রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী লাল ভবনটি রক্ষা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ১৫৪ বছরের পুরোনো এ ভবনের পাশে সাদা ভবনটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হওয়ার পর নতুন করে এ শঙ্কা জেগেছে। 

বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আবারও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তারা দাবি করছেন, লাল ভবনটি যে কোনো মূল্যে যেন রক্ষা করা হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাল ভবনটি ভাঙার পরিকল্পনা তাদের নেই। 

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৮৭১ সালে মাইনর স্কুল দিয়ে যেটির যাত্রা শুরু তা পূর্ণ রূপ পায় ১৮৯২ সালে। ১৮৯২ সালে তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার বাণিবহ স্টেটের জমিদার গিরিজা শংকর মজুমদার ও অভয় শংকর মজুমদার রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা মৌজায় দ্য গোয়ালন্দ ইংলিশ হাইস্কুল নাম দিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে নাম পরিবর্তন করে গোয়ালন্দ মডেল হাইস্কুল এবং সর্বশেষ রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় নামকরণ হয়। সময়ের পরিক্রমায় পুরোনো ভবনটির পাশে ও সামনে আরও তিনটি ভবন নির্মিত হয়। পরিত্যক্ত হয়ে যায় লাল ভবনটি। ২০১৩ ও ২০১৯ সালে দুই দফায় ভবনটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। দুইবারই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের বাধায় সম্ভব হয়নি। ২০১৩ সালে ভবনটি পরিদর্শন করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, রাজবাড়ীর এই লাল ভবনটি অসাধারণ একটি স্থাপনা। এর সঙ্গে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। এ ধরনের স্থাপনা, যেগুলো একশ বছরের পুরোনো ও ইতিহাস-ঐতিহ্য বহন করে তা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষণ করে থাকে। পরিদর্শন করে যাওয়ার পর সংরক্ষণের কাজ আর এগোয়নি। ২০১৯ সালে এ লাল ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তখনও প্রাক্তন ছাত্রদের বাধায় সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি আবারও ভবনটি ভেঙে ফেলার চিন্তাভাবনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ে সভাও হয়েছে। 

একাডেমিক ভবন-১ ভেঙে ফেলার খবরে ছুটে যান বিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাদের একজন কাজী শাখাওয়াত বলেন, লাল ভবনটি ঐতিহ্যের সাক্ষী। তারা বহু বছর ধরে চাইছেন এটি সংস্কার করা হোক। তা না করে এটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়। তারা কোনোমতেই এটি ভাঙতে দেবেন না বলে জানান তিনি। 

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক সাংবাদিক বাবু মল্লিক বলেন, লাল ভবন শুধু একটি ভবন নয়, রাজবাড়ীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে ভবনটি জড়িয়ে আছে। দেড়শ বছরের ইতিহাসের সঙ্গে এ ভবনটি সম্পর্কিত। ২০১১ সালের দিকে এ ভবনটি নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হলে তারা প্রতিবাদ করে বন্ধ করতে সক্ষম হন।

২০১৪ সালে তারা ভবনটি রক্ষার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ওই সময় ভবনটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ভবনটি সংরক্ষণের আশ্বাস দিলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ধীরে ধীরে ভবনটিকে চোখের অন্তরালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সে কারণেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, এটি ভেঙে ফেলা হতে পারে। এ জন্যই তারা ভবনটি রক্ষার জন্য এসেছেন। 

রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোফাজ্জেল হোসেন জানান, লাল ভবনের পাশে একাডেমিক ভবন-১ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানে নতুন ভবন হবে। লাল ভবন ভাঙার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি আরও জানান, মাস তিনেক আগে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা এসে পরিদর্শন করে গেছেন। ভবনটি সংরক্ষণের জন্য তিনি তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, তারা রাজবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী লাল ভবনটি পরিদর্শন করেছেন। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তারা পদক্ষেপ নেবেন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ল ভবনট ল ল ভবন

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়ালালামপুরে পেট্রোনাস টাওয়ার ৩–এ আগুন

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পেট্রোনাস টাওয়ার ৩–এ আগুন লেগেছে। আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকালে ভবনটির সবচেয়ে ওপরের তলায় একটি রেস্তোরাঁয় আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বারনামার বরাতে দ্য স্টার জানিয়েছে, কুয়ালালামপুর ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগের পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হাসান আসারি ওমর আগুন লাগার খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, আগুন লাগার ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।

ওমর বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করছেন।

এরই মধ্যে ভবনটিতে আগুন লাগার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বহুতল ভবনটি থেকে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।

পেট্রোনাস টাওয়ার ৩ ভবনটি ৬০ তলা। স্থানীয়ভাবে এটি ‘মেনারা কারিগালি’ নামেও পরিচিত। কুয়ালালামপুরের আইকনিক পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ঘেঁষে এ ভবন অবস্থিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পঞ্চগড়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল চালু করতে তহবিল গঠন, ১০ লাখ টাকা দিল জামায়াত
  • কুয়ালালামপুরে পেট্রোনাস টাওয়ার ৩–এ আগুন