কোনো দণ্ডিত অপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শনে রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগের যে এখতিয়ার রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আজ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

২৮ দফা প্রস্তাবের ছয় নম্বরে রয়েছে 'রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন' সংক্রান্ত অংশটি। এতে বলা হয়েছে, ‘আদালত কর্তৃক চূড়ান্তভাবে দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বোর্ড প্রতিষ্ঠা, যার সুপারিশের ভিত্তিতে ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।’

প্রসঙ্গত, ‘ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার’ শীর্ষক সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’ এ অনুসারে কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই উল্লেখ করে এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে।

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে ‘ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার’ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার ঘটনা আলোচনা সমালোচনা তৈরি হওয়ার নজির রয়েছে। ২০১১ সালে লক্ষ্মীপুর জেলায় স্থানীয় বিএনপি নেতা নুরুল ইসলামকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এএইচএম বিপ্লবকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। বিপ্লব স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের ছেলে। এ ঘটনায় বাংলাদেশে সমালোচনা দেখা গিয়েছিল।

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার সম্পর্কে বলা রয়েছে। এ অনুসারে কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই উল্লেখ করে এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান আবেদনকারী হয়ে ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন। 

রিটের যুক্তির বিষয়ে আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি সাজাপ্রাপ্ত কাউকে ক্ষমা করতে পারেন। এই ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে ইতিমধ্যে অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি ক্ষমা পেয়েছেন, এর বেশির ভাগ হত্যা মামলার আসামি। ক্ষমা করার এই ক্ষমতা প্রয়োগে কোনো নীতিমালা নেই। অর্থাৎ কিসের ভিত্তিতে ও কোন কোন দিক বিবেচনায় ক্ষমা করা হয়- এই সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন ঘটনাদৃষ্টে সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের অপব্যবহার হয়, যেখানে রাজনৈতিক আদর্শ বিবেচনায় দণ্ডিতকে ক্ষমা করতেও দেখা যায়। যা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সে জন্য ক্ষমা করার এই ক্ষমতা প্রয়োগে নীতিমালা প্রণয়ন আবশ্যক। তাই জনস্বার্থে রিটটি করা হয়েছে।

রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- এ বিষয়ে রুলে চাওয়া হয়েছে। ওই অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা (গাইডলাইন) কেন প্রণয়ন করা হবে না, সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ে দুই সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিবসহ ছয়জনকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।

এর আগে ২০১৪ সালে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি মনজিল মোরশেদ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন। ওই রিটে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদটিকে সংবিধানের ২৬, ২৭, ৩১, ৩৫, ১১১ ও ১১২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে রুল জারির জন্য আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, আইন সচিব ও জাতীয় সংসদ সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত র ক ষমত প রণয়ন মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বরগুনায় বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আদালতে নাকচ

বরগুনা জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন নাকচ করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার বরগুনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান এই আদেশ দেন।

এদিকে আদালতের নথি কাটাছেঁড়ার অভিযোগে মামলার বাদী শহিদুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

এর আগে ২৩ জুলাই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য শহিদুল ইসলাম ২৩১ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মামলার পর আদালত বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩০ মে বরগুনা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল চলাকালে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, ছেনি, চায়নিজ কুড়ালসহ কার্যালয় ঘিরে ফেলেন। এরপর তাঁরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও ত্রাস সৃষ্টি করেন। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারধর ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

গত রোববার বরগুনা জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এক বৈঠকে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ফোরামের সদস্যসচিব আবদুল ওয়াসি মতিন বলেন, ‘তিনি (শহিদুল ইসলাম) আমাদের সদস্য। তিনি মামলা করেছেন, তা আমরা জানতাম না। তাই তাঁকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

একই দিনে শহিদুল ইসলামের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি জানি না কার নামে মামলা হয়েছে, নেতারাই আমাকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রথম আলোকে বলেন, এটি দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। যিনি মামলা করেছেন, তিনি ব্যক্তিস্বার্থে করেছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

আদালতের পেশকার নাদিরা পারভীন বলেন, মামলার আদেশ হওয়ার পর বাদী আদালতের নথিতে কাটাছেঁড়া করেছেন। তাই আদালত তাঁকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মামলা প্রসঙ্গে শহিদুল ইসলাম বলেন, কিছু আসামির নাম-ঠিকানা ভুল ছিল, সে কারণে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলাম।

উল্লেখ্য, একই ঘটনায় বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এস এম নজরুল ইসলামের ছেলে এস এম নইমুল ইসলাম ৩০ এপ্রিল একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের পাশাপাশি বিস্ফোরক আইনের ধারা সংযোজন করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুরাইয়া মতিনের মৃত্যুতে ফতুল্লা প্রেসক্লাবের শোক
  • ‎আবু সাঈদ হত্যা: ৬ আগস্ট অভিযোগ গঠনের আদেশ 
  • আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ৬ আগস্ট
  • আইন যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার
  • শিক্ষকের মুক্তি চেয়ে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বরে অবস্থান, সড়ক অব
  • কিশোরগঞ্জে আইনজীবীর বাড়িতে ডাকাতি, ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট
  • আবু সাঈদ হত্যা: ‘ঘটনাস্থলে ছিলেন না’ দাবি করে দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন
  • দুদকের মামলায় রাজশাহীর সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার কারাগারে
  • বরগুনায় বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আদালতে নাকচ
  • এইচএসসি পরীক্ষা: ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্রে ভালো করতে হলে