বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনায় সেজেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। ক্যাম্পাস জুড়ে ৩৭টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পূজা।

প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ। শেষ মুহূর্তে চলছে সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজ। শিক্ষার্থীরা মণ্ডপ সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাঁশ, কাঁঠাল পাতা, ককশিট বা রঙিন কাগজ ও তুলির আঁচড়ে প্রতিমা ও মণ্ডপ সাজাচ্ছেন তারা।

রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে মণ্ডপ সাজানোর কাজে ব্যস্ত। ৩৩টি বিভাগ, দুইটি ইনস্টিটিউট, চারুকলা অনুষদ এবং ছাত্রী হল থেকে পৃথক পৃথকভাবে ৩৭টি মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে।

আগামীকাল সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দেবী সরস্বতীর পূজা শুরু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী লাবণ্য কুমার রায় বাপ্পী বলেন, “সরস্বতী পূজা মানেই আমাদের জন্য একটা বিশেষ আনন্দের দিন। দেবীর কাছে প্রার্থনা করি, যেন আমাদের জ্ঞান ও সৃজনশীলতার পথ উন্মুক্ত হয়। বিভাগের সবার সঙ্গে মণ্ডপ সাজানো থেকে শুরু করে অঞ্জলি দেওয়া— সবকিছুই স্মরণীয় হয়ে থাকে।”

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জয়ন্তী রায় বলেন, “এটা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও অংশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একসঙ্গে সবাই মিলে পূজা উদযাপন করার আনন্দই আলাদা। প্রতিমা সাজানো, আলোকসজ্জা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে আমরা বেশ উচ্ছ্বসিত।”

ইংরেজি বিভাগের মহাশ্বেতা রায় মিতু বলেন, “আমি প্রতি বছর মা সরস্বতীর পায়ে খাতা-কলম রেখে আশীর্বাদ নিই। মা যেন আমাদের পড়াশোনায় ভালো ফল করতে সাহায্য করেন, সেই প্রার্থনা করি। পূজার সাজসজ্জা, মেলা আর প্রসাদ খাওয়া— সবকিছুই অনেক মজা লাগে।”

বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, “আজ রাতের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করা হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ তাজাম্মুল হক জানান, “পূজাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা টিম ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। ক্যাম্পাস জুড়ে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করা হবে। রাত ৮টার মধ্যে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে

তীব্র খরার কবলে পড়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান। সেখানে বাসিন্দাদের সুপেয় পানির প্রধান উৎসটি দুই সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ গতকাল রোববার এ খবর জানিয়েছে।

তেহরানে পানি সরবরাহ কোম্পানির পরিচালক বেহজাদ পারসার বরাত দিয়ে আইআরএনএর খবরে বলা হয়, তেহরানে খাবার পানি সরবরাহের পাঁচটি উৎসের একটি আমির কবির বাঁধ। সেটিতে এখন মাত্র ১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার পানি আছে। এটি জলাধারটির মোট ধারণক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ।

বেহজাদ পারসা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই পরিমাণ পানি দিয়ে মাত্র দুই সপ্তাহ তেহরানের খাবার পানির চাহিদা মেটানো যাবে।

ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন পড়ে।

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র খরার মোকাবিলা করছে ইরান। গত মাসে স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, তেহরান প্রদেশে এবার বৃষ্টির যে মাত্রা, তেমনটা গত এক শতাব্দীতে খুব একটা দেখা যায়নি।

এক কোটির বেশি মানুষের নগর তেহরান তুষারাচ্ছন্ন আলবোর্জ পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত। এই পর্বতমালার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫ হাজার ৬০০ মিটার (১৮ হাজার ৩৭০ ফুট) পর্যন্ত। এই পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন নদীগুলো বহু জলাধারে পানির জোগান দেয়।

বেহজাদ পারসা বলেন, এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল। কিন্তু তেহরান অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় শতভাগ হ্রাস পেয়েছে।

তেহরানে পানি সরবরাহ করা বাকি জলাধারগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি এই কর্মকর্তা।

ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন পড়ে।

এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল। কিন্তু তেহরান অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় শতভাগ হ্রাস পেয়েছে।বেহজাদ পারসা, তেহরানে পানি সরবরাহ কোম্পানির পরিচালক

পানি সাশ্রয়ের পদক্ষেপ হিসেবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তেহরানের বেশ কয়েকটি এলাকায় বারবার সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর চলতি গ্রীষ্মে ঘন ঘন পানি সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘটনাও ঘটেছে।

জুলাই ও আগস্টে পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দুই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ইরানে সে সময় তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিদিন একাধিকবার লোডশেডিং হয়েছে।

ওই দুই মাসে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছুঁয়ে গিয়েছিল।

জুলাই ও আগস্ট মাসে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ফারেনহাইট) ছুঁয়ে ছিল।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘আজ যেভাবে আলোচনা হয়েছে, পানিসংকট পরিস্থিতি তার চেয়েও গুরুতর।’

ইরানজুড়ে পানিসংকট একটি বড় সমস্যা, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণের শুষ্ক প্রদেশগুলোতে। ভূগর্ভস্থ সম্পদ ব্যবহারে অব্যবস্থাপনা ও সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারকে পানি ঘাটতির জন্য দায়ী করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুনপ্রচণ্ড গরমে পানির ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ইরানিদের কম পানি ব্যবহারের আহ্বান২০ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ