‘ক্যানসার দিবসের অনুষ্ঠান থাকায় চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হলো রোগীদের’ শিরোনামে ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর কবির।

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল দেশের একমাত্র বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতাল। এখানে সারা দেশ থেকে অসংখ্য রোগী চিকিৎসা গ্রহণের জন্য আসেন। রোগীর চাপ অত্যধিক হওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ সীমিত জনবল দ্বারা সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আসছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বিশ্ব ক্যানসার দিবস। এ রোগ সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। ক্যানসার চিকিৎসায় জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ দিবসের গুরুত্ব এ হাসপাতালের ক্ষেত্রে অপরিসীম। এ হাসপাতালের রোগীর সেবার মান সমুন্নত রেখে প্রতিবছর এ দিবসটি পালন করা হয় এবং এ–সম্পর্কিত অনুষ্ঠানে রোগীসহ সরকারের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকেন। এ বছরও হাসপাতালের রোগী সেবা প্রদান কার্যক্রম চলমান রেখে উক্ত দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয়।’

৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালটিতে রোগীদের দেওয়া চিকিৎসার একটি সারসংক্ষেপ প্রতিবাদলিপিতে দেওয়া হয়। তাতে হাসপাতালে বিনা ভাড়ায়, ভাড়া বিছানায় ও শেয়ার্ড কেবিনে মোট ৩৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হন বলে জানানো হয়। এ ছাড়া বলা হয়, ওই দিন বহির্বিভাগে ১ হাজার ৮৯ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, মেডিকেল অনকোলোজি ও রেডিয়েশন অনকোলোজি বিভাগের ডে–কেয়ারে ২১৭ জন রোগী কেমোথেরাপি নিয়েছেন, ওয়ার্ডে ভর্তি করা রোগীদের মধ্যে ৯৭ জনকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে, জরুরি বিভাগে সেবা নিয়েছেন ২৪ জন এবং অস্ত্রোপচার করা হয়েছে ১০ জন রোগীকে।

প্রতিবাদপত্রের শেষ অংশে বলা হয়েছে, ‘পত্রিকায় যে ২২৩ নম্বর রুমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে কোনো ডাক্তার বসেন না। উক্ত কক্ষে নার্সগণ বসেন। সেখান থেকে রোগীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুযায়ী ২২০, ২২১ ও ২২২ নম্বর রুমে রোগীকে দেখার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪ ফেব্রুয়ারি বর্ণিত তিনটি রুমে মোট ৮০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। এখানে উল্লেখ্য, ওই দিন বিশ্ব ক্যানসার দিবসের অনুষ্ঠান থাকায় রোগী দেখায় কিছুটা বিলম্ব হয় এবং রোগীকে অপেক্ষা করতে বলা হয়; কিন্তু কিছু রোগী অপেক্ষা না করে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন দুজন চিকিৎসক রোগী দেখা অব্যাহত রাখেন। অনুষ্ঠানে আংশিক অংশগ্রহণ শেষে বাকি চিকিৎসকগণ উপস্থিত হয়ে ওই সময়ে উপস্থিত সব রোগী দেখা শেষ করেন। আপনাদের পত্রিকার সংবাদের শিরোনাম দেখে মনে হয়, যেন ওই দিন উল্লেখিত রুমসমূহে কোনো চিকিৎসাসেবাই প্রদান করা হয়নি। ফলে দেখা যাচ্ছে যে প্রকাশিত সংবাদটি অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিকর।’

প্রতিবেদকের বক্তব্য

এই প্রতিবেদনের জন্য প্রতিবেদক ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থান করেছেন। প্রতিবেদনে শুধু দ্বিতীয় তলার ২২০, ২২১, ২২২ ও ২২৩ নম্বর কক্ষে সেবা নিতে যাওয়া রোগীদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক সেখানে অবস্থান করে দেখেছেন, সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ২০০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। প্রতিবাদপত্রেই বলা হয়েছে, ‘৩টি রুমে মোট ৮০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন।’ অর্থাৎ প্রতিবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী সব রোগী চিকিৎসা পাননি।

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘ওই দিন বিশ্ব ক্যানসার দিবসের অনুষ্ঠান থাকায় রোগী দেখায় কিছুটা বিলম্ব হয় এবং রোগীকে অপেক্ষা করতে বলা হয়; কিন্তু কিছু রোগী অপেক্ষা না করে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।’

তবে বেলা ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত প্রতিবেদক সেখানে অবস্থান করে দেখেছেন, নিজে থেকে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন সর্বোচ্চ পাঁচজন রোগী। চিকিৎসক–স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে বেশির ভাগ রোগীকে ডেকে ডেকে চিকিৎসা ছাড়াই বিদায় করেছেন ২২৩ নম্বর কক্ষের সামনে রোগীদের ফাইল জমা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা আবদুল আহাদ নামের একজন কর্মী। রোগীদের পরদিন আসতে বলেছেন তিনি।

প্রতিবাদপত্রে ২২০, ২২১ ও ২২২ নম্বর কক্ষ থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে লেখা হয়েছে। এই প্রতিবেদক বেলা ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে ২২০ ও ২২১ নম্বর কক্ষে কোনো চিকিৎসককে দেখেননি। এসব কক্ষে কোনো রোগীকেও ডাকা হয়নি। চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ২২২ নম্বর কক্ষে। সেই কক্ষের চিকিৎসকেরাও এসেছিলেন বেলা ১১টার দিকে। হাসপাতালের নিচতলার অনুসন্ধান কক্ষে দায়িত্বরত একজন কর্মীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কক্ষগুলোতে চিকিৎসকেরা রোগী দেখা শুরু করেন প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে।

এ ছাড়া প্রথম আলোর প্রতিবেদনের বেশির ভাগ অংশজুড়েই ছিল রোগীদের বক্তব্য। চিকিৎসা নিতে এসে যে দুর্ভোগের কথা তাঁরা বলেছেন, তা–ই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুনক্যানসার দিবসের অনুষ্ঠান থাকায় চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হলো রোগীদের০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক জন র গ কর ছ ন গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ