৩০ হাজার অভিবাসীকে গুয়ানতানামো বে কারাগারে রাখার সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের
Published: 30th, January 2025 GMT
কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত মার্কিন নৌ ঘাঁটির গুয়ানতানামো বে কারাগারটি ‘মার্কিন রাষ্ট্রের শত্রু’ ও ‘ভয়ঙ্কর অপরাধীদের’ কারাগার হিসেবে পরিচিত। এবার সেই কারাগারকে অবৈধ অভিবাসীদের বন্দিশালা হিসাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসির।
বুধবার ট্রাম্প জানান, গুয়ানতানামো বে কারাগারে যাতে হাজার ত্রিশেক অবৈধ অভিবাসীকে বন্দি রাখা যায়, সেজন্য সেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দপ্তরকে (ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) নির্দেশ দেবেন তিনি। এ ক্ষেত্রে ‘আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার’ যুক্তি দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটিতে যে হাই-সিকিউরিটি সামরিক কারাগার রয়েছে, নতুন বন্দিশালাটি সেটি থেকে পৃথক হবে। এই বন্দিশালায় স্থান হবে সেই সব ‘জঘন্যতম’ অবৈধ অভিবাসীদের, যারা আমেরিকার জনগণের জন্য হুমকির কারণ।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষ, ১৮ মরদেহ উদ্ধার
৮ মাসের বেতন নিয়ে ফেডারেল কর্মীদেরকে পদত্যাগের প্রস্তাব ট্রাম্পের
বুধবার লেকেন রাইলি অ্যাক্টকে আইনে রূপান্তরের জন্য স্বাক্ষর করার সময় ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। ওই আইনে চুরি বা সহিংস অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার অবৈধ অভিবাসীদের বিচারের জন্য কারাগারে রাখা বিধান রাখা হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুমে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, গুয়ানতানামোর নতুন নির্বাহী আদেশে প্রতিরক্ষা ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে ৩০ হাজার শয্যার এ স্থাপনার ‘প্রস্তুতি শুরু করতে’ নির্দেশ দেওয়া হবে।
ট্রাম্পের দাবি, “তাদের (অভিবাসীদের) মধ্যে কিছু এতটাই খারাপ যে, তাদের ধরে রাখার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকেও বিশ্বাস করি না, কারণ আমরা চাই না তারা ফিরে আসুক। তাই আমরা তাদের গুয়ানতানামোতে পাঠাতে যাচ্ছি। সেখান থেকে বের হওয়া খুব কঠিন ব্যাপার।”
ট্রাম্পের নির্দেশনা অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসীদের জন্য গুয়ানাতানামোর ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ করা হবে।
ট্রাম্পের ‘বর্ডার সিজার’ টম হোম্যান বুধবার বলেছেন, সেখানে বর্তমানে যে স্থাপনা সুবিধা রয়েছে তা বর্ধিত করা হবে। আর তা পরিচালনা করবে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।
তিনি বলেন, সাগরে মার্কিন কোস্ট গার্ডের হাতে অভিবাসী ধরা পড়ার পর তাদের সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে এবং ওই বন্দিশালায় ‘সর্বোচ্চ’ মান নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে, কিউবা সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনা সম্প্রসারণের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে গুয়ানাতানামো বেকে ‘দখল’ করে রাখা হয়েছে। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রো ক্ষমতায় আসার পর থেকে দ্বীপটিতে মার্কিন নৌঘাঁটির অস্তিত্ব নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করে আসছে কিউবা।
কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল বারমুদেজ এক্স পোস্টে বলেছেন, “নৃশংসতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার ঘোষণা দিয়েছে- তারা অবৈধভাবে দখল করা কিউবার ভূখণ্ডে অবস্থিত গুয়ানতানামো নৌঘাঁটির যে কারাগার নির্যাতন ও অবৈধ আটকের জন্য পরিচিত, তার কাছে জোর করে বিতাড়িত হাজার হাজার অভিবাসীকে রাখবে।”
কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেজ বলেছেন, এই ঘোষণা ‘মানবিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞার’ বহিঃপ্রকাশ।
বিবিসি জানিয়েছে, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার ঘটনায় গুয়েনতানামো বে কারাগার তৈরি করা হয়েছিল। মূলত সন্ত্রাসীদের জন্য তৈরি এই কারাগারে বহু মানুষকে বিনা বিচারে আটক করে রাখা হয়েছিল বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ। তখন থেকেই এই কারাগারি নিয়ে নানা বিতর্ক। কারাগারের ভিতর নিপীড়নের বহু কাহিনি আছে।
বারাক ওবামা জানিয়েছিলেন, ধীরে ধীরে এই কারাগার বন্ধ করে দেওয়া হবে। ক্ষমতা ছাড়ার আগে জো বাইডেন বেশ কিছু ব্যক্তিকে এই কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছেন, এক যুগ কেটে গেলেও যাদের কোনো বিচার হয়নি। সেই কারাগারেই অবৈধ অভিবাসীদের রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার সময়, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর, যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
ফক্স নিউজ বিভিন্ন আইসিই ফিল্ড অফিসের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, কেবল রবিবারেই ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) প্রায় এক হাজার জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চলছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন দ শ ল র জন য ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার
দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।
দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’
তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’
আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা