দশবার নিলামেও অবিক্রীত ৪৪ ‘ভিআইপি’ গাড়ি
Published: 8th, February 2025 GMT
গাড়িগুলোর কোনোটি ল্যান্ড ক্রুজার, মার্সিডিজ বেঞ্জ কিংবা রেঞ্জ রোভার। রয়েছে বিএমডব্লিউ, হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের মতো মূল্যবান গাড়িও। বিলাসবহুল এসব গাড়ির বেশির ভাগেরই দাম ১০ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু নিলামে তুললে এসব গাড়ি বিক্রি হয় না লোহার দামেও।
দীর্ঘ সময় পড়ে থেকে আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়া, সংরক্ষিত মূল্য বেশি থাকা, গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র না পাওয়া এবং নিলাম সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকার কারণে গাড়ির ন্যায্য শুল্ক পাচ্ছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কোনো কোনো গাড়ি ৮ থেকে ১০ বারও নিলামে তোলা হয়েছে। এর পরও ক্রেতা না মেলায় বাধ্য হয়ে ১২১টি গাড়ি এর আগে কেটে স্ক্র্যাপও করা হয়। এর পরও নিলামযোগ্য শতাধিক গাড়ি পড়ে আছে বন্দরে।
এই ধারা থেকে বের হতে এবার নতুন থাকতেই কিছু গাড়ির নিলাম ডেকেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সদ্য সাবেক হওয়া ২৪ এমপির গাড়িসহ ৪৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে এবার। সিন্ডিকেট ভাঙতে চট্টগ্রামের বাইরেও অনলাইনে নিলামে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এবারে নিলামে ওঠানো গাড়ির মধ্যে আছে জাপানের তৈরি ২৬টি ল্যান্ড ক্রুজার, পাঁচটি টয়োটা হ্যারিয়ার, দুটি টয়োটা র্যাভ ফোর ও একটি টয়োটা এস্কোয়ার। এসবের মধ্যে ২৪টি ল্যান্ড ক্রুজার একদম নতুন, যা শুল্কমুক্ত সুবিধায় সাবেক সংসদ সদস্যরা এনেছিলেন ৫ আগস্টের আগমুহূর্তে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের কারণে এসব গাড়ি আর শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাস করার সুযোগ পাননি তারা।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কোন পণ্য কত দামে বিক্রি হবে, সেটির সিদ্ধান্তও নেয় তারা। আমরা শুধু মাধ্যম হিসেবে দাপ্তরিক প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করে দিই।
নিলাম তত্ত্বাবধানকারী চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা বিজন কুমার তালুকদার বলেন, নিলামে একের পর এক গাড়ি তুললেও আমরা সেটা ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করতে পারি না। এখানে এনবিআরের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হয়। নিলামে অংশগ্রহণকারীর কাছে সংরক্ষিত মূল্যের কাছাকাছি দর না পেলে একটি গাড়ি একাধিকবার নিলামে তুলতে হয়। তবে এবারে যে ৪৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই নতুন।
গত ২৭ জানুয়ারি অনলাইনে এসব গাড়ি নিলামে তোলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ নিলামে অংশ নিতে পারবেন। নিলাম পণ্যও অনলাইনে প্রদর্শন করা হবে। ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বাক্স উন্মুক্ত করা হবে।
যে কারণে নিলামে ন্যায্য দাম মিলছে না
কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে আমদানি পণ্য নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ কাস্টমসের নিলাম শাখায় আরএল (অখালাসকৃত চালানের তালিকা) পাঠায়। নিলাম শাখা সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে নোটিশ দেয়। নোটিশের ১৫ দিনের মধ্যেও পণ্য সরবরাহ না নিলে সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিলাম না হওয়ার কারণে বন্দর ইয়ার্ডে কিংবা কনটেইনারে থাকা গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। চুরি হয়ে যায় গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ। আবার নিলামে বিক্রি হওয়া গাড়ির বাণিজ্য ছাড়পত্র দিতে গড়িমসি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। হয়রানি করে বিআরটিএ-ও। এসব কারণে নিলাম থেকে গাড়ি কিনতে চায় না অনেকে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এনবিআর যদি নিলাম প্রক্রিয়া সহজ করত এবং বাধাগুলো দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিত, তাহলে বিলাসবহুল গাড়ি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করতে হতো না। নিলামে মিলত ন্যায্য দর। সরকারের কোষাগারে জমা হতো শতকোটি টাকার রাজস্ব।
নিলামে নতুন গাড়ি
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, কাস্টমস শুল্ক-করসহ গাড়িগুলোর সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করেছে ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রথম নিলামে ৬০ শতাংশ বা এর বেশি সর্বোচ্চ দরদাতা এ গাড়ি কিনতে পারবেন। এ হিসাবে প্রতিটি গাড়ি কিনতে ন্যূনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দিতে হবে। ২৫ শতাংশ করসহ এই গাড়ির সর্বনিম্ন দাম পড়বে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির মাধ্যমে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবারে ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করছে। এ জন্য নতুন গাড়িগুলোর সংরক্ষিত দাম ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা।
৩৪ বিলাসবহুল গাড়ি ৯ কোটিতে বিক্রি
চট্টগ্রাম কাস্টমস এর আগে নিলামে বিক্রি করেছে ৩৪টি বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ির বিক্রয়মূল্য ছিল ৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ছিল মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, জাগুয়ার, টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভার, মিতসুবিশি, ফোর্ড, লেক্সাস ব্র্যান্ডের গাড়ি। অগ্রিম আয়কর ও মূল্য সংযোজন করসহ ২০২২ সালে বিক্রি করা প্রতিটি গাড়ির গড় বিক্রয়মূল্য ছিল ৩২ লাখ ৭ হাজার ১৩৪ টাকা। কার্নেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় বন্দরে আনা গাড়ির মধ্যে তখন ১০৮টি নিলাম দেয় কাস্টম হাউস। কিন্তু বিক্রি হয় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র গ ড় ক স টমস ক এসব গ ড় আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।