রুখতে পারেনি দারিদ্র্য, সুযোগ পেলেন মেডিকেলে ভর্তির
Published: 9th, February 2025 GMT
দারিদ্র্যের বাধা পেরিয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী চাঁদনী খাতুন। পরিবার ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পুরণের পথ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো তার।
চাঁদনী শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের মাদলা গ্রামের হতদরিদ্র রিকশা চালক চাঁদ আলী ও মিল শ্রমিক সাজেদা খাতুনের মেয়ে। চাঁদনীরা দুই বোন এক ভাই।
স্কুল ও কলেজের প্রতিটি পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন চাঁদনী খাতুন। চাঁদনী খাতুন ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় পরিবারের লোকজনসহ এলাকার সবাই অত্যন্ত খুশি।
২০১৬ সালে কাকিলা-মাদলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চাঁদনী খাতুন পিএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হতে চাইলে তার বাবা চাঁদ আলী দরিদ্রতার কারণে তাকে আর লেখাপড় করাতে রাজি ছিলেন না। অনেকটা জোর করেই চাঁদনী পোতাজিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ক্লাসে ভালো পড়ালেখা দেখে শিক্ষকরা চাঁদনীর প্রতি মনোযোগী হয়ে ওঠেন।
অর্থাভাবে যখন তার পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পরে তখন তার শিক্ষকরা তাকে বিনা বেতনে প্রাইভেট ফিসহ পড়ার সুযোগ করে দেন। ফলে চাঁদনী সেখান থেকে ২০১৯ সালে জেএসসি ও ২০২২ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। মেধাবী মেয়ে চাঁদনীর বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ছিল প্রায় দুই কিলোমিটার। রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতেন। এসএসসি পাশের পর অর্থাভাবে চাঁদনীর পড়ালেখা আবারও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে গ্রামের সচেতন মহল ও শাহজাদপুর সরকারি অনার্স কলেজের শিক্ষক আসমত আলীর সহযোগিতায় ওই কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।
অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় শিক্ষকরা কলেজের বেতন ও প্রাইভেট ফ্রী করে দিয়েছিলেন। এরপর শিক্ষক ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় রাজশাহীতে কোচিং করেন এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ৩১৯৯নং মেধা তালিকায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
চাঁদনী খাতুন বলেন, “আমাদের ৪ শতক জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই। আমি সবার সহযোগিতায় মেডিকেলের পড়ালেখা শেষ করতে চাই।”
২০২৪ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার বাবা-মা থাকার কষ্ট দূর করতে ৯০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি টিনের ঘর তৈরি করেছেন। সেই ঘরে সবাই মিলে গাদাগাদি করে বসবাস করে।
দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা চাঁদনীর বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল একমাত্র মেয়ে পড়ালেখা শেষ করে দেশের সেবা করবে। চাঁদনীরও স্বপ্ন ছিল মানুষের পাশে থাকার।
চাঁদনী বলেন, “আমি ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় রোগীদের সেবা করতে চাই।”
চাঁদনীর বাবা চাঁদ আলী বলেন, “আমি প্রতিদিন সকালে রিকশা নিয়ে কাজে সন্ধানে বের হই। ওর মা সকালে স্থানীয় একটি মিলে শ্রমিকের কাজে যায়। ফলে চাঁদনীকেই রান্নাসহ সংসারের যাবতীয় কাজ শেষে পড়ালেখা করতে হয়েছে। মেয়েকে একটু ভালো কিছু খেতে ও ভালো জামা কাপড় পরাতে পারিনি। তার পরেও মেয়ে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় আমি অনেক খুশি। অনেক কষ্ট হলেও মেয়েকে মেডিকেলে পড়াব। আমার মেয়ে বড় হয়ে যেন জনগণের সেবা করতে পারে, এই কামনা করছি।”
চাঁদনীর মা সাজেদা বেগম বলেন, “চাঁদনী আমাদের বড় মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই সে অনেক মেধাবী। কিন্তু দারিদ্র্যের জন্য আমরা তাকে তেমন সহযোগিতা করতে পারিনি। তারপরও তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। আমাদের স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাব। শিক্ষকরা ওকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই সাফল্য অর্জন করায় আমি ও গ্রামের সকলেই অত্যন্ত খুশি।”
শাহজাদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক আসমত আলী বলেন, “চাঁদনী অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় আমরা আগ্রহ করেই তাকে আমাদের কলেজে বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ করে দেই। এ কলেজের অধ্যক্ষসহ প্রতিটি শিক্ষক ওর প্রতি খুবই যত্নবান ছিলেন। তারা ওকে ফ্রি তে প্রাইভেট পড়িয়েছেন। চাঁদনীর শিক্ষকরা বই পর্যন্ত কিনে দিয়েছেন। তার এই সাফল্যে সত্যি আমরা গর্বিত।”
শাহজাদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমার উচ্চতর গণিত ক্লাসে ওকে খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে দেখে ওর প্রতি নজর বেড়ে যায়। ক্লাস ও বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে থাকলে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। চাঁদনী আমাদের গর্ব। সে ভালো রেজাল্ট করে আমাদের কলেজের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছে। তাকে আমরা সব সময়ই সহযোগিতা করতাম। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা খুশি। চাঁদনীর মেডিকেলে পড়তে আর্থিক সহযোগিতাসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সহয গ ত য় শ ক ষকর আম দ র কল জ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ