কুমুদিনী একটি প্রতীক, যার মাধ্যমে হাজং বিদ্রোহ শুরু
Published: 4th, February 2025 GMT
কুমুদিনী হাজং একটি প্রতীক, তার মধ্য দিয়েই হাজং বিদ্রোহ শুরু। তিনি একজন বিজয়ী আন্দোলনকারী, যার মধ্যে দিয়ে আমরা টংক বিদ্রোহ দেখতে পাই। নারীর স্বাধিকার আন্দোলন, কৃষক বিদ্রোহ আন্দোলনের দিকে যদি আমরা দেখি, অল্প বয়সেই কুমুদিনী নারীদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন।
অমর একুশে বইমেলায় আয়োজিত ‘কুমুদিনী হাজং’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। সোমবার বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে ‘কুমুদিনী হাজং: জুইলৗ তারা, তারালা জুই’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন লেখক মতিলাল হাজং এবং কবি পরাগ রিছিল। এছাড়া সভায় সভাপতিত্ব করেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।
মতিলাল হাজং বলেন, কুমুদিনী হাজং নামটি একটি ঘটনার প্রবাহ আর এই প্রবাহ থেকে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। নারীর স্বাধিকার আন্দোলন, কৃষক বিদ্রোহ আন্দোলনের দিকে যদি আমরা দেখি, অল্প বয়সেই (১৩/১৪) কুমুদিনী নারীদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। তিনি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার আন্দোলনগুলো আগুনের মতো বিস্ফোরণ হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ১৯৪৭ সালের ৩১ জানুয়ারি কুমুদিনী লক্ষ্মীপুরের হালুয়াঘাট গিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। তৎকালীন ব্রিটিশ বাহিনী তাকে অপহরণ করে নির্যাতন করায় তিনি কারও সামনে আসতে পারছিলেন না। সেদিন কি হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার কিছু মনে নেই,সব ভুলে গিয়েছি। অধিকার নিয়ে লড়তে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, কুমুদিনী জন্মেছিলেন নেত্রকোনার দূর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামে এক কৃষিজীবী হাজং পরিবারে। পাহাড়ি টিলার এই গ্রামে কিছু প্রাচীন বহেরা গাছ ছিল। ঝাঁক বেঁধে টিয়া পাখি আসতো, মাঝেমধ্যে বানরও আসতো। কুমুদিনীর মা জনুমণি হাজং ছিলেন ঐতিহ্যবাহী তাঁত বানা কারিগর এবং কৃষক। বাবা অতিথ চন্দ্র রায় হাতিখেদা বিদ্রোহী এবং কৃষিকাজের সাথে জড়িত ছিলেন। জন্মের দু'বছরের ভেতর কুমুদিনী মা-বাবাকে হারান। কুমুদিনী বড় হন মামার কাছে। মাত্র ১২ বছর বয়সে মাইজপাড়ার লংকেশ্বর হাজংয়ের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পরপর শুরু হয় টংকপ্রথা উচ্ছেদ আন্দোলন। লংকেশ্বর হাজং তাঁর তিন ভাইসহ সবাই টংক আন্দোলনে যোগ দেন। একইসঙ্গে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ের কুমুদিনী হাজং। টংক আন্দোলনে বহু হাজং নারী-পুরুষ শহীদ হয়েছেন। এই আন্দোলন সামগ্রিকভাবে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের হাজং গ্রাম, কৃষি ও উৎপাদন ব্যবস্থা, জীবন জীবিকা আমূল পাল্টে দেয়। ১৯৫০ সালে প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে এই প্রথা রহিত হলেও হাজংদের জীবনে আজো সুরক্ষা ও স্বীকৃতি নিশ্চিত হয়নি। টংক আন্দোলনের শত সহস্র বীরদের ভেতর কুমুদিনীর নাম কেন বহুল উচ্চারিত? টংক আন্দোলনের একটি বিশেষ সময়ে এক
যৌনসহিংতার প্রতিবাদের কারণে মূলত কুমুদিনীকে সমাজ বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। কুমুদিনী হাজং ২০২৪ সালের ২৩ মার্চ প্রায় শতবর্ষের জীবন পাড়ি দিয়ে অনন্তলোকে যাত্রা করেন। কুমুদিনী হাজংকে অনন্যা শীর্ষদশ পদক ২০০৩, ড.
কুমুদিনীকে নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান করায় বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবু সাঈদ খান বলেন, কুমুদিনী হাজং একটি প্রতীক, তার মধ্যে দিয়েই হাজং বিদ্রোহ শুরু। তিনি একজন বিজয়ী আন্দোলনকারী, যার মধ্যে দিয়ে আমরা টংক বিদ্রোহ দেখতে পাই। আমরা মূল রাজনীতি ধারার পাশে যে সকল সংগ্রাম, জনযুদ্ধ দেখি সেগুলোর মতোই ছিল হাজংদের জনযুদ্ধ, জনবিদ্রোহ। এসব আন্দোলনের মধ্যে একটি হলো কঙ্গো আন্দোলন, এই আন্দোলনটি জনগণের মধ্যে থেকেই গড়ে উঠা আন্দোলন। আর এই আন্দোলনকে আলোর দিশারী হিসেবে এগিয়ে নিয়েছিলেন কুমুদিনী।
তিনি আরও বলেন, বাংলা একাডেমির পুরস্কার নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে কিন্তু কুমুদিনী হাজংকে সামাজিক অবদানের জন্য যে ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে এটি নিয়ে কোনো সংশয়, বিতর্ক নেই। এমন মানুষকে পুরস্কৃত করায় বাংলা একাডেমির একটি বড় ভূমিকা বলে মনে করি।
আবু সাঈদ খান বলেন, এই বাংলাদেশটা কেবলমাত্র বাঙালির দেশ নয়, এখানে হাজং, সাওতালরা, মারমা খাসিয়া অনেকের বাস। ধর্মীও দিক থেকে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে বাঙালি ও মুসলমানদের উদার হতে হবে এবং সংখ্যালঘু ছোট ছোট জাতসত্বাকে লালন করতে হবে। এর মধ্যে দিয়েই আমরা বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল র জন য এক ড ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে আবুল কালাম (৫০) নামে এক বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খুনের ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রদলের এক কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে নিহতের পরিবার।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ৩০ মিনিট পর অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ক্রিকেট খেলার একটি ভিডিও পোস্ট করেন তার ফেসবুক আইডিতে। ভিডিওটি পোস্ট দিয়ে ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘আউট’। ফেসবুকে তার দেওয়া এই পোস্ট হত্যাকাণ্ডকে ইঙ্গিত করেই দেওয়া বলে অভিযোগ করেছে নিহত কালামের পরিবার।
আরো পড়ুন:
আ.লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’: গোপালগঞ্জে আরেক মামলা, আসামি ২৫২
কানের দুল ছিনিয়ে নিতে শিশুকে হত্যা, আটক ২
আবুল কালাম উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অভিযুক্ত কাউছার মানিক বাদল স্থানীয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য।
গত বছরের ৭ আগস্ট বিভিন্ন অভিযোগে কাউছারকে বহিষ্কার করে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদল। পরে ৩ নভেম্বর তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাউছারের সঙ্গে আবুল কালামের বিরোধ চলে আসছিল।
কাউছার ভিডিওটি পোস্ট করেন তার কে এম বাদল নামের ফেসবুক আইডি থেকে। ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রামের কয়েকজন ক্রিকেট খেলছেন। এর মধ্যে একজন রানআউট হয়েছেন। তবে, ভিডিওতে কাউছারকে দেখা যায়নি।
খুনের ঘটনার পরপরই কাউছার এ ঘটনায় জড়িত বলে দাবি করেন নিহত কালামের স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামীকে খুন হওয়ার পর কাউছারের পোস্ট করা ভিডিওটি কাকতালীয় নয়। এটি হত্যার ঘটনাকে ইঙ্গিত করেই করা হয়েছে।’’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউসার মানিক বাদল বলেন, ‘‘ঘটনার সময় আমি লতিফপুর বাজারে ছিলাম। যা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে। কালাম ভাই বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমার সঙ্গেই বাজারে ছিলেন। এ ঘটনায় আমি কোনোভাবে জড়িত নই।’’
নিজ দলের একজন নেতার মৃত্যুর পর ফেসবুকে ‘আউট’ লিখে ভিডিও দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাউছার বলেন, ‘‘বাড়ির সামনে ক্রিকেট খেলেছিলাম, সেই ভিডিও দিয়ে আউট লিখেছি।’’
চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি মো. ফয়েজুল আজীম বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে কাউছার ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার ‘আউট’ লেখা ভিডিওটি পুলিশের নজরে এসেছে। তবে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।’’
ঢাকা/লিটন/রাজীব