হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্রে প্রাণরসায়নবিদদের ঘাটতি ৯৩ শতাংশ
Published: 8th, February 2025 GMT
দেশের হাসপাতাল ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে ৯৩ শতাংশ প্রাণরসায়নবিদদের ঘাটতি রয়েছে। কাজেই দেশে রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান দুর্বলতার অন্যতম কারণ হিসেবে সঠিক ব্যক্তিকে কাজের সুযোগ না দেওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আজ শনিবার সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।
প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের’ একটি ধারা বাতিল ও ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টদের সাত দফা দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টস। এতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ল্যাবরেটরি প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
মূল প্রবন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টসের যুগ্ম আহবায়ক ফাতেমা খান মজলিস বলেন, দেশজুড়ে ৬৩৯টি সরকারি হাসপাতাল, ৫ হাজার ৫৭৭টি বেসরকারি হাসপাতাল, ১০ হাজার ৭২৭টি রোগনির্ণয় কেন্দ্র এবং ১৪০টি ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। অথচ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কোনো সরকারি হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে একজনও প্রাণরসায়নবিদ নেই। প্রাণরসায়নবিদদের হয়ে রোগ নির্ণয়ের কাজ করেন টেকনিশিয়ানরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ২০ হাজার প্রাণরসায়নবিদ দরকার। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকগুলোয় রোগনির্ণয়ে কাজ করেন মাত্র ১ হাজার ৪০০ জন প্রাণরসায়নবিদ। ৯৩ শতাংশ প্রাণরসায়নবিদদের ঘাটতি নিয়ে চলছে দেশের হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্রগুলো।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হোসেইন উদ্দিন শেখর বলেন, নীতিনির্ধারকদের অজ্ঞতার কারণে ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনে’ প্রাণরসায়নবিদদের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়েছে। চিকিৎসকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রোগনির্ণয়ের কিছু কাজ আছে, সেগুলো শুধু প্রাণরসায়নবিদেরা করতে পারেন।
প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের’ ধারা ৯–এর ৪ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, ‘সব ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি রিপোর্টে বিএমডিসি রেজিস্টার্ড বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্বাক্ষর থাকতে হবে।’ মূল উপস্থাপকসহ প্রায় সব আলোচক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, এ ধারা বৈষম্যমূলক, অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক।
আরও পড়ুনরোগনির্ণয়ে বায়োকেমিস্টদের অবদান সরকারিভাবে উপেক্ষিত২৩ জানুয়ারি ২০২৫অনলাইনে আলোচনায় যুক্ত হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিটিকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্র ও মলিকুলার বায়োলজির শিক্ষার্থী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ দেশে মেধা পাচার হওয়ার প্রধান কারণ কাজ করতে না দেওয়া। আমার জায়গা আমাকে দেন। আপনারা নিজেদের জায়গায় কাজ করুন।’
আয়োজকদের সাত দফা দাবির মধ্যে আছে—স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন থেকে বিতর্কিত ধারা বাদ, প্রাণরসায়নবিদদের জন্য নীতিমালা তৈরি, সব ল্যাবরেটরিকে অ্যাক্রিডিটেশনের আওতায় আনা, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রাণরাসায়নবিদ ও ল্যাবরেটরি সায়েন্টিস্ট নিয়োগ, জেলা পর্যায়ে এ ধরনের পদ সৃষ্টি, নীতি নির্ধারণে প্রাণরসায়নবিদ অন্তর্ভুক্ত করা এবং অর্গানোগ্রামের মাধ্যমে পদোন্নতির পথ খোলা রাখা।
আরও পড়ুনমানুষের রোগও নির্ণয় করতে পারে চ্যাটজিপিটি১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে মাত্র ৯টি প্রতিষ্ঠানের রোগনির্ণয় সক্ষমতা ও যোগ্যতা আন্তর্জাতিকভাব স্বীকৃত। এসব প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি পরিচালনা করেন প্রাণরসায়নবিদেরা। দেশের কোনো সরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের রোগনির্ণয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিয়ার রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) সোহেল আহমেদ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুনঅনলাইনে রোগনির্ণয়: ‘ডা.গুগল’ থেকে সাবধান৩১ অক্টোবর ২০২৩
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য ক জ কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।
এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”
তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস