বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে গত ২১ জানুয়ারি। দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠকে অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে দুই দেশ। সেই সঙ্গে ঢাকা ও বেইজিংয়ের আলোচনায় উঠে এসেছে ভারত প্রসঙ্গও।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন। চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারত প্রসঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীন সফর নিয়ে আপনাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়ে গেছে। কাজেই ওটাতে আর না যাওয়া ভালো। ভারত নিয়ে চীনের সঙ্গে ও-রকম কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। ভারতের সঙ্গে চীনেরও যথেষ্ট ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জানি, ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপর তাদের মধ্যে ব্যবসা। এ নিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে।

গত ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বৈঠক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় দূতাবাসে সংবাদ সম্মেলনে এস জয়শঙ্করকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন 

করেন, মাইক ওয়ালজ ও মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা? জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে। আমি মনে করি না যে, এ বিষয়ে বিস্তারিত বলাটা সমীচীন হবে।’

গতকাল মতবিনিময়ে মার্কিন তহবিল বন্ধ নিয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ বাংলাদেশকেন্দ্রিক নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়, তবে আমাদের বা অন্য কোনো দেশের করণীয় তেমন কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন সহায়তা বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এটি চলমান। তবে কতদিন চলবে, জানা নেই। বন্ধ হলে অন্য দেশগুলোকে অনুরোধ করতে হবে সহায়তা বাড়ানোর জন্য।

ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার আমলের চুক্তিগুলো জাতির সামনে তুলে ধরা হবে কিনা– জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলো উন্মুক্ত। এখানে গোপন কিছু নেই। যদি অসামঞ্জস্য চুক্তির কথা বলেন, দরকষাকষি করেন, সেটা করবেন আগে; পরে নয়। আর চুক্তির পর পর্যালোচনা করতে হলে সেটা দুই পক্ষ মিলে করতে হবে। একতরফাভাবে বাতিল করতে পারবেন না। আদানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তা ভালো হয়নি। খারাপ হয়েছে। আমাদের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। তবে এ সমস্যা সমাধানে আদানির সঙ্গেই আলোচনা করতে হবে।

থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে ভিসা বন্ধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা রয়েছে। যে দেশে যাচ্ছে, তাদের কিছু নিয়ম আছে, তা আমরা মানি না। ফলে ভিসা দেয়, আবার বন্ধ করে রাখে। সামনে আরব আমিরাতে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। সে সময় ভিসা-সংক্রান্ত আলোচনা হবে।

অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লিবিয়ায় নৌকাডুবিতে নিহতের বড় একটি অংশ বাংলাদেশি উল্লেখ করে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, এটিকে আমরা মানবিক বিপর্যয় হিসেবে দেখি এবং সহানুভূতি প্রকাশ করি। এ ধরনের পরিস্থিতি থামাতে হবে।

এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আগামী এপ্রিলে ঢাকায় আসতে পারেন বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমরা এখনও ঠিক করিনি, কবে আসবেন। আমার অনুমান হয়তো এপ্রিলে আসবেন, এর আগে নয়।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট পরর ষ ট র উপদ ষ ট পরর ষ ট রমন ত র র পরর ষ ট র প রসঙ গ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিনল্যান্ড দখলের পরিকল্পনা গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র: পুতিন

গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার পরিকল্পনা দেশটি গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে বলে মনে করছে রাশিয়া। মস্কোর আশঙ্কা, ভবিষ্যতে বিভিন্ন সংঘাতের সময় আর্কটিক অঞ্চলকে পশ্চিমারা ব্যবহার করতে পারে। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এসব কথা বলেছেন।

গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর ডেনমার্কের স্বশাসিত দ্বীপটির দখল নিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ভাষ্য, ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার’ জন্য এই দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া প্রয়োজন ওয়াশিংটনের।

রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর মুরমানস্কে আর্কটিক ফোরামে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘(গ্রিনল্যান্ড দখলের বিষয়ে) আমেরিকার নতুন প্রশাসনের বক্তব্যকে ফাঁকা বুলি মনে করা হবে বড় ধরনের ভুল। এটা ওই ধরনের কথা নয়।’

পুতিন আরও বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে আমেরিকার গুরুত্বসহকারে নেওয়া পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কথা বলছি। এসব পরিকল্পনার দীর্ঘ দিনের ঐতিহাসিক যোগসূত্রতা রয়েছে।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, যদিও গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা প্রশ্নে রাশিয়া সরাসরি সম্পৃক্ত নয়, মস্কোর উদ্বেগের বিষয় হলো ন্যাটো জোটের দেশগুলো সম্ভাব্য সংঘাতের ক্ষেত্রে পৃথিবীর একেবারে উত্তরের অংশকে ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে ক্রমশ এগোচ্ছে।

ডেনমার্কের কাছ থেকে স্বাধীনতা চাইছে গ্রিনল্যান্ড। স্বশাসিত দ্বীপটিতে আগে থেকেই মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অব্যাহত হুমকির মধ্যেই শুক্রবার দেশটি সফর করার কথা ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের। তাঁর এই সফরের সমালোচনা করে আসছেন গ্রিনল্যান্ডের নেতারা।

আরও পড়ুনগ্রিনল্যান্ড দখলে নিতে ট্রাম্প কেন এত মরিয়া২৫ মার্চ ২০২৫

উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মাঝামাঝি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে গ্রিনল্যান্ড। আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া নিজেদের স্বার্থ নিয়ে তৎপর হচ্ছে, যখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সেখানকার সমুদ্রপথগুলোও উন্মুক্ত হচ্ছে।

গ্রিনল্যান্ড দখল নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছে ডেনমার্ক। দেশটি বলেছে, গ্রিনল্যান্ডের মানুষ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে চান না।

আরও পড়ুনট্রাম্প প্রথম নন, ৭৯ বছর আগেও গ্রিনল্যান্ড কিনতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র২৭ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ