চলতি মৌসুমে ভয়াবহ ভরাডুবি ঘটেছে ম্যানচেস্টার সিটির। একের পর এক হারে প্রিমিয়ার লিগ ধরে রাখার সম্ভাবনা একরকম শেষই হয়ে গেছে তাদের। চ্যাম্পিয়নস লিগেও প্লে-অফ নিশ্চিত করতে বেশ ধুঁকতে হয়েছে দলটিকে।

এখন শেষ ষোলোয় যেতে পেরোতে হবে রিয়াল মাদ্রিদের বাধা। দলটির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বলছে, কাজটা তাদের জন্য বেশ কঠিনই হতে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, গত কয়েক মৌসুম ইউরোপীয় ফুটবলে রাজত্ব করা দলটির এমন অবস্থা হলো কেন?

সিটির ব্যর্থতার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তবে গত কিছুদিন একটি কারণ বারবার ঘুরেফিরে এসেছে, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রদ্রির অনুপস্থিতি। সাম্প্রতিক সময়ে সিটির মিডফিল্ডে প্রাণভোমরা হয়ে ছিলেন রদ্রি।

আরও পড়ুনরদ্রির অনুপস্থিতিকে সেরা সময়ের মেসিকে না পাওয়ার সঙ্গে তুলনা গার্দিওলার২৩ নভেম্বর ২০২৪

নিচ থেকে দলকে অর্কেস্ট্রার কন্ডাক্টরের মতো চালিত করতে পারেন ব্যালন ডি’অরজয়ী এই ফুটবলার। ফলে এসিএল (অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট) চোটে রদ্রির মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেই সুর একেবারেই কেটে গেছে, যা এখন পর্যন্ত খুঁজে পায়নি দলটি।

দলের এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে সমর্থকসহ সংশ্লিষ্ট সবার চোখ এখন রদ্রির ফেরার দিকে। চোটে পড়ার সময়ই অবশ্য জানা গিয়েছিল, মৌসুম শেষ হওয়ার আগে আর ফেরা হচ্ছে না রদ্রির।

তবে আশার খবর হচ্ছে, এরই মধ্যে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন এই স্প্যানিয়ার্ড। এমনকি সম্প্রতি সুপার বৌলের অতিথি হিসেবে নিউ অরলিয়েন্সে যাওয়ার সময় সঙ্গে ম্যানচেস্টার সিটির দেওয়া একজন চিকিৎসকও নিয়ে গেছেন তিনি।

আরও পড়ুনরদ্রি নেই বলেই কি জিততে পারছে না সিটি২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিজের ফেরার প্রক্রিয়া নিয়ে রদ্রি বলেছেন, ‘আমি সুপার বৌলে আসতে পেরে আনন্দিত। তবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজেকে ফিরে পাওয়া। যে কারণে ভ্রমণের ধকল কাটাতে আমি ট্রেনিং সেশনও করেছি।’ এদিকে আজ রদ্রির একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে ম্যান সিটির ইনস্টাগ্রাম পেজে। যেখানে সিটি মিডফিল্ডারকে জিমে ব্যায়াম করতে দেখা গেছে।

এ মৌসুমে না ফিরলেও ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মৌসুমের শুরু থেকেই হয়তো মাঠে দেখা যাবে রদ্রিকে। এমনকি আগামী জুনে ক্লাব বিশ্বকাপেও তাঁর ফেরার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। তবে সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা গত সপ্তাহে বলেছেন, তিনি চান না রদ্রি তাড়াহুড়া করে ফিরে আবার ঝুঁকিতে পড়ুক। বরং পুরোপুরি ফিট রদ্রিকেই দলে পেতে চান সিটি কোচ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ