহারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে পরিচালক। মুভমেন্ট শটগুলো গল্পকে গতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। জনবহুল বড় বড় দৃশ্যগুলো ঠিকঠাক তুলে আনা গেছে।
সবশেষে: তাণ্ডব একটি গ্যাংস্টার মুভি। কতগুলো অসৎ লোকের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই ধরণের মুভি গরম গরম দেখতে ভালো লাগে, বিনোদন পাওয়া যায়, সমাজ বাস্তবতার সাথে মিল পাওয়া যায় কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কোন ইমপেক্ট পড়ে না। শেষ কথা হলো, কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলা সিনেমা সোনালী অতীত পেরিয়ে এখন ডায়মন্ড যুগে প্রবেশ করেছে। তাণ্ডব হলো সেই ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট।
লেখক: লেখক ও নাট্যকার