ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে মাঠে থাকবে বিএনপি: ওয়াহাব আকন্দ
Published: 1st, February 2025 GMT
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের যে কোনো কর্মসূচি প্রতিহত করতে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে প্রতিদিন বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীতে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির ঘোষণার প্রতিবাদে মহানগর বিএনপি সহযোগী সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই ঘোষণা দেন।
ওয়াহাব আকন্দ বলেন, “ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির বিগত ১৭ বছরের আন্দোলন সফল হয়েছে। বিগত সময়ে মাঠে থেকে দলের সব কর্মসূচি সফল করেছি। এখন আওয়ামী লীগ পালিয়ে থেকে হুঙ্কার দিচ্ছে। এই দলের নেতাকর্মীরা মাঠে আসলে শক্ত হাতে তাদের প্রতিরোধ করা হবে।”
আরো পড়ুন:
বালিয়াডাঙ্গীতে বিএনপির মহাসচিবের আশ্বাসে হরতাল প্রত্যাহার
নির্বাচিত সরকারকে হাসিনার বিচার করার সুযোগ দিন: জালাল
এসময় কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি খন্দকার মাসুদুল হক, ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির সদস্য আব্দুর রব আকন্দ রতন, দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক গোলাম মসিউর সোহাগ, মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রুহুল আমিন খান, সহ-সভাপতি মিনহাজুল আবেদীন রাসু, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান রানা, সাধারণ সম্পাদক দাউদ রায়হান, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি খালেদা আতিক, সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাহবুবা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুজ্জামান চাঁন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রতিবাদ মিছিল ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজারস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়। সেটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে জেলা ও মহানগর বিএনপির সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী অংশ নেন।
ঢাকা/মিলন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব আকন দ ব এনপ র দল র স হ নগর
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ