আড়াইহাজারে হত্যা মামলা তুলে নিতে হুমকি, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বাদী
Published: 30th, January 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্কুলছাত্র আইয়ুব আলী (১৫) হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বাদী নিহতের মা-আয়েশা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রাননাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নিহতের পরিবারের স্বজনরা।
গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাত ১০ টায় উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ইজারকান্দি গ্রামে ঘটে এ ঘটনা।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আয়েশা। এতে তিনি নিজের ও তার বড় ছেলে নবীর হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার তিনি মেয়ে আদুরী বেগমকে নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তাঁর অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িতে আসেন তাঁর বড় ছেলে নবী হোসেন।
খবর পেয়ে ইজারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মামলার অন্যতম আসামি রাসেল মিয়া, জুয়েল মিয়া, শরীফ হোসেন, আল আমিন, আলমগীর হোসেন, ইয়াছিন মিয়া, আবু হানিফা ও অজ্ঞাতপরিচয় ৪-৫ জন রাত ১০টার দিকে তাদের বাড়িতে আসে। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে নবী হোসেন পেছনের দরজা দিয়ে কোনোরকমে পালিয়ে যায়।
কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসা আসামিরা দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে। তারা নবী হোসেনের খোঁজে বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে হামলাকারীদের একজন আয়েশাকে বলে, তোর এক ছেলেরে যেমনে খুন করছি, আরেক ছেলেরেও (নবী হোসেন) এমনেই খুন করমু।
এমনকি বাড়ির সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়। পাশাপাশি এই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্যও শাসিয়ে যায় আসামিরা।
সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে জানা যায়, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত আয়েশা বেগমের ছোট ছেলে নিহত আইয়ুব আলী। ইজারকান্দি গ্রামের আলোর সেতু পাঠাগারের দেখ বালের দায়িত্বে ছিল সে।
২০২০ সালের ২৭ মে ইজারকান্দি গ্রামের রাসেল,শাহজাহানসহ কয়েকজন মিলে আলোর সেতু পাঠাগার এলাকায় জুয়া খেলার আসর জমায়। এতে বাধা দেন পাঠাগারের দেখ বালের দায়িত্বে থাকা আইয়ুবআলী। এ নিয়ে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়।
এদিন সন্ধ্যায় ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাদ্দাম হোসেন তার দলবল নিয়ে স্থানীয় আব্দুল হকের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হকের পক্ষ পাল্টা আক্রমণ চালালে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় সাদ্দামের পক্ষের ছোড়া গুলিতে নিহত হন স্কুলছাত্র আইয়ুব আলী।
আইয়ুব আলী হত্যার পরদিন আড়াইহাজার থানায় মামলা করেন আয়েশা। এতে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটির প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন এখন সৌদি আরবে পলাতক।
ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গেলে এ প্রতিবেদকের কাছে নিহতের পরিবারের স্বজনরা নানা শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান।
বর্তমানে হত্যা মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় রয়েছেন। এরপর থেকেই হত্যা মামলার মাস্টারমাইন্ড সাদ্দাম হোসেন ও রাসেলের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন আসামি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নিহতের বড় ভাই, বোন ও তাদের মাকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
এমনকি তার পাশাপাশি নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে আসামি পক্ষের লোকজন। এ কারণে মামলার বাদী ও তার পরিবারের লোকজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
নিহত আইয়ুব আলীর বৃদ্ধা মা আয়েশে বেগম (৫৮) এখনো শোকে কাতর। ছেলে হারানোর সেই করুণ আর্তনাদ আজও শেষ হয়নি। মরার আগে ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে যেতে চান তিনি।
নিহত আইয়ুব আলীর বড় ভাই নবীর হোসেন বলেন, আসামি সাদ্দাম ও রাসেলের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের নানা রকম হুমকি দিয়ে আসছে।
তাদের ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এখন আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছি। দ্রুত বিচার আইনে ভাই হত্যার বিচার চাই।
আইয়ুব আলীর বোন আদুরী বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথে আসামিরা আমাকেও বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখান।
নিহতের পরিবারকে হুমকি ব্যাপারে হত্যা মামলার আসামি রাসেল, জুয়েল, শরীফ এর বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছে, হামলাকারীদের সবাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাদ্দাম হোসেনের সহযোগী। সাদ্দাম সৌদি আরব থাকলেও তার এই সহযোগীরা এখনও এলাকায় নানা অপকর্মে জড়িত।
এ বিষয়ে আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন বলেন, হত্যা মামলার বাদীকে আসামিরা হত্যার হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ত র পর ব র র র পর ব র র স
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।