প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে ক্যানসার হাসপাতালের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
Published: 7th, February 2025 GMT
‘ক্যানসার দিবসের অনুষ্ঠান থাকায় চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হলো রোগীদের’ শিরোনামে ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর কবির।
প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল দেশের একমাত্র বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতাল। এখানে সারা দেশ থেকে অসংখ্য রোগী চিকিৎসা গ্রহণের জন্য আসেন। রোগীর চাপ অত্যধিক হওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ সীমিত জনবল দ্বারা সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আসছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বিশ্ব ক্যানসার দিবস। এ রোগ সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। ক্যানসার চিকিৎসায় জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ দিবসের গুরুত্ব এ হাসপাতালের ক্ষেত্রে অপরিসীম। এ হাসপাতালের রোগীর সেবার মান সমুন্নত রেখে প্রতিবছর এ দিবসটি পালন করা হয় এবং এ–সম্পর্কিত অনুষ্ঠানে রোগীসহ সরকারের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকেন। এ বছরও হাসপাতালের রোগী সেবা প্রদান কার্যক্রম চলমান রেখে উক্ত দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয়।’
৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালটিতে রোগীদের দেওয়া চিকিৎসার একটি সারসংক্ষেপ প্রতিবাদলিপিতে দেওয়া হয়। তাতে হাসপাতালে বিনা ভাড়ায়, ভাড়া বিছানায় ও শেয়ার্ড কেবিনে মোট ৩৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হন বলে জানানো হয়। এ ছাড়া বলা হয়, ওই দিন বহির্বিভাগে ১ হাজার ৮৯ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, মেডিকেল অনকোলোজি ও রেডিয়েশন অনকোলোজি বিভাগের ডে–কেয়ারে ২১৭ জন রোগী কেমোথেরাপি নিয়েছেন, ওয়ার্ডে ভর্তি করা রোগীদের মধ্যে ৯৭ জনকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে, জরুরি বিভাগে সেবা নিয়েছেন ২৪ জন এবং অস্ত্রোপচার করা হয়েছে ১০ জন রোগীকে।
প্রতিবাদপত্রের শেষ অংশে বলা হয়েছে, ‘পত্রিকায় যে ২২৩ নম্বর রুমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে কোনো ডাক্তার বসেন না। উক্ত কক্ষে নার্সগণ বসেন। সেখান থেকে রোগীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুযায়ী ২২০, ২২১ ও ২২২ নম্বর রুমে রোগীকে দেখার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪ ফেব্রুয়ারি বর্ণিত তিনটি রুমে মোট ৮০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। এখানে উল্লেখ্য, ওই দিন বিশ্ব ক্যানসার দিবসের অনুষ্ঠান থাকায় রোগী দেখায় কিছুটা বিলম্ব হয় এবং রোগীকে অপেক্ষা করতে বলা হয়; কিন্তু কিছু রোগী অপেক্ষা না করে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন দুজন চিকিৎসক রোগী দেখা অব্যাহত রাখেন। অনুষ্ঠানে আংশিক অংশগ্রহণ শেষে বাকি চিকিৎসকগণ উপস্থিত হয়ে ওই সময়ে উপস্থিত সব রোগী দেখা শেষ করেন। আপনাদের পত্রিকার সংবাদের শিরোনাম দেখে মনে হয়, যেন ওই দিন উল্লেখিত রুমসমূহে কোনো চিকিৎসাসেবাই প্রদান করা হয়নি। ফলে দেখা যাচ্ছে যে প্রকাশিত সংবাদটি অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিকর।’
প্রতিবেদকের বক্তব্য
এই প্রতিবেদনের জন্য প্রতিবেদক ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থান করেছেন। প্রতিবেদনে শুধু দ্বিতীয় তলার ২২০, ২২১, ২২২ ও ২২৩ নম্বর কক্ষে সেবা নিতে যাওয়া রোগীদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক সেখানে অবস্থান করে দেখেছেন, সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ২০০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। প্রতিবাদপত্রেই বলা হয়েছে, ‘৩টি রুমে মোট ৮০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন।’ অর্থাৎ প্রতিবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী সব রোগী চিকিৎসা পাননি।
প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘ওই দিন বিশ্ব ক্যানসার দিবসের অনুষ্ঠান থাকায় রোগী দেখায় কিছুটা বিলম্ব হয় এবং রোগীকে অপেক্ষা করতে বলা হয়; কিন্তু কিছু রোগী অপেক্ষা না করে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।’
তবে বেলা ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত প্রতিবেদক সেখানে অবস্থান করে দেখেছেন, নিজে থেকে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন সর্বোচ্চ পাঁচজন রোগী। চিকিৎসক–স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে বেশির ভাগ রোগীকে ডেকে ডেকে চিকিৎসা ছাড়াই বিদায় করেছেন ২২৩ নম্বর কক্ষের সামনে রোগীদের ফাইল জমা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা আবদুল আহাদ নামের একজন কর্মী। রোগীদের পরদিন আসতে বলেছেন তিনি।
প্রতিবাদপত্রে ২২০, ২২১ ও ২২২ নম্বর কক্ষ থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে লেখা হয়েছে। এই প্রতিবেদক বেলা ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে ২২০ ও ২২১ নম্বর কক্ষে কোনো চিকিৎসককে দেখেননি। এসব কক্ষে কোনো রোগীকেও ডাকা হয়নি। চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ২২২ নম্বর কক্ষে। সেই কক্ষের চিকিৎসকেরাও এসেছিলেন বেলা ১১টার দিকে। হাসপাতালের নিচতলার অনুসন্ধান কক্ষে দায়িত্বরত একজন কর্মীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কক্ষগুলোতে চিকিৎসকেরা রোগী দেখা শুরু করেন প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে।
এ ছাড়া প্রথম আলোর প্রতিবেদনের বেশির ভাগ অংশজুড়েই ছিল রোগীদের বক্তব্য। চিকিৎসা নিতে এসে যে দুর্ভোগের কথা তাঁরা বলেছেন, তা–ই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুনক্যানসার দিবসের অনুষ্ঠান থাকায় চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হলো রোগীদের০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক জন র গ কর ছ ন গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস