বয়স, সে তো একটা সংখ্যা কেবল! এই বাণীটা অন্তত ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্ষেত্রে সত্য। আজ (৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) জীবনের ৪০তম বসন্তে পা রাখলেন তিনি। অথচ এই বয়সে কজনই বা পেশাদার ফুটবলটা চালিয়ে যাওয়ার ধৃষ্টতা দেখায়? তবে পর্তুগিজ মহাতারকা কি না এই বয়সে করে বসলেন গোলের হাফসেঞ্চুরি! না, আপনি ভুল পড়ছেন না, গত বছরের (২০২৪) জন্মদিনের পর পৃথিবী তার কক্ষপথে আরও একবার ঘুরে আসার আগে রোনালদো তার ক্যারিয়ারে যোগ করেছেন আরও ৫০টি গোল। তাকে বিশেষিত করতে গেলে বিশেষণ যে ফুরায় ভান্ডার। তবে জীবনান্দের মতো বলা যায়- এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।

কোথা থেকে শুরু যে তার আর কোথায় হবে শেষ/রোনালদোতে মজে গেলে রাতও হবে শেষ। এই মহাতারকার জীবন যুদ্ধের গল্পের শুরুটা যে, মায়ের গর্ভ থেকেই। ভাস্কো দা গামা, ইউসোবিও আর লুই ফিগোদের দেশে ১৯৮৫ সালে জন্ম নেন রোনালদো। পর্তুগালের অখ্যাত মাদেইরাতে তিনি যখন মায়ের গর্ভে তখনই, ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেলেন গর্ভপাত করতে। তা না হলে নাকি জন্ম নেওয়া শিশুটি দূরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগবেন। তবে রোনালদোর মা মারিয়া ডোলোরেস দস সান্তোস বাঁধ সেধে বললেন- তিনি এই সন্তানকে রক্ষা করবেন যে কোন মূল্য।

অন্যদিকে সারাটা জীবন চ্যালেঞ্জ জয় করা সিআর৭ও বুড়ো আঙুল দেখালেন চিতিৎসকের ভবিষ্যত বাণীকে। তবে যে বয়সে ছোট্ট ছেলেরা লেখাপড়ায় ব্যস্ত থাকে, মা-বাবার কাছে করে খেলনার আবদার। সেই বয়স থেকেই রোনালদোর একটাই ধ্যান জ্ঞাণ, ফুটবলই যে সব তার। দারিদ্যের সঙ্গে লড়াই করা বাবা জোসে দিনিস আভেইরো ছেলের এই স্বপ্নের পথে কাঁটা হতে চাইলেন না, আর মা তো প্রতিদিন নিয়ে যেতেন অনুশীলনে।

আরো পড়ুন:

ফাইনাল পর্বে ১০ জন নিয়ে জয় ব্রাজিলের, জিতল আর্জেন্টিনাও

নারী ফুটবলার সুমাইয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি

এরপরের গল্পটাতো সবার জানা। স্পোর্টিং সিপিতে থাকাকালীন চোখে পড়লেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। ইউনাইটেডের ঘরের ছেলে ডেভিড ব্যাকহামের ৭ নম্বর জার্সিটা রোনালদোকেই দিলেন কোচ। তাতেই ইংলিশ মিডিয়াতে গেল-গেল রব পড়ে যায়। তবে জুহুরি চোখের স্যার ফার্গি কি আর হীরা চিনতে ভুল করেন? ইউনাইটেডকে ইউরোপের সেরা বানিয়ে অর্জন করলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ব্যালন ডি-অর। প্রথম ধাপে ৬ বছর রেড ডেভিলদের হয়ে খেলেই নিজেকে নিয়ে গেলেন স্যার রবার্ট চার্লটন এবং জর্জ বেস্টদের কাতারে।

এরপর নতুন চ্যালেঞ্জের সন্ধানে যোগ দিলেন পৃথীবির সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। এই পর্তুগিজের জাদুতেই লস ব্ল্যাঙ্কসদের লা-দেসিমার (১০ নম্বর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা) সুদীর্ঘ ১৩ বছরের অপেক্ষার শেষ হয়। এরপর রোনালদো আরও ৩ বার তাদেরকে বানালেন ইউরোপের সেরা। রিয়ালের হয়ে ১.

০৩ গড়ে ৪৫০ গোল করে ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান।

তারপর তুরিন ঘুরে আবারও স্বপ্নের গালিচা ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফিরেন। তবে দ্বিতীয় ধাপে ম্যানেজম্যান্টের সঙ্গে বনিবনা না হওয়াই চোখের জলে ছাড়তে হয় পছন্দের লাল জার্সি।

অশ্রুতেই শুরু হয়েছিল রোনালদোর জাতীয় দলের হয়ে প্রথম বড় আসর, ইউরো ২০০৪। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া এই আসর শুরু হওয়ার মাত্র ১০ মাস আগে পর্তুগালের মেরুন-সবুজ জার্সি গায়ে উঠেছিল তার। অথচ প্রথম আসরেই জাদু দেখিয়ে অর্জন করলেন সেরা উদীয়মানের তকমা। পর্তুগাল যদি ফাইনালে গ্রীসের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিতভাবে না হারত, তাহলে হয়ে যেতেন আসরের সেরা খেলোয়াড়। সেই ম্যাচের পর অঝোরে কেঁদেছিলেন রোনালদো।

ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের মঞ্চে আরও একবার চোখের জলে ভাসালেন নিজে, ভাসালেন ফুটবল বিশ্বকে। স্তাদ দে ফ্রান্সে ২০১৬ সালে স্বাগতিক ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে। দিমিত্রি পায়েটের এক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ট্যাকেলের কারণে চোটে পড়ে খেলার ২৫ মিনিটেই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। সেই সময়ে তার শিশুর মত কান্না ছুঁয়ে গেল প্রতিপক্ষ শিবিরের সমর্থকদেরও। প্রকৃতিও মনে হয় তখন কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার পণ করেছিল রোনালদোকে। এদেরের অতিরিক্ত সময়ের গোলে পর্তুগাল প্রথমবারের মত হয় ইউরোপের সেরা। ইউসোবিও, ফিগোরা সোনালী প্রজন্ম নিয়ে যা করতে পারেননি, ভাঙাচোরা একদল নিয়ে সেটা করে দেখিয়ে দিলেন রোনালদো।

সেই সময় রোনালদোর ইউরো বিজয়ী দলের সতীর্থ আন্দ্রে গোমেজ দিলেন এক বার্তা, যা আজ চিরন্তনের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, “পর্তুগাল আজ মৃত প্রায়। এখানে আজ আর কিছুই নেই। পর্তুগালে চাকরি নেই, জীবন নেই, মর্যাদা নেই। পর্তুগালের আছে শুধু একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।”

রোনালদোর জন্ম ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনায় নয়। তার নেই মেসি, নেইমারদের মত পূর্বনির্ধারিত ফ্যানবেজ। এমনকি নেই ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি কিংবা স্পেনের মতো বড় ফেডারেশনের ছায়া বা জার্সি পাওয়ার।

বৈশ্বিক ‘ফুটবল রাজনীতির’ মারপ্যাচে রোনালদোর অবস্থা কেমন তা বোঝাতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গেরে সাংবাদিক অরিঞ্জয় বোস লিখেছিলেন, “রোনালদো মূলত ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেনীর প্রতিনিধিত্ব করা মানুষের দেবতা। তিনি ফুটবল কাব্যের উপেক্ষিত প্রতিনায়ক। অথচ এই রক্ত-মাংসের কায়াকে অস্বীকার করতেই কি না প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরকে ঐশ্বরিক ছায়ায় আশ্রয় নিতে হয়। তুলনায় টেনে আনতে হয় বিশ্বকাপ!”

ক্যারিয়ারের ৫টি ব্যালন ডি-অর, দেশের হয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপ, ৫টি চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা কিন্তু রোনালদোর শ্রেষ্ঠ অর্জন নয়। তার অমূল্য সম্পদ হচ্ছে ২৬ বছরের ফুটবল যাত্রার বিভিন্ন সময়ে পাওয়া ভক্তরা। মাঠের লৌহদৃঢ চরিত্রের রোনালদোর হৃদয়টা এই ভক্তদের জন্য দারুণ কোমল।

তবে শুধু ভক্ত না, যখন যেখানে মানবিকতার ডাক এসেছে হাজির হয়েছেন পর্তুগিজ মহাতারকা। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় গড়ে দিয়েছেন স্কুল। এক সময়ের সতীর্থ কার্লোস মার্টিন্সের ছেলেকে ‘বোন ম্যারো’ দান করতেও দ্বিধা করেননি রোনালদো।

ডেভিড পলাসকি নামের এক কিশোর ২০১৩ সালে দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়ে কোমায় চলে যান। তিন মাস থাকেন কোমায়। অন্যদিকে একই বছরের পর্তুগালের হয়ে নভেম্বরের ১৩ তারিখে সুইডেনের বিপক্ষে অনবদ্য এক হ্যাটট্রিক করেন রোনালদো। প্লে-অফের সেই ম্যাচ জিতেই ব্রাজিল বিশ্বকাপে জায়গা পায় পর্তুগাল। সেই মহারণের ধারাভাষ্য ব্যবহার করে ডেভিডের চেতনা ফিরিয়ে আনেন চিকিৎসকরা। নশ্বর রোনালদোর আর কী বা পাওয়ার আছে এই ধরণীর বুকে?

তবুও ভক্তরা চায় তার কাছে। তারা চায় আরও ৭৭ গোল করে প্রথম ফুটবলার হিসেবে পেশাদার ক্যারিয়ারে ‘১০০০’ গোল স্পর্ষ করুক রোনালদো। ভক্তরা প্রিয় তারকার হাতে অধরা বিশ্বকাপের সোনালী শিরোপাটা চায়। ২০২৬ বিশ্বকাপে সেই সুযোগটা কী আরেকবার পাবেন রোনালদো?

তখন যে এই পর্তুগিজের বয়স হবে ৪১! রোনালদো ২০০৬ সালে জার্মানিতে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিলেন। ঠিক ২০ বছর পরে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ কী আসলেই খেলতে পারবেন তিনি? বয়স বা ফর্ম কী সেটা হতে দিবে? যদি পেয়েও যান, তাহলে কী পারফর্ম করতে পারবেন? অন্তর্যামী হয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার উপায় নেই।

তবে প্রথম বিশ্বকাপ খেলার ‘কুড়ি বছর পরে’ রোনালদো আবারও বৈশ্বিক এই আসরে খেলার সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই ভাববেন- জীবন গিয়েছে চ’লে আমাদের কুড়ি-কুড়ি বছরের পার/তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার! 

ঢাকা/নাভিদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল পর ত গ ল র পর ত গ জ ফ টবল র প রথম ব বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

শব্দগুলো সাজাও, বাক্য বানাও

ইংরেজি: রি–অ্যারেঞ্জ

প্রাথমিক বিদ্যালয়–শিক্ষার্থী মেধা যাচাই পরীক্ষায় ইংরেজি ৮ নম্বর প্রশ্নটি রি–অ্যারেঞ্জের ওপর। নম্বর থাকবে ৬।

# Rearrange words in the correct order to make meaningful sentences

Set-1

a. poetry/ time/ in/ my/ free/ father/ his/ writes.

b. I/ can/ questions/ ask/ some/ you?

c. us/ let/ for/ a/ go/ picnic.

d. should/ eat/ you/ chocolate/ not/ of/ lot/ a.

e. beautiful/ girl/ the/ how/ is!

Ans:

a. My father writes poetry in his free time.

b. Can I ask you some questions?

c. Let us go for a picnic.

d. You should not eat a lot of chocolate.

e. How beautiful the girl is!

আরও পড়ুনসবুজ উদ্ভিদ থেকে খাদ্যশৃঙ্খল শুরু১০ ডিসেম্বর ২০২৫

Set-2

a. hare/ for/ slept/ hour/ an/ the.

b. walk/ you/ can’t/ faster?

c. believe/ his/ hare/ the/ couldn’t/ eyes.

d. too/ for/ play/ don’t long.

e. steady/ race/ the/ wins/ slow/ but!

Ans:

a. The hare slept for an hour.

b. Can’t you walk faster?

c. The hare couldn’t believe his eyes.

d. Don’t play for too long.

e. Slow but steady wins the race!

Set-3

a. myself/ I/ introduce/ May?

b. club/ person/ the/ a/ there/ new/ is/ in/ today.

c. down/ please/ sit.

d. hour/ I/ you/ can/ in/ meet/ an.

e. Andy/ can/ when/ meet/ Tamal?

Ans:

a. May I introduce myself?

b. There is a new person in the club today.

c. Please sit down.

d. I can meet you in an hour.

e. When can Tamal meet Andy?

ইকবাল খান, প্রভাষক
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ