জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তীব্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার বৃদ্ধি স্বাদু পানির মাছ চাষের জন্য বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

মাছ চাষে লাভবান হতে হলে ভালো মানের পোনা ও সঠিক পদ্ধতির প্রয়োজন। কিন্তু উপকূলের মাছচাষিরা নিম্নমানের পোনা ব্যবহার করায় কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাচ্ছিলেন না। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জে পুকুরে জলবায়ু সহনশীল মাছচাষের উদ্যোগ নেয় ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি। গতবছর জুলাই মাসে ব্র্যাকের এডাপটেশন ক্লিনিকের উদ্যোগে জলবায়ু সহনশীল মাছের পোনা হিসেবে দ্রুত বর্ধনশীল জি-৩ রুই,  তেলাপিয়া এবং অন্যান্য কার্পজাতীয় মাছের পোনা একটি প্রদর্শনী পুকুরে ছাড়া হয়, যা স্বল্প সময়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং জলবায়ু প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম। কলাপাড়া উপজেলায় নীলগঞ্জ, মহিপুর, চাকামইয়া, লতাচাপলী ইউনিয়নে প্রায় ৮৩টি পুকুরে এসব জলবায়ু সহনশীল মাছের পোনা ছাড়া হয়।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে পুকুরের পানির গুণমান নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়, যাতে মাছের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন নিশ্চিত হয়। এতে সম্পূরক খাদ্যের ব্যবহার কমে আসায় খরচও কমে যায় এবং মাছের উৎপাদন বাড়ে। বিশেষ করে বড় আকারের পোনা ছাড়ার ফলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা লবণাক্ততার প্রভাব পড়ার আগেই বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছচাষে কার্বণ নিঃসরণ মূলত সম্পূরক খাদ্য ব্যবহারের মাধ্যমে হয়। তবে জলবায়ু সহনশীল পদ্ধতিতে মাছচাষ করলে পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য— যেমন ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও জুপ্ল্যাংকটনের ওপর নির্ভর করা যায়, যা পরিবেশবান্ধব এবং খরচ সাশ্রয়ী।

মাছ চাষি কবির ব্যাপারী বলেন, “আগে আমার পুকুরে পাঙাস মাছের চাষ করতাম। কিন্তু মাছের সম্পূরক খাবারের দাম অনেক বেশি থাকায় লাভ হতো না। এখন বড় আকারের পোনা ছাড়ার ফলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, সম্পূরক খাবার লাগে না, লাভ বেশি হচ্ছে।”

এ প্রসঙ্গে ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক মো.

লিয়াকত আলী বলেন “ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি জলবায়ু সহনশীল মাছ চাষে নতুন পদ্ধতির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কৃষকদের এসব পদ্ধতির বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি অল্প সময় দ্রুত বর্ধনশীল মাছ চাষের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পুরানো মাছ চাষ পদ্ধতিতে নতুনত্ব নিয়ে আসা হয়েছে যাতে কম কার্বণ নির্গমন হয় ও বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতেও ভূমিকা রাখতে পারেন স্থানীয় কৃষকরা।”

স্থানীয় পর্যায়ে সহজেই ভালো মানের পোনা নিশ্চিত করতে মাছচাষিরা জলবায়ু সহনশীল মাছের হ্যাচারি স্থাপনের উদ্যোগ চান।

ঢাকা/সুমি/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জলব য জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ