রাতের খাবার ঠিক কোন সময় খাওয়া সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর
Published: 8th, February 2025 GMT
রাতের খাবার তো রাতেই খাবে মানুষ, এর মধ্যে আবার ‘কোন সময়’ কেন, তাই না? আসুন, দেখা যাক এখানে ‘কিন্তু’ আসে কেন।
ইউরোপ-আমেরিকায় সাধারণত সন্ধ্যা না হতেই রাতের খাবারের পাট চুকে যায়, যাকে বলে ‘ডিনার’। আমাদের দেশেও গ্রামের মানুষ সাধারণত সন্ধ্যায়ই রাতের খাবার খেয়ে নেন। অবশ্য আগে বিদ্যুৎহীন গ্রামে বেশি রাত পর্যন্ত না খেয়ে জেগে থাকার উপায়ও ছিল না। এখন বিদ্যুৎ থাকলেও আগের সেই অভ্যাস রয়ে গেছে অনেকের মধ্যেই, বিশেষত প্রবীণদের মধ্যে। কিন্তু শহরের মানুষের অভ্যাস প্রায় বিপরীত। একটু বেশি রাতে খাওয়ার চলই বেশি। তবে বেশি রাতে খাবার খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়। চিকিৎসকেরা বলেন, রাতের খাবার খাওয়ার সঠিক সময় আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর বেশ প্রভাব ফেলে। প্রশ্ন হচ্ছে, রাতের খাবার খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় কখন?
রাতে খাবার খাওয়ার স্বাস্থ্যকর সময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড উইমেন্স হাসপাতালের গবেষণা আছে। ২০২২ সালে যা বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সেল মেটাবলিজম’-এ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খাওয়ার উপকারিতা যতটা বলে জানতাম আমরা, এর উপকারিতা তারচেয়ে আরও বেশি।
রাতের খাবার কেন তাড়াতাড়ি খাবেন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং গবেষকদের আন্তর্জাতিক গ্রুপগুলোর গত বছরের তথ্য বলছে, বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটির বেশি মানুষ স্থূলতায় ভুগছে। যাদের মধ্যে আছে শিশু-কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও। স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করতে পরিমিত আহার আর শরীরচর্চার পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া। রাতে পরিশ্রম না থাকায় এমনিতেই বিপাকক্রিয়া মন্থর হয়ে যায়। তাই ভরপেট খেয়ে শুয়ে পড়লে হজমের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। এ ছাড়া দেরি করে খেলে খাবারে থাকা শর্করা পুরোপুরি হজম হতে পারে না। ফলে দেখা যায়, সকালে খালি পেটে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকটা বেড়ে গেছে। অন্য দিকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার বেশ আগে খাবার সেরে ফেললে খুব সহজেই হজম হয়ে যায়।
ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড উইমেন্স হাসপাতালের গবেষণায় দেখা গেছে, দেরিতে রাতের খাবার খাওয়ার ফলে কীভাবে স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, যারা তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খায়, তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম, ক্যালরি পোড়ানোর ক্ষমতা বেশি ও তাদের প্রত্যেকেরই রাতে ভালো ঘুম হয়। অন্য দিকে যারা দেরিতে রাতের খাবার খায়, তাদের ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং দেহে চর্বি সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়, যা ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এ ছাড়া তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেলে ওজন কমার পাশাপাশি হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং দেহে গ্লুকোজ ও খারাপ কোলেস্টেরল লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিনের (এলডিএল) মাত্রা হ্রাস পায়।
রাতের খাবারের সময় ঠিক করুন
মানুষের জীবনযাপনের ধরন ভেদে একেকজনের খাবার খাওয়ার সময় একেক রকম হয়ে থাকে। তাই রাতের খাবার খাওয়ার কোনো আদর্শ সময় বলা কঠিন। তবে চিকিৎসক ও গবেষকেরা ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেতে বলেন।
আগেভাগে রাতের খাবার খাওয়ার উপকারিতা পেতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাবার সময় কিছুটা এগিয়ে আনতে চেষ্টা করুন। যেকোনো অভ্যাস গড়তে সময়ের প্রয়োজন। তাই হুট করে অভ্যাস পরিবর্তনের চেষ্টা করবেন না। বরং সময় নিয়ে প্রতিদিন একটু একটু করে রাতে খাওয়ার সময় এগিয়ে আনুন।
তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
শত্রুতার জেরে সাত গরুকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ, মারা গেছে ৩টি
গোপালগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জেরে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তিনটি গরু হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আরো চারটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে দুই কৃষক পরিবারের অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত শনিবার (১ নভেম্বর) মধ্যরাতে সদর উপজেলার সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কীভাবে গরুগুলো মারা গেছে তা খতিয়ে দেখতে নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পুলিশ বলছে, তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
আরো পড়ুন:
নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, ৩ পুলিশ আহত
গাইবান্ধায় ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা: মামলা দায়ের
এলাকাসাসী জানান, সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামের দুই ভাই মো. রাসুল গাজী ও হাসিব গাজী কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তারা খামার করে কয়েকটি গরু লালন-পালন করছেন। শনিবার মধ্যরাত সাড়ে ১২টার দিকে গরুর গোঙানির শব্দ শুনে পাশের বাড়ির এক আত্মীয় ছুটে গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন দুই ভাইকে। তারা স্থানীয় পশু চিকিৎসককে খবর দেন। সকাল হওয়ার আগেই তিনটি গরু মারা যায়। একই গোয়াল ঘরে থাকা একটি বড় ষাঁড়, একটি বাছুর ও অপর গোয়ালে থাকা দুটি ষাঁড় এখনো অসুস্থ।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো. রাসুল গাজী জানান, শত্রুতা করেই খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাদের গরুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। রাতেই টের পেয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও বাঁচানো যায়নি গরুগুলো। দুই ভাইয়ের আরো চারটি গরু অসুস্থ রয়েছে। এতে তাদের অন্তত ৫-৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
কারা তাদের গরু হত্যা করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসুল গাজী বলেন, “ঘর থেকে বের হয়ে কয়েকজনকে দৌঁড়ে যেতে দেখেছি। তাদের চেহারা দেখতে পারিনি। ফলে কাউকে চিনতে পারিনি।”
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাসিব গাজী বলেন, “কারো সঙ্গে আমাদের শত্রুতা থাকতেই পারে। এই অবলা পশুগুলো কার কী ক্ষতি করেছে। কোন অপরাধে এদের হত্যা করা হলো। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
এলাকাবাসী মো. ইমদাদ শেখ বলেন, “গত শনিবার রাতে বৃষ্টি হয়। এই সুযোগে গরুগুলোকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।”
গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সর্দার বলেন, “সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে কয়েকটি গরুকে বিষ খাওয়ানো হয় এমন খবর পেয়ে সকালে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। তিনি অসুস্থ গরুগুলোকে চিকিৎসা দেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পয়জনজনিত কারণেই গরুগুলো মারা গেছে। মারা যাওয়া গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই গরু তিনটির মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে তদন্ত শুরু করি। মারা যাওয়া গোরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/বাদল/মাসুদ