আমি এসব থেকে মুক্তি চাই: তারিক আনাম
Published: 30th, January 2025 GMT
উনি তো বাংলাদেশের অমিতাভ বচ্চন, শোবিজ অঙ্গনে এ বাক্যটি প্রায়ই শোনা যায় তাঁর সহকর্মীদের মুখে। কেবল অমিতাভদের মতো করে কাজে লাগানো হয়নি। তাঁকে কেন্দ্র করে গল্প ভাবলে, গল্পের মূল শক্তিতে যদি তাঁকে রাখা হয়, তাহলে দারুণ কিছু পেতে পারত ঢাকার সিনেমা কিংবা নাটকের ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু ক’জন ভাবে এটা। অধিকাংশের ভাবনায় কেবল ট্রেন্ডি কনটেন্ট। ভাইরাল শিল্পী। ফলে ঢাকার শোবিজে দাপুটে অভিনেতা হয়েও অমিতাভ কিংবা রজনীকান্তদের মতো প্রভাব নিয়ে পর্দায় হাজির হতে পারছেন না। তিনি তারিক আনাম খান।
ব্যক্তিজীবনে যিনি সৌম্য, শান্ত, ধীরস্থির প্রকৃতির একজন মানুষ। অভিনয়ে প্রথাগত নন। আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য নিয়েই চলমান। তারিক আনামের সঙ্গে যারা মেশেন বা যারা তাঁকে জানেন তারা কায়মনোবাক্যে স্বীকার করবেন তিনি বলেন কম, শোনেন বেশি। শোঅফ কম, করেন বেশি।
সদা গম্ভীর প্রকৃতির একজন মানুষ হয়েও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রায় প্রতিটি অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন নিজের অভিনয় সৌকর্য ও সাংগঠনিক দূরদর্শিতা দিয়ে। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে মঞ্চের আলোয় আলোকিত তিনি। গ্রুপ থিয়েটারের অন্যতম দল নাট্যকেন্দ্রের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠলেও নিজের ভেতর বিন্দুমাত্র অহমিকা নেই। নেই ‘অনেক কিছু করেছি টাইপ’ দৃষ্টিভঙ্গি।
নতুন বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল তারেক আনাম খান অভিনীত ‘মেকআপ’ সিনেমাটি। বহু আগে শুটিং হওয়া এ সিনেমাটি বারবার সেন্সর বোর্ডের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল। মূলত দেশের শোবিজ অঙ্গনের খুঁটিনাটি বিষয় ও সম্পর্কের বিষয়গুলো চিত্রায়ণ করায় এই নিষেধাজ্ঞা। এই সিনেমায় একজন সুপারস্টার নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তারিক আনাম খান। সিনেমাটি ব্যবসা করতে পারেনি। পারছে আলোচনায় আসতে। যেটা পেরেছে সেটা তারিক আনাম খানকে নতুন করে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে। যে তারিক আনাম খানদের এই সময়ের নির্মাতারা এড়িয়ে চলেন, কিংবা শুধু বাবার চরিত্রের জন্যই কাস্ট করেন, তাদের নতুন করে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছেন। এই ছবিতে তারিক আনাম খান সত্যি সত্যিই দেখিয়েছেন বয়স একটা সংখ্যামাত্র। তাঁকে নিয়ে বহুমাত্রিক চিন্তা করার সময় এখন। তবে সেই চিন্তা কতটা প্রসারিত হবে, তা অজানা। যদিও অভিনেতা অনেকটা কৌতুকের সুরেই বিষয়টি সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বলেন, এখন তো সব সিনেমায় বাবা চরিত্রেই অভিনয় করছি। আমি তো জাতীয় বাবা হয়ে গেছি। এর থেকে মুক্তি চাই।’
তাঁর মতে, সিনিয়র শিল্পীদের চরিত্র নিয়ে নির্মাতাদের আলাদা করে ভাবা উচিত। যেখানে বলিউডে সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে আলাদা গল্প বলা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে এটা হয় কী? আমাদের নিয়ে নতুন নতুন ভাবনার গল্প তৈরির লোক কই? কথাগুলো বলার সময় এক ধরনের আক্ষেপ ছিল বরেণ্য এই অভিনেতার। ছিল অতৃপ্তিও। তাই কথা বলতে বলতে ফিরে যাওয়া হয় অতীত স্মৃতিতে। যে স্মৃতি বর্ণিল, রঙ্গিন। যাকে সবাই সোনালি দিন বলেই সম্বোধন করেন। সেই সোনালি দিনগুলোর কথা কতটা মনে তারিক আনাম খানের? জানালেন, তিনি আসলে অতীত রোমন্থন করে তাতে মুগ্ধ থাকার মানুষ নন। বলেন, আমি অতীত মগ্ন মানুষ নই। স্মৃতি রোমন্থন করারও মানুষ নই। আমি মনে করি, বর্তমান সময়টাই সত্য।’
তারপরও অতীতের কাজের পদ্ধতি নিয়ে কথা বললেন এই অভিনেতা। কথা বলতে বলতেই উঠে এলো সব। বললেন, তখনকার সময়ের কথা যদি বলি তখন ভালো ছিল এই যে, স্ক্রিপটা নিয়ে নাট্যনির্দেশকরা অনেক আগে থেকে চিন্তাভাবনা করতেন। কমপক্ষে চারদিন নাটকের রিহার্সেল হতো। একটানা তিন ক্যামেরায় কাজ হতো, আর্টিস্ট অংশগ্রহণ করত। আমি এখন যদি এই একই ঢঙে নাটক নির্মাণ করি, তাহলে দর্শক গ্রহণ নাও করতে পারে। ওই সময় এবং এ সময়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ যদি করি, দেখা যাবে তখন সিরিয়াসনেসটা বেশি ছিল। হোমওয়ার্ক বেশি হতো। কোয়ালিটিও ছিল এবং ভালো কাজের যথেষ্ট সুযোগও ছিল। কোয়ালিটি কিন্তু আপেক্ষিক বিষয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’