Samakal:
2025-11-04@01:31:14 GMT

ফাইনালের নায়ক দেশি না বিদেশি 

Published: 7th, February 2025 GMT

ফাইনালের নায়ক দেশি না বিদেশি 

বিপিএলের সেই স্বর্ণালি সময়ের কথা আলাদা। যৌবনে খেলে গেছেন ক্রিস গেইল। বিমান থেকে নেমে মাঠে এসে হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি। মঈন আলী, এবিডি ভিলিয়ার্স, সুনীল নারিনরা বিপিএলের নাম উজ্জ্বল করেছেন। সে সময় বিদেশিদের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের টি২০ লিগে আগের জৌলুস নেই। সাদামাটা বিদেশি ক্রিকেটার নিয়ে হয়েছে খেলা। 

শাহিন শাহ আফ্রিদির পর বড় তারকা বলতে নিউজিল্যান্ডের জিমি নিশাম। পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার প্রথম পাঁচ ম্যাচ খেলে গেছেন। ফাইনাল খেলতে এসেছেন কিউই অলরাউন্ডার নিশাম। একাদশ বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটার আনায় এখন পর্যন্ত বরিশালই সেরা। বৈশ্বিক বিবেচনায় খুব বড় তারকা নন তারা। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেশি ক্রিকেটাররাই একাদশ বিপিএলের বড় তারকা। আজকের বিপিএল দেশি না বিদেশি ক্রিকেটাররা মাতায়, সেদিকে চোখ থাকবে সবার।

খেলোয়াড় ও খেলার মানে বরিশাল এখন পর্যন্ত আসরের সেরা দল। দেশি তারকায় ঠাসা দলটির রিজার্ভ বেঞ্চেও রয়েছেন জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন। বলার অপেক্ষা রাখে না বরিশালের ফাইনাল জয়ের নায়ক হওয়ার মতো ক্রিকেটারের অভাব নেই। তবে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় ডেভিড মালান ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হতে পারেন। ক্লিক করে গেলে তামিম ইকবালও সেরা ইনিংস খেলতে পারেন। তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাট জ্বলে উঠলে দেখা যেতে পারে নায়কোচিত পারফরম্যান্স। 

তবে টি২০ খেলায় কাইল মায়ার্সকে ফেলে দেওয়া যাবে না। অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়ে ফাইনালের নায়ক হতে পারেন তিনিও। গতবার যেমন শিরোপা জয়ে ভূমিকা ছিল তাঁর। জিমি নিশাম টি২০ খেলার ভেতরে থাকায় আশার ভেলায় ভাসাতে পারেন বরিশালের সমর্থকরা। সেদিক থেকে দেখলে বরিশালে দেশি-বিদেশি সমান। চিটাগং কিংসের ক্ষেত্রে সেটা খাটে না। কিংসের তারকা দেশি ক্রিকেটাররা। শরিফুল ইসলাম, শামীম হোসেন পাটোয়ারি সময়ের আলোচিত। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ছন্দ ফিরে পাওয়ায় চিটাগংয়ের জন্য ভালো। শামীম হোসেন তো বরিশালের বিপক্ষে বরাবরই ভালো খেলেন। তাই খাজা নাফাইয়া, গ্রাহাম ক্লার্ক, হুসাইন তালাত ও বিনুরা ফার্নান্দোর চেয়ে দেশিদের নায়ক হওয়ার সুযোগ বেশি।

খুলনার অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ সমকালকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এবার বিপিএলে দেশিরাই তারকা। মাঠের পারফরম্যান্সেও সে প্রভাব দেখা গেছে। ৫১১ রান নিয়ে শীর্ষে খুলনার নাঈম শেখ। ২৫ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে সেরা দুর্বার রাজশাহীর তাসকিন আহমেদ। বরিশালের অধিনায়ক তামিম আশা করেন দেশিদের কাঁধে ভর করে পাড়ি দেবেন ফাইনালের বৈতরণী। 

সেট একাদশে খুব বেশি পরিবর্তনের পক্ষে নন তিনি। রংপুর রাইডার্সের মতো ভুল করতে চায় না দলটির ম্যানেজমেন্ট। তাই প্লে-অফে বেশি বিদেশি আনার দিকে ঝোঁকেনি বরিশাল। তামিমের কণ্ঠেই শোনা যাক কারণটা, ‘আমি সেট দলে খুব একটা ওলটপালট করার পক্ষে না। যারা খেলছেন, এতদিন সার্ভিস দিয়েছেন তাদের সুযোগ পাওয়া উচিত।’ 

কোচ মিজানুর রহমান বাবুলেরও ভরসার জায়গায় দেশি ক্রিকেটার, ‘লোকাল ক্রিকেটাদের উন্নতি হয়েছে। টুর্নামেন্টে সবাই ভালো খেলছে। ফাইনালেও দেশিরা ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।’ নাজমুল হোসেন শান্ত ভালো না করায় রিজার্ভ বেঞ্চে। ডান-বাঁহাতির কৌশল কাজে লাগাতে তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তামিম। দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়াও ভালো। তাই ফাইনালে সাফল্যের ফুল ফোটাতে পারেন দেশিরাই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল প রফরম য ন স ব প এল

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • অ্যালবামের গল্প বলবে ‘পেনোয়া’