দারিদ্র্যের বাধা পেরিয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী চাঁদনী খাতুন। পরিবার ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পুরণের পথ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো তার।

চাঁদনী শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের মাদলা গ্রামের হতদরিদ্র রিকশা চালক চাঁদ আলী ও মিল শ্রমিক সাজেদা খাতুনের মেয়ে। চাঁদনীরা দুই বোন এক ভাই। 

স্কুল ও কলেজের প্রতিটি পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন চাঁদনী খাতুন। চাঁদনী খাতুন ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় পরিবারের লোকজনসহ এলাকার সবাই অত্যন্ত খুশি।

২০১৬ সালে কাকিলা-মাদলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চাঁদনী খাতুন পিএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হতে চাইলে তার বাবা চাঁদ আলী দরিদ্রতার কারণে তাকে আর লেখাপড় করাতে রাজি ছিলেন না। অনেকটা জোর করেই চাঁদনী পোতাজিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ক্লাসে ভালো পড়ালেখা দেখে শিক্ষকরা চাঁদনীর প্রতি মনোযোগী হয়ে ওঠেন। 

অর্থাভাবে যখন তার পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পরে তখন তার শিক্ষকরা তাকে বিনা বেতনে প্রাইভেট ফিসহ পড়ার সুযোগ করে দেন। ফলে চাঁদনী সেখান থেকে ২০১৯ সালে জেএসসি ও ২০২২ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। মেধাবী মেয়ে চাঁদনীর বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ছিল প্রায় দুই কিলোমিটার। রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতেন। এসএসসি পাশের পর অর্থাভাবে চাঁদনীর পড়ালেখা আবারও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে গ্রামের সচেতন মহল ও শাহজাদপুর সরকারি অনার্স কলেজের শিক্ষক আসমত আলীর সহযোগিতায় ওই কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। 

অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় শিক্ষকরা কলেজের বেতন ও প্রাইভেট ফ্রী করে দিয়েছিলেন। এরপর শিক্ষক ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় রাজশাহীতে কোচিং করেন এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ৩১৯৯নং মেধা তালিকায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

চাঁদনী খাতুন বলেন, “আমাদের ৪ শতক জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই। আমি সবার সহযোগিতায় মেডিকেলের পড়ালেখা শেষ করতে চাই।” 

২০২৪ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার বাবা-মা থাকার কষ্ট দূর করতে ৯০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি টিনের ঘর তৈরি করেছেন। সেই ঘরে সবাই মিলে গাদাগাদি করে বসবাস করে।

দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা চাঁদনীর বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল একমাত্র মেয়ে পড়ালেখা শেষ করে দেশের সেবা করবে। চাঁদনীরও স্বপ্ন ছিল মানুষের পাশে থাকার। 

চাঁদনী বলেন, “আমি ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় রোগীদের সেবা করতে চাই।”

চাঁদনীর বাবা চাঁদ আলী বলেন, “আমি প্রতিদিন সকালে রিকশা নিয়ে কাজে সন্ধানে বের হই। ওর মা সকালে স্থানীয় একটি মিলে শ্রমিকের কাজে যায়। ফলে চাঁদনীকেই রান্নাসহ সংসারের যাবতীয় কাজ শেষে পড়ালেখা করতে হয়েছে। মেয়েকে একটু ভালো কিছু খেতে ও ভালো জামা কাপড় পরাতে পারিনি। তার পরেও মেয়ে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় আমি অনেক খুশি। অনেক কষ্ট হলেও মেয়েকে মেডিকেলে পড়াব। আমার মেয়ে বড় হয়ে যেন জনগণের সেবা করতে পারে, এই কামনা করছি।”

চাঁদনীর মা সাজেদা বেগম বলেন, “চাঁদনী আমাদের বড় মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই সে অনেক মেধাবী। কিন্তু দারিদ্র্যের জন্য আমরা তাকে তেমন সহযোগিতা করতে পারিনি। তারপরও তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। আমাদের স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাব। শিক্ষকরা ওকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই সাফল্য অর্জন করায় আমি ও গ্রামের সকলেই অত্যন্ত খুশি।”

শাহজাদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক আসমত আলী বলেন, “চাঁদনী অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় আমরা আগ্রহ করেই তাকে আমাদের কলেজে বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ করে দেই। এ কলেজের অধ্যক্ষসহ প্রতিটি শিক্ষক ওর প্রতি খুবই যত্নবান ছিলেন। তারা ওকে ফ্রি তে প্রাইভেট পড়িয়েছেন। চাঁদনীর শিক্ষকরা বই পর্যন্ত কিনে দিয়েছেন। তার এই সাফল্যে সত্যি আমরা গর্বিত।”

শাহজাদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমার উচ্চতর গণিত ক্লাসে ওকে খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে দেখে ওর প্রতি নজর বেড়ে যায়। ক্লাস ও বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে থাকলে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। চাঁদনী আমাদের গর্ব। সে ভালো রেজাল্ট করে আমাদের কলেজের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছে। তাকে আমরা সব সময়ই সহযোগিতা করতাম। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা খুশি। চাঁদনীর মেডিকেলে পড়তে আর্থিক সহযোগিতাসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সহয গ ত য় শ ক ষকর আম দ র কল জ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল: স্ত্রীর দাবি
  • রূপালী লাইফের আর্থিক হিসাবে ৬৯ কোটি টাকার গরমিল
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইউনিটে ভর্তি: মাইগ্রেশন, বিষয় ও প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ প্রকাশ
  • হেলথ টেকনোলজি কোর্সে ভর্তি, অপেক্ষমাণ থেকে তৃতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল ঢাকা ইন্স্যুরেন্স
  • সোনালী ও রূপালী মুনাফায়, অগ্রণী ও জনতা লোকসানে