জটিলতা, জমির অপচয় রোধ এবং প্রকল্প ব্যয় কমাতে সড়ক, রেল, নৌ এবং বিমানকে একীভূত করে একটি মন্ত্রণালয় গঠনের সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স। দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে এ প্রস্তাবে। ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তর দীর্ঘ সময়ে সম্ভব না হওয়ায় শক্তিশালী নগর সরকারের সুপারিশ করা হয়েছে এতে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির এ সরকারের অধীনে থাকবে সরকারের সব সেবা সংস্থা।

প্রকল্পের জন্য বিদেশি ঋণের শর্তে সতর্ক করা হয়েছে। যমুনা রেল সেতুর উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, সেখানে সম্ভাব্যতা  সমীক্ষা, নকশা, ঠিকাদারি এবং পরামর্শক সেবাসহ সব কাজ ঋণদাতা জাপান করছে। এতে স্বার্থের সংঘাত হয়। ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ সেবা এবং পণ্য সেই দেশ থেকে কিনতে হয়। ঠিকাদারও হতে হয় ভারতীয়। এতে প্রকল্প জটিলতা বাড়ে। 
ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্য দেশের মতো ‘অবকাঠামো বন্ড’র মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের দামের করারোপ, গাড়ির নিবন্ধনসহ অন্যান্য ফি এবং টোল থেকে ‘রোড ফান্ড’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর গঠিত টাস্কফোর্স। স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নে পৃথক সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্পের গড়বড় শুধু হয় সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা থেকেই। সমীক্ষা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। আবার সমীক্ষার নামেই হয় দুর্নীতি। যেমন ঢাকা-চট্টগ্রামে দ্রুতগতির রেলপথ, রাজধানীতে পাতাল রেল নির্মাণের সমীক্ষার টাকা জলে গেছে। আবার প্রকল্পকে বাস্তবায়নযোগ্য লাভজনক দেখাতে থাকে অতিরঞ্জিত তথ্য। যেমন পদ্মা রেল সংযোগ থেকে বছরে এক হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা আয় হবে বলে দেখানো হলেও চালুর পর ছয় মাসে মাত্র আয় ৩৭ কোটি হয়েছে। সরকারকে প্রকল্প অনুমোদনে উদ্বুদ্ধ করতে শুরুতে ব্যয় কমিয়ে দেখানোরও চর্চা রয়েছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের মতো বড় প্রকল্প হলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ না হওয়া এবং উচ্চ ব্যয়ের কারণে সমালোচনা রয়েছে। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল বৈদেশিক ঋণের বোঝা দেশের ঘাড়ে চেপেছে আওয়ামী লীগ শাসনামালে। শেখ হাসিনার পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার অপচয়, উচ্চ ব্যয়, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের ধারা থেকে বের হওয়ার পথ দেখাতে ১২ সদস্যের অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স গঠন করে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে ‘অবকাঠামো এবং সংযোগ: অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি পথ’ শীর্ষক অংশটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক।

এতে বলা হয়েছে, সমন্বিত উন্নয়নের পরিবর্তে সড়ক খাত গুরুত্ব পাওয়ায় রেল ও নৌপথের গুরুত্ব কমেছে। ১৯৭৫ সালে পণ্য পরিবহনের ৩৭ ভাগ নৌপথে এবং ২৮ ভাগ রেলে হতো। ২০১৯ সালে তা কমে হয়েছে যথাক্রমে ৭ এবং ১৬ শতাংশ।
যোগাযোগ খাত ভাগ করাকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, যোগাযোগ থেকে আলাদা হয়ে রেল ২০১২ সালে হয় পৃথক মন্ত্রণালয়। বৃহৎ সেতুর জন্য সড়ক থেকে আলাদা করে ১৯৮৫ সালে সেতু বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা পরিবহন খাতে অবনতির অন্যতম কারণ।

উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। যেমন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রেলওয়েকে কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে জমি দিচ্ছে না। ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনকে মাল্টিমোডাল হাবে রূপান্তরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) জমি দিচ্ছে না। একই অবস্থা কমলাপুরে। সেখানে সেতু বিভাগের উড়াল সড়ককে জমি দিচ্ছে না রেলওয়ে।

বাংলাদেশে জমির সংকট ভয়াবহ এবং ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকলেও সরকারি সংস্থাগুলো তা আমলে নিচ্ছে না। সমন্বয়হীনতায় একই এলাকায় একাধিক সংস্থা জমি অধিগ্রহণ করছে। এতে মূল্যবান কৃষিজমি কমছে। যদিও কাগজে-কলমে খাদ্য নিরাপত্তা সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সওজ এবং পদ্মা রেল সংযোগের জন্য রেল পৃথকভাবে পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ করেছে। অথচ একই পথে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল।

৮৪টি দেশের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ভারত বাদে অন্যান্য দেশে সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান নিয়ে একটি মন্ত্রণালয়। যেমন চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় সড়ক, রেলসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যম একটি কর্তৃপক্ষের অধীন। ভারতের নাগপুরের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, সেখানে একটি পিলারে নির্মিত হয়েছে ফ্লাইওভার এবং তৃতীয় তলায় রয়েছে মেট্রোরেল। সবার নিচে সড়ক। বাংলাদেশে সমন্বয় না থাকায় ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল পৃথক সংস্থা পৃথকভাবে করে। এতে বাড়তি টাকা ব্যয় ও জমি নষ্ট হয়।

স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কারের সুপারিশে বলা হয়েছে, জবাবদিহি নিশ্চিতে সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষের (বিপিপিএ) তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সমীক্ষা করানো যাবে না। পরিকল্পনা কমিশন সমীক্ষার তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত রাখবে। সমীক্ষা অবশ্যই স্বতন্ত্রভাবে যাচাই হতে হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রকল্প অনুমোদন থেকে কাজ শুরু হতে ৩ বছর পর্যন্ত লাগে। তখন বাজারদর প্রকল্প অনুমোদনের সময়ের চেয়ে বেড়ে ব্যয় বাড়ে। আবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধনের পদ্ধতিতে কঠোর হওয়া বাড়তি সময় লেগে ব্যয় বাড়ে। তা সহজ করার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি ব্যয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, উচ্চমূল্যকে চিহ্নিত করেছে টাস্কফোর্স। জমি অধিগ্রহণ কমাতে মাল্টিমোডাল পদ্ধতিতে উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ৩০ ফুট চওড়া সড়ক নির্মাণে ১৬৫ ফুট প্রশস্ত জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। উড়াল সড়ক হলে বা অন্যান্য দেশের ভায়াডাক্ট-নির্ভর উন্নয়ন হলে, তা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ও উচ্চগতির হবে। ৩০ ফুট প্রশস্ত জমিই লাগবে। বিকেন্দ্রীকরণ নীতি বাস্তবায়নে দেশের যে কোনো এলাকা থেকে ৩০ মিনিটে উড়াল সড়কে পৌঁছানো যাবে এমন সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। সড়কের স্থায়িত্ব রক্ষায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপ অনুযায়ী নয়, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে গাড়ির পণ্য পরিবহন সীমা অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে।

 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র স প র শ কর সরক র র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে

অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।

শ্রমবাজারে দুর্বলতা

পাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।

পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।

মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।

ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েন

এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।

পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’

বাজারের প্রতিক্রিয়া

সুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নীতিসুদ কী

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।

কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাব

বিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।

নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।

সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ