মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা গতকাল ৩১জানুয়ারি শুক্রবার শেষ হয়েছে। বিভিন্ন ছাড়ের অফারে রাত পর্যন্ত চলে কেনাবেচার ধুম। অধিকাংশ দোকানের পণ্য বিক্রি শেষ হয়ে যায়। ছাড়ে পণ্য কিনে ক্রেতারা আর পণ্য বিক্রিতে বিক্রেতারাও খুশি। 

পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের মাল্টিপারপাস হলে গতকাল শুক্রবার বিকেলে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুারো’র ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবদুর রহিম। 

এবারের বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৪৩টি দেশি-বিদেশি স্টল, মিনি প্যাভিলিয়ন ও প্যাভিলিয়ন অংশ নেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়ার ১১টি প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশগগ্রণ করেছে । 

মেলায় বিভিন্ন ধরণের কাপড়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, টয়লেট্রিজ, গৃহসজ্জা ও গৃহস্থালি সামগ্রী, ক্রোকারিজ, সৌন্দর্যবর্ধক সামগ্রী, ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী, হারবাল, ফার্নিচার, ইমিটেশনের গহনা, কসমেটিকস এ্যান্ড বিউটি এইডস, আইসক্রিমের স্টল, প্লাস্টিক সামগ্রী, সিরামিক, প্রেসার কুকার, রুটি মেকার, ফ্রাইপ্যান, বস্ত্র, ভেজিটেবল কাটার, স্পোর্টস গুডস, মেলামাইন, খেলনা, চামড়াজাত পণ্য, স্যানিটারীওয়্যার, খাদ্যপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্যসহ নানাবিধ পণ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া কয়েদিদের তৈরি কারাপণ্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় এমআরটিএফের প্যাভিলিয়ন, প্রতিবন্ধীদের তৈরি পণ্যের স্টল, সেনাকল্যাণ সংস্থার স্টল, তুরস্কের কার্পেটঘরের প্রতি ছিলো দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ। 

 সমাপনি অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, অর্থনীতির ব্যবহার, ভারসাম্য ও বিদেশী বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ করতে হবে। পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমাতে হবে। সকল ক্ষেত্রে স্বক্ষমতা বৃদ্ধি ও পণ্যের বৈচিত্রকরণ করতে হবে। শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়কদের নিয়ে এ মিলন মেলার আয়োজন করা হয়। স্বক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্যের উদ্ভাবন, ব্যয় কমাতে আরো চেষ্টা করতে হবে।

আগামীতে বাণিজ্য মেলা আরো দৃষ্টিনন্দন, সবুজায়ণ, সংস্কারকরণ, সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, পয়নিঃস্কাশনসহ সার্বিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। পণ্য বহুমুখী উৎপাদন ও বাজার সৃষ্টি করতে হবে। শিল্প বিপ্লব ঘটাতে হবে। রপ্তানি আয় আরো বাড়াতে হবে। হস্তশিল্পকে একটি গ্রাম একটি পণ্যে পরিণত করতে হবে। লক্ষ কারিগরকে তুলে আনতে হবে। উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।

রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো’র ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, কুড়িল থেকে বিআরটিসি বাসে ১৪/১৫ মিনিটে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা বাণিজ্যমেলায় আসতে পেরেছে। স্টল বরাদ্দ থেকে শুরু করে বাণিজ্য মেলার সকল কার্যক্রম স্বচ্ছতার মধ্যে সম্পূর্ন হয়েছে। ই-টিকিটিং ছিলো এবার ব্যতিক্রম। ৫১টি প্রতিষ্ঠানকে পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবদুর রহিম বলেন, পণ্যের প্রসার ঘটাতে এ মেলার আয়োজন। পণ্য রপ্তানি ও বহুমুখীকরণ করতে হবে। তবেই মেলার আয়োজন সার্থক হবে। 

এফবিসিসিআই’র প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, মেলার পারিপাশির্^ক, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রসাশনিক ব্যবস্থা ছিলো সন্তেুাষজনক। 

মেলায় সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে জাতীয় সংসদ ভবন খেজুর বাগান এলাকা থেকে, কুড়িল বিশ্বরোড, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ১০০ থেকে ১৫০টি বিআরটিসি ডেডিকেটেড শাটল বাস নিয়মিত মেলার দর্শনার্থীদের আনা-নেয়ায় নিয়োজিত ছিলো। পার্কিং এর সুফল উপভোগ করেছে মেলার দর্শনার্থীরা।

মেলায় ব্যাংকিং, বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, রক্তদান সেবা, নামাজের স্থান, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক ও শোভন চেয়ার/বেঞ্চ সুবিধা ছিলো। শিশুদের সেবা প্রদান ও চিত্ত-বিনোদনের জন্য স্থাপন করা হয় মা ও শিশু কেন্দ্র এবং শিশুপার্ক।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) সচিব বিবেক সরকার বলেন, ৩শ’ ফুট সড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ায় এখন আর বাণিজ্যমেলা ঢাকা থেকে দূরে নয়। প্রাকৃতিক ও মনোরম পরিবেশ থাকায় এবারের বাণিজ্যমেলা বিপুল সংখ্যক ক্রেতা ও দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। মেলার আয়োজন সার্থক হয়েছে। সফল হয়েছে ব্যবসায়ীরাও। পরে বিজয়ীদের মধ্যে সম্মাননা পদক বিরতত করা হয়। 

সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫১টি প্রতিষ্ঠানকে সেরা প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, স্টল ও প্রতিষ্ঠানকে ট্রফি প্রদানের মাধ্যমে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। প্রথম পুরস্কার ট্রফি বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২২টি সেরা প্যাভিলিয়ন ও স্টলে প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয় পুরস্কার ট্রফি বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৬টি স্টল ও প্যাভিলিয়নকে ও তৃতীয় পুরস্কার ট্রফি বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৩টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলকে প্রদান করা হয়েছে।

সেরা প্যাভিলিয়ন হিসাবে প্রথম পুরষ্কার অর্জন করেন যমুনা ইলেকট্রনিক্স ও অটো মোবাইল লিমিটেড। প্যাভিলিয়নের পক্ষে পুরষ্কার গ্রহন করেন যমুনা ইলেকট্রনিক্সের পরিচালক (মার্কেটিং) সেলিম উল্লাহ সেলিম, সেলস মার্কেটিং মেজবাহ উদ্দিন আতিক ও হেড অফ সার্ভিস রাজিব সাহা।

উল্লেখ্য গত ১জানুয়ারি পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা -২০২৫ এর উদ্বোধন করেন অর্র্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মোহাম্মদ ইউনুস।

দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ণ ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজন করা হচ্ছে।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ