সড়ক রেল বিমান নৌ নিয়ে একক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব
Published: 1st, February 2025 GMT
জটিলতা, জমির অপচয় রোধ এবং প্রকল্প ব্যয় কমাতে সড়ক, রেল, নৌ এবং বিমানকে একীভূত করে একটি মন্ত্রণালয় গঠনের সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স। দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে এ প্রস্তাবে। ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তর দীর্ঘ সময়ে সম্ভব না হওয়ায় শক্তিশালী নগর সরকারের সুপারিশ করা হয়েছে এতে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির এ সরকারের অধীনে থাকবে সরকারের সব সেবা সংস্থা।
প্রকল্পের জন্য বিদেশি ঋণের শর্তে সতর্ক করা হয়েছে। যমুনা রেল সেতুর উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, সেখানে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, নকশা, ঠিকাদারি এবং পরামর্শক সেবাসহ সব কাজ ঋণদাতা জাপান করছে। এতে স্বার্থের সংঘাত হয়। ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ সেবা এবং পণ্য সেই দেশ থেকে কিনতে হয়। ঠিকাদারও হতে হয় ভারতীয়। এতে প্রকল্প জটিলতা বাড়ে।
ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্য দেশের মতো ‘অবকাঠামো বন্ড’র মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের দামের করারোপ, গাড়ির নিবন্ধনসহ অন্যান্য ফি এবং টোল থেকে ‘রোড ফান্ড’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড.
শেখ হাসিনার শাসনামলে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের মতো বড় প্রকল্প হলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ না হওয়া এবং উচ্চ ব্যয়ের কারণে সমালোচনা রয়েছে। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল বৈদেশিক ঋণের বোঝা দেশের ঘাড়ে চেপেছে আওয়ামী লীগ শাসনামালে। শেখ হাসিনার পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার অপচয়, উচ্চ ব্যয়, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের ধারা থেকে বের হওয়ার পথ দেখাতে ১২ সদস্যের অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স গঠন করে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে ‘অবকাঠামো এবং সংযোগ: অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি পথ’ শীর্ষক অংশটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক।
এতে বলা হয়েছে, সমন্বিত উন্নয়নের পরিবর্তে সড়ক খাত গুরুত্ব পাওয়ায় রেল ও নৌপথের গুরুত্ব কমেছে। ১৯৭৫ সালে পণ্য পরিবহনের ৩৭ ভাগ নৌপথে এবং ২৮ ভাগ রেলে হতো। ২০১৯ সালে তা কমে হয়েছে যথাক্রমে ৭ এবং ১৬ শতাংশ।
যোগাযোগ খাত ভাগ করাকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, যোগাযোগ থেকে আলাদা হয়ে রেল ২০১২ সালে হয় পৃথক মন্ত্রণালয়। বৃহৎ সেতুর জন্য সড়ক থেকে আলাদা করে ১৯৮৫ সালে সেতু বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা পরিবহন খাতে অবনতির অন্যতম কারণ।
উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। যেমন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রেলওয়েকে কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে জমি দিচ্ছে না। ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনকে মাল্টিমোডাল হাবে রূপান্তরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) জমি দিচ্ছে না। একই অবস্থা কমলাপুরে। সেখানে সেতু বিভাগের উড়াল সড়ককে জমি দিচ্ছে না রেলওয়ে।
বাংলাদেশে জমির সংকট ভয়াবহ এবং ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকলেও সরকারি সংস্থাগুলো তা আমলে নিচ্ছে না। সমন্বয়হীনতায় একই এলাকায় একাধিক সংস্থা জমি অধিগ্রহণ করছে। এতে মূল্যবান কৃষিজমি কমছে। যদিও কাগজে-কলমে খাদ্য নিরাপত্তা সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সওজ এবং পদ্মা রেল সংযোগের জন্য রেল পৃথকভাবে পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ করেছে। অথচ একই পথে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল।
৮৪টি দেশের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ভারত বাদে অন্যান্য দেশে সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান নিয়ে একটি মন্ত্রণালয়। যেমন চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় সড়ক, রেলসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যম একটি কর্তৃপক্ষের অধীন। ভারতের নাগপুরের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, সেখানে একটি পিলারে নির্মিত হয়েছে ফ্লাইওভার এবং তৃতীয় তলায় রয়েছে মেট্রোরেল। সবার নিচে সড়ক। বাংলাদেশে সমন্বয় না থাকায় ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল পৃথক সংস্থা পৃথকভাবে করে। এতে বাড়তি টাকা ব্যয় ও জমি নষ্ট হয়।
স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কারের সুপারিশে বলা হয়েছে, জবাবদিহি নিশ্চিতে সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষের (বিপিপিএ) তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সমীক্ষা করানো যাবে না। পরিকল্পনা কমিশন সমীক্ষার তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত রাখবে। সমীক্ষা অবশ্যই স্বতন্ত্রভাবে যাচাই হতে হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রকল্প অনুমোদন থেকে কাজ শুরু হতে ৩ বছর পর্যন্ত লাগে। তখন বাজারদর প্রকল্প অনুমোদনের সময়ের চেয়ে বেড়ে ব্যয় বাড়ে। আবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধনের পদ্ধতিতে কঠোর হওয়া বাড়তি সময় লেগে ব্যয় বাড়ে। তা সহজ করার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি ব্যয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, উচ্চমূল্যকে চিহ্নিত করেছে টাস্কফোর্স। জমি অধিগ্রহণ কমাতে মাল্টিমোডাল পদ্ধতিতে উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ৩০ ফুট চওড়া সড়ক নির্মাণে ১৬৫ ফুট প্রশস্ত জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। উড়াল সড়ক হলে বা অন্যান্য দেশের ভায়াডাক্ট-নির্ভর উন্নয়ন হলে, তা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ও উচ্চগতির হবে। ৩০ ফুট প্রশস্ত জমিই লাগবে। বিকেন্দ্রীকরণ নীতি বাস্তবায়নে দেশের যে কোনো এলাকা থেকে ৩০ মিনিটে উড়াল সড়কে পৌঁছানো যাবে এমন সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। সড়কের স্থায়িত্ব রক্ষায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপ অনুযায়ী নয়, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে গাড়ির পণ্য পরিবহন সীমা অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র স প র শ কর সরক র র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বার্সার বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে খেলা হবে না মার্টিনেজের
বার্সেলোনার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ৩-৩ গোলের সমতা করেছে ইন্টার মিলান। বার্সার মাঠ থেকে সমতা করে যাওয়ায় কিছুটা হলেও এগিয়ে আছে ইতালির জায়ান্টরা। তবে অলিখিত ওই ফাইনালে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাওতারো মার্টিনেজকে না পাওয়ার শঙ্কায় আছে দ্য হিরোনসরা।
বার্সার বিপক্ষে প্রথম লেগের ম্যাচে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় লাওতারো মার্টিনেজের। প্রথমার্ধ চলাকালে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে তাকে বদলি করে মেহদি তারিমিকে মাঠে নামান ইন্টার মিলান কোচ সিমোন ইনজাঘি।
আগামী ৬ মে রাতে দ্বিতীয়ার্ধের ম্যাচ খেলতে নামবে ইন্টার ও বার্সা। ওই ম্যাচে মার্টিনেজের খেলা হবে না। বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত না করলেও এক প্রকার জানিয়ে দিয়েছেন ইন্টার কোচ, ‘লাওতারো পায়ে অস্বস্তি বোধ করছিল। আমরা কাল তার আরও কিছু পরীক্ষা করানোর পর পরিস্থিতি বুঝতে পারবো। তবে দ্বিতীয় লেগে আমাদের জন্য অলিখিত ফাইনালে সে খুবই অনিশ্চিত।’
সাবেক ইতালি স্ট্রাইকার ইনজাঘি দ্বিতীয় লেগে বার্সার বিপক্ষে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। সান সিরোর ৭৫ হাজার দর্শকের সমর্থন বড় পার্থক্য গড়ে দেবে বলে মনে করেন তিনি, ‘আশা করছি, আমরা দ্বিতীয় লেগে বেঞ্জামিন পাভার্ডকে (রাইট ব্যাক) পাবো। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত লাওতারোর ক্ষেত্রে একই আশা করছি পারছি না। দ্বিতীয় লেগ আমাদের জন্য ফাইনালের সমান এবং আমি ঘরের মাঠের ৭৫ হাজার দর্শককে গোনায় ধরছি। আমাদের ভক্তরা এই অর্জনে আমাদের সাহায্য করবে।’
চলতি মৌসুমে ইন্টার মিলানের সামনে ট্রেবল জয়ের সুযোগ ছিল। তবে কোপা ইতালিয়ায় এসি মিলানের বিপক্ষে হেরে ট্রেবলের সুযোগ শেষ হয়েছে তাদের। টিকে আছে ডাবল জয়ের সুযোগ। তবে পথে অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। বার্সার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে জিততে হবে। ওদিকে ইতালির সিরি আ’তে সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে ইন্টারের শীর্ষস্থান কেড়ে নিয়েছে নাপোলি।