কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত মার্কিন নৌ ঘাঁটির গুয়ানতানামো বে কারাগারটি ‘মার্কিন রাষ্ট্রের শত্রু’ ও ‘ভয়ঙ্কর অপরাধীদের’ কারাগার হিসেবে পরিচিত। এবার সেই কারাগারকে অবৈধ অভিবাসীদের বন্দিশালা হিসাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসির।

বুধবার ট্রাম্প জানান, গুয়ানতানামো বে কারাগারে যাতে হাজার ত্রিশেক অবৈধ অভিবাসীকে বন্দি রাখা যায়, সেজন্য সেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দপ্তরকে (ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) নির্দেশ দেবেন তিনি। এ ক্ষেত্রে ‘আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার’ যুক্তি দিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটিতে যে হাই-সিকিউরিটি সামরিক কারাগার রয়েছে, নতুন বন্দিশালাটি সেটি থেকে পৃথক হবে। এই বন্দিশালায় স্থান হবে সেই সব ‘জঘন্যতম’ অবৈধ অভিবাসীদের, যারা আমেরিকার জনগণের জন্য হুমকির কারণ।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষ, ১৮ মরদেহ উদ্ধার

৮ মাসের বেতন নিয়ে ফেডারেল কর্মীদেরকে পদত্যাগের প্রস্তাব ট্রাম্পের

বুধবার লেকেন রাইলি অ্যাক্টকে আইনে রূপান্তরের জন্য স্বাক্ষর করার সময় ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। ওই আইনে চুরি বা সহিংস অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার অবৈধ অভিবাসীদের বিচারের জন্য কারাগারে রাখা বিধান রাখা হয়েছে।

হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুমে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, গুয়ানতানামোর নতুন নির্বাহী আদেশে প্রতিরক্ষা ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে ৩০ হাজার শয্যার এ স্থাপনার ‘প্রস্তুতি শুরু করতে’ নির্দেশ দেওয়া হবে।

ট্রাম্পের দাবি, “তাদের (অভিবাসীদের) মধ্যে কিছু এতটাই খারাপ যে, তাদের ধরে রাখার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকেও বিশ্বাস করি না, কারণ আমরা চাই না তারা ফিরে আসুক। তাই আমরা তাদের গুয়ানতানামোতে পাঠাতে যাচ্ছি। সেখান থেকে বের হওয়া খুব কঠিন ব্যাপার।”

ট্রাম্পের নির্দেশনা অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসীদের জন্য গুয়ানাতানামোর ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ করা হবে।

ট্রাম্পের ‘বর্ডার সিজার’ টম হোম্যান বুধবার বলেছেন, সেখানে বর্তমানে যে স্থাপনা সুবিধা রয়েছে তা বর্ধিত করা হবে। আর তা পরিচালনা করবে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।

তিনি বলেন, সাগরে মার্কিন কোস্ট গার্ডের হাতে অভিবাসী ধরা পড়ার পর তাদের সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে এবং ওই বন্দিশালায় ‘সর্বোচ্চ’ মান নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে, কিউবা সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনা সম্প্রসারণের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে গুয়ানাতানামো বেকে ‘দখল’ করে রাখা হয়েছে। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রো ক্ষমতায় আসার পর থেকে দ্বীপটিতে মার্কিন নৌঘাঁটির অস্তিত্ব নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করে আসছে কিউবা।

কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল বারমুদেজ এক্স পোস্টে বলেছেন, “নৃশংসতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার ঘোষণা দিয়েছে- তারা অবৈধভাবে দখল করা কিউবার ভূখণ্ডে অবস্থিত গুয়ানতানামো নৌঘাঁটির যে কারাগার নির্যাতন ও অবৈধ আটকের জন্য পরিচিত, তার কাছে জোর করে বিতাড়িত হাজার হাজার অভিবাসীকে রাখবে।”

কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেজ বলেছেন, এই ঘোষণা ‘মানবিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞার’ বহিঃপ্রকাশ।

বিবিসি জানিয়েছে, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার ঘটনায় গুয়েনতানামো বে কারাগার তৈরি করা হয়েছিল। মূলত সন্ত্রাসীদের জন্য তৈরি এই কারাগারে বহু মানুষকে বিনা বিচারে আটক করে রাখা হয়েছিল বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ। তখন থেকেই এই কারাগারি নিয়ে নানা বিতর্ক। কারাগারের ভিতর নিপীড়নের বহু কাহিনি আছে।

বারাক ওবামা জানিয়েছিলেন, ধীরে ধীরে এই কারাগার বন্ধ করে দেওয়া হবে। ক্ষমতা ছাড়ার আগে জো বাইডেন বেশ কিছু ব্যক্তিকে এই কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছেন, এক যুগ কেটে গেলেও যাদের কোনো বিচার হয়নি। সেই কারাগারেই অবৈধ অভিবাসীদের রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার সময়, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর, যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

ফক্স নিউজ বিভিন্ন আইসিই ফিল্ড অফিসের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, কেবল রবিবারেই ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) প্রায় এক হাজার জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চলছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন দ শ ল র জন য ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ