Samakal:
2025-08-01@02:00:57 GMT

সামাজিক সুরক্ষা পথ হারাইবে কেন?

Published: 6th, February 2025 GMT

সামাজিক সুরক্ষা পথ হারাইবে কেন?

দেশে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি সংকোচনের বিষয়টি উদ্বেগজনক। বুধবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন হইতে ইহা স্পষ্ট, একদিকে টিসিবির ট্রাক সেল কর্মসূচি বন্ধ; অন্যদিকে ৪৩ হাজার ‘ফ্যামিলি কার্ড’ বাতিল করিলেও সমসংখ্যক পরিবারকে এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই। যেই সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বৃদ্ধি করা দরকার, সেই সময়ে এই পরিণতি কেন?  

অবশ্য সমকালের প্রতিবেদনে স্পষ্ট, সরকারের ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য বিতরণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা থাকিলেও অর্থাভাবে তাহা সম্ভব হইতেছে না। সরকারের রাজস্ব আয় হ্রাসের কারণে এবং সামগ্রিক আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বড় ঘাটতির প্রভাবে দরিদ্রের সুরক্ষায় ভাটা পড়িয়াছে। কিন্তু বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধির বিকল্প নাই। খাদ্য সহায়তার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। ফলে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় থাকা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অব্যাহত রাখিতে হইবে।

একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনাও জরুরি। মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে, জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা হ্রাস পাইয়াছে বটে, কিন্তু খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০.

৭২ শতাংশ থাকিবার মধ্যে কোনো সুখবর নাই। বস্তুত একাদিক্রমে ১০ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ঊর্ধ্বে। গত বৎসরের মার্চের পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১ অঙ্কের ঘরে না থাকিবার অর্থ হইল দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরিয়া চাপে রহিয়াছেন। মূল্যস্ফীতি কিছুটা হ্রাসের ক্ষেত্রে সবজির দাম যে বড় ভূমিকা রাখিয়াছে, উহা বলাই বাহুল্য। তৎসহিত বাজারে সরবরাহও কিছুটা বৃদ্ধি পাইয়াছে। তবে মূল্যস্ফীতি আরও হ্রাস করা সম্ভব হইত, যদি চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস করা যাইত। 

মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হ্রাস করিতে হইলে এবং সর্বদা বাজার স্থিতিশীল রাখিতে চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস গুরুত্বপূর্ণ।

এই সময়ে ইহা জরুরি, কারণ রমজান মাস আসন্ন। শীতের শেষে সবজির দাম বৃদ্ধি পাইলে রমজানে পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী হইয়া উঠিতে পারে মূল্যস্ফীতি। রমজানে এমনিতেই বাড়তি চাহিদার কারণে প্রায় প্রতি বৎসর এই সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। রমজানে বাজার সহনশীল পর্যায়ে রাখিতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করিতে হইবে। ইতোমধ্যে রমজানে পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়া কার্য সম্পাদনের নির্দেশ দিয়াছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইতোপূর্বে আমরা দেখিয়াছি, রমজানে ব্যবসায়ীদের একটা শ্রেণি সিন্ডিকেট করিয়া কীভাবে বাজার অস্থিতিশীল করিয়া থাকে। ব্যবসায়ীরা যাহাতে মূল্য বৃদ্ধির কৌশল করিতে না পারে, তজ্জন্য পূর্বেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। বাজার মনিটরিং ও সরবরাহ শৃঙ্খল স্বাভাবিক রাখিতে সবিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাই। 

এই সময়ে বাজার নিয়ন্ত্রণেও টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন আরও জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।

সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের খাদ্য পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ কমিটি খাদ্যবান্ধব কার্যক্রম আরও জোরদারকরণের বিষয়টি বিবেচনা করিতেছে। বিশেষ করিয়া কাবিখা-কাজের বিনিময়ে খাদ্য, জিডিএফসহ যেই সকল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বন্ধ রহিয়াছে, সেইগুলির কার্যক্রম চালুসহ চলমান কর্মসূচির পরিধি বৃদ্ধির বিষয়ও বিবেচনা করিতে হইবে। এই সকল কর্মসূচিতে অনিয়ম থাকিলে উহা দূর করিতে হইবে সত্য, তাই বলিয়া সম্পূর্ণ কর্মসূচি বন্ধ করা অনুচিত। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে গরিবের সুরক্ষা যেন অগ্রাধিকার না হারায়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র রমজ ন ব যবস ই সময়

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে জয় হচ্ছে বোয়িংয়ের