রাতের খাবার তো রাতেই খাবে মানুষ, এর মধ্যে আবার ‘কোন সময়’ কেন, তাই না? আসুন, দেখা যাক এখানে ‘কিন্তু’ আসে কেন।

ইউরোপ-আমেরিকায় সাধারণত সন্ধ্যা না হতেই রাতের খাবারের পাট চুকে যায়, যাকে বলে ‘ডিনার’। আমাদের দেশেও গ্রামের মানুষ সাধারণত সন্ধ্যায়ই রাতের খাবার খেয়ে নেন। অবশ্য আগে বিদ্যুৎহীন গ্রামে বেশি রাত পর্যন্ত না খেয়ে জেগে থাকার উপায়ও ছিল না। এখন বিদ্যুৎ থাকলেও আগের সেই অভ্যাস রয়ে গেছে অনেকের মধ্যেই, বিশেষত প্রবীণদের মধ্যে। কিন্তু শহরের মানুষের অভ্যাস প্রায় বিপরীত। একটু বেশি রাতে খাওয়ার চলই বেশি। তবে বেশি রাতে খাবার খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়। চিকিৎসকেরা বলেন, রাতের খাবার খাওয়ার সঠিক সময় আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর বেশ প্রভাব ফেলে। প্রশ্ন হচ্ছে, রাতের খাবার খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় কখন?

রাতে খাবার খাওয়ার স্বাস্থ্যকর সময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড উইমেন্স হাসপাতালের গবেষণা আছে। ২০২২ সালে যা বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সেল মেটাবলিজম’-এ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খাওয়ার উপকারিতা যতটা বলে জানতাম আমরা, এর উপকারিতা তারচেয়ে আরও বেশি।

রাতের খাবার কেন তাড়াতাড়ি খাবেন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং গবেষকদের আন্তর্জাতিক গ্রুপগুলোর গত বছরের তথ্য বলছে, বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটির বেশি মানুষ স্থূলতায় ভুগছে। যাদের মধ্যে আছে শিশু-কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও। স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করতে পরিমিত আহার আর শরীরচর্চার পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া। রাতে পরিশ্রম না থাকায় এমনিতেই বিপাকক্রিয়া মন্থর হয়ে যায়। তাই ভরপেট খেয়ে শুয়ে পড়লে হজমের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। এ ছাড়া দেরি করে খেলে খাবারে থাকা শর্করা পুরোপুরি হজম হতে পারে না। ফলে দেখা যায়, সকালে খালি পেটে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকটা বেড়ে গেছে। অন্য দিকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার বেশ আগে খাবার সেরে ফেললে খুব সহজেই হজম হয়ে যায়।

ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড উইমেন্স হাসপাতালের গবেষণায় দেখা গেছে, দেরিতে রাতের খাবার খাওয়ার ফলে কীভাবে স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, যারা তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খায়, তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম, ক্যালরি পোড়ানোর ক্ষমতা বেশি ও তাদের প্রত্যেকেরই রাতে ভালো ঘুম হয়। অন্য দিকে যারা দেরিতে রাতের খাবার খায়, তাদের ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং দেহে চর্বি সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়, যা ডায়াবেটিস ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

এ ছাড়া তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেলে ওজন কমার পাশাপাশি হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং দেহে গ্লুকোজ ও খারাপ কোলেস্টেরল লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিনের (এলডিএল) মাত্রা হ্রাস পায়।

রাতের খাবারের সময় ঠিক করুন

মানুষের জীবনযাপনের ধরন ভেদে একেকজনের খাবার খাওয়ার সময় একেক রকম হয়ে থাকে। তাই রাতের খাবার খাওয়ার কোনো আদর্শ সময় বলা কঠিন। তবে চিকিৎসক ও গবেষকেরা ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেতে বলেন।

আগেভাগে রাতের খাবার খাওয়ার উপকারিতা পেতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাবার সময় কিছুটা এগিয়ে আনতে চেষ্টা করুন। যেকোনো অভ্যাস গড়তে সময়ের প্রয়োজন। তাই হুট করে অভ্যাস পরিবর্তনের চেষ্টা করবেন না। বরং সময় নিয়ে প্রতিদিন একটু একটু করে রাতে খাওয়ার সময় এগিয়ে আনুন।

তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ