দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মামলায় সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান ও ঢাকা উত্তরার বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শাহীনুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ মো. নজরুল ইসলাম অভিযোগপত্র পর্যালোচনা শেষে এ আদেশ দেন।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দিলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আসামি ডা.

তৌহিদুর রহমান সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের মৃত তফছির উদ্দিনের ছেলে। অপর আসামি মো. শাহীনুর রহমান মাগুরা জেলা সদরের কাদিরাবাদ গ্রামের একেএম ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে।

আরো পড়ুন:

সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নড়াইলে গ্রাম আদালতে ৬৪১ মামলা নিষ্পত্তি

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটি করেন। 

মামলার বিবরণে জানা যায়, অনুমোদন ছাড়াই বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ব্যতীত সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট ও হেলথ টেকনোলজিতে (নলতা) ইকুইপমেন্ট সামগ্রী, আসবাবপত্র , বইপত্র সাময়িকী ও খেলাধুলার সামগ্রী কেনার জন্য ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও জনশক্তি উন্নয়ন শাখার পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান তৎকালীন সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ও সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট ও হেলথ টেকনোলজির সাবেক অধ্যক্ষ ডা. তৌহিদুর রহমান। অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন ব্যতীত নলতা আইএইচটিতে চাহিদা বরাদ্দ পাওয়ার আগেই খেলাধুলা সামগ্রীসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য বিধি বহির্ভূতভাবে বাজারদর কমিটি, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ও সার্ভে কমিটি গঠন করে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করেন ডা. তৌহিদুর রহমান। 

২০১৮ সালের ১৫ মে ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান ঢাকার উত্তরার বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজকে ১০টি ফুটবল, ২৫টি ক্রিকেট ব্যাট, ২১টি ক্রিকেট বল, ২০টি ক্রিকেট প্যাড, ১১টি ক্রিকেট হেলমেট, ১০টি ক্রিকেট গ্লাভস, ১৫টি ক্রিকেট স্টাম্প, পাঁচটি ২০ কেজি ওজন সেট, পাঁচটি ৫ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ৪ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ৩ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ১৪ কেজি ডাম্বেল, একটি ট্রিসেফ বার, ৫৬ পিস মাল্টি জাম, পাঁচটি চায়না আপ মেশিন, পাঁচটি ট্রেড মিল, চারটি সিট আপ বেঞ্চ, ছয়টি টিটি বোর্ড, ১০টি বাস্কেট বল, ১০টি ব্যাডমিন্টন সেট, পাঁচটি দাবা সেট, ১৫টি হ্যান্ডবল, ১০টি ভলিবল, ক্লাইন চেষ্ট প্রেস-এর চারটি স্মিথ মেশিন, কেবল ওয়ারের ২০টি লাফ দড়ি, পাঁচটি হ্যামার স্ট্রেনথ, পাঁচটি ইলেকট্রিকাল ট্রেনার এক্সসারসাইজ বাইক ও পাঁচটি ৫৬ ইঞ্চি ক্যারাম বোর্ড সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করেন।

পরবর্তীতে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজ ২০১৮ সালের ২৪ মে মালামাল সরবরাহ করে ওই বছরের ১০ জুন ৫০ লাখ টাকার বিল দাখিল করে। ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহীনুর রহমানকে ২০১৮ সালের ১০ জুন বিল পাশ করে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস বরাবর পাঠান। সে অনুযায়ী, হিসাবরক্ষণ অফিস সরকারি কর্তণ বাদে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ২০১৮ সালের ১৪ জুন ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক ইস্যু করে। পরে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহীনুর রহমান টাকা তুলে নেন।

অভিযোগ অনুসন্ধানকালে কেনা ক্রীড়া সামগ্রীর সঠিক মূল্য একটি টিমের মাধ্যমে যাচাই করার জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ক্রীড়া অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিচালককে অনুরোধ করে। ২৬ সেপ্টেম্বর নলতা আইএইচটি ও ম্যাটস এর কেনা ক্রীড়া সামগ্রীর মূল্য নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুদকের তদন্তকারী টিম ১০ অক্টোবর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের সরবরাহকৃত ক্রীড়া সামগ্রীর মূল্য ২৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫০ টাকা। প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ৫ লাখ ৫০ হাচার টাকা কেটে নিয়ে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এক্ষেত্রে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজকে ২০ লাখ ৬১ হাজার ৬৫০ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান ও মো. শাহীনুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে ২০ লাখ ৬১ হাজার ৬৫০ টাকা আত্মসাৎ করে অপরাধ করেছেন। 

আদালতে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দিলু বলেন, “গত ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমানের দায়েরকৃত অভিযোগপত্রটি পর্যালোচনা শেষে বিচারক মো. নজরুল ইসলাম অভিযুক্ত দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়ে ১৬ মার্চ শুনানির ধার্য দিন নির্ধারণ করে দেন। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।”

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ হ ন র রহম ন ত হ দ র রহম ন দ র রহম ন র ২০১৮ স ল র পর য় ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘নতুন শুরুর আশায়’ মাগুরা টেক্সটাইল মিলসের পুরোনা মেশিন বিক্রি

মাগুরা টেক্সটাইল মিলসের পুরোনো মেশিনপত্র দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ হওয়া মাগুরা টেক্সটাইল মিলস পুনরায় চালুর উদ্যোগের অংশ হিসেবে এটি করা হচ্ছে বলে দাবি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি)। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি) মাধ্যমে কারখানাটি পুনরায় চালুর চেষ্টা করছে বিটিএমসি।

বিটিএমসির কর্মকর্তা ও কারখানা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বর্তমানে মিলে যেসব সরঞ্জাম আছে, সেগুলো অনেক পুরোনো মডেলের। প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো। এতে উৎপাদিত সুতার বাজারে চাহিদা কম। পুরোনো মেশিনের বিদ্যুৎ খরচও বেশি। এ কারণে মিলটি বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। নতুন বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে তাই পুরোনো মেশিন ও সরঞ্জাম দরপত্রের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

গত শনিবার মাগুরা টেক্সটাইল মিলসে গিয়ে দেখা গেছে, পুরোনো সরঞ্জাম ট্রাকে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বিটিএমসি ও কারখানা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের স্ক্র্যাপ মেশিনারিজ বিক্রির জন্য গত বছরের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় দরপত্র ডাকা হয়। ভ্যাট, আয়করসহ ৬ কোটি ২৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ‘মেক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সুযোগটি পায়। সে অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে মেশিনারিজ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

কারখানাটি নিয়ে প্রাথমিকভাবে ৩০ বছরের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি করতে চায় সরকার। কারখানা স্থাপন ও সংস্কারের জন্য সময় পাবেন বিনিয়োগকারী।

মাগুরা জেলার একমাত্র এই ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। কারখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে মাগুরা পৌরসভার ভায়না এলাকায় মাগুরা-যশোর সড়কের পাশে ১৬ দশমিক ১৭ একর জায়গার ওপর কারখানাটি স্থাপিত হয়। কারখানাটি করতে ব্যয় হয়েছিল ৫১ কোটি ৪৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা। শুরুতে কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক মিলে জনবল ছিলেন ৯৮৩। কারখানাটি ১৯৮৫ সালে উৎপাদনে যায়। বিটিএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন সুতা তৈরির কারখানাটি শুরুতে ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু পরে সরকারি ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে মিলটি লোকসানে পড়ে। অব্যাহত লোকসানের মুখে ১৯৯৯ সালে কারখানাটি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। তখন শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানো হয়। এরপরও ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সার্ভিস চার্জের ভিত্তিতে কোনোরকমে কারখানাটি চালু ছিল।

সেটাও সফল না হওয়ায় ২০০৮ সালের ১৭ আগস্ট কারখানাটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৯ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৭ সালে কারখানাটি নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেয় বিটিএমসি। তারা দরপত্র ডাকে। দরপত্রে অংশ নিয়ে মেসার্স আলী ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। তবে দুই বছরের চুক্তি শেষের আগেই কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৮০-৮১ অর্থবছরে মাগুরা পৌরসভার ভায়না এলাকায় ১৬ দশমিক ১৭ একর জায়গার ওপর কারখানাটি স্থাপিত হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সর্বোচ্চ দরদাতা ইজারা পাননি, গাবতলী হাটে খাস আদায় করছেন ‘পছন্দের’ ব্যক্তিরা
  • এবার আগেভাগেই বই ছাপার কাজ শুরু হচ্ছে, ২০২৭ সাল থেকে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের চিন্তা
  • সাবেক এডিসি ইশতিয়াকের নির্যাতন নিয়ে অভিযোগ জমা দিলেন রাশেদ খান
  • অভিযোগের বিষয়ে এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি’র বক্তব্য 
  • এলএনজি আমদানি: ব্যয় হবে ১৬২০ কোটি ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা
  • ‘নতুন শুরুর আশায়’ মাগুরা টেক্সটাইল মিলসের পুরোনা মেশিন বিক্রি
  • দুর্নীতির মামলায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক সাময়িক বরখাস্ত
  • জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদ
  • সংস্কারের প্রশ্নে ব্যক্তি–দলের স্বার্থের চেয়ে দেশকে প্রাধান্য দিতে হবে: নুরুল হক
  • চাকরি ছেড়ে হয়েছিলেন হতাশাগ্রস্ত বেকার, এখন মাসে আয় ৯ লাখ টাকা