নারীর ফুটবল খেলা আয়োজনে বাধাদানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
Published: 9th, February 2025 GMT
রংপুর, দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে নারীদের ফুটবল খেলার আয়োজনে বাধাদানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন নারী আন্দোলনের কর্মীরা। তাঁরা ঘরে-বাইরে, মাঠে ও সাইবার জগতে নারীর নিরাপত্তা চেয়েছেন।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
নারী আন্দোলনের কর্মীদের উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভা। সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা নিত্রা, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, আলোকচিত্রী জান্নাতুল মাওয়া, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক তানিয়াহ মাহমুদা তিন্নী, অধিকারকর্মী জাকিয়া শিশির, হিল উইমেনস ফেডারেশনের সেক্রেটারি রীতা চাকমা, লেখক লাবণী মণ্ডল, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সুস্মিতা রায় সুপ্তি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ নাজিফা জান্নাত, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি নুজিয়া হাসিন রাশা এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের অর্থ সম্পাদক নওশীন মুস্তারিন সাথী।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সম্প্রতি রংপুরের তারাগঞ্জে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অপতৎপরতায় নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে একই ঘটনা দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে ঘটেছে। অথচ কিছুদিন আগেই সরকার নারী ফুটবল খেলোয়াড়দের একুশে পদকে ভূষিত করেছে।
মৌলবাদের এই অপতৎপরতা দেশব্যাপী নারীদের কোণঠাসা করছে বলে মনে করছেন বক্তরা। তাঁরা বলেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের উপদেষ্টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং নারী অধিকারকর্মী থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারীকে সাইবারসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ গণ-অভ্যুত্থান কোনো একক লিঙ্গের, একক ধর্মের এবং একক জাতির মানুষের ছিল না।
বক্তারা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরের শাসনামলে নারীর অবস্থা যেমন ছিল, ফ্যাসিবাদ হটিয়ে গণ-অভ্যুত্থান হওয়ার পরেও নারীর তেমনই অবস্থা আছে। এখনো নারীর ওপর নিপীড়ন ও বিচারহীনতার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
প্রতিবাদ সমাবেশে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো রংপুর, দিনাজপুর, জয়পুরহাটে নারীর ফুটবল খেলার আয়োজনে বাধাদানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং খেলার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; ঘরে-বাইরে, মাঠে ও সাইবার জগতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সম্পত্তিতে নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুনতারাগঞ্জে নারীদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধের ডাক, উত্তেজনা ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ফ টবল খ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা প্রতিরোধ করা হবে: মহিলা পরিষদ
বর্তমানে নারীর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চলছে। নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ ও ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠী সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তবে সমাজ ও নারী আন্দোলন এই অপতৎপরতাকে প্রতিরোধ করবে। সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে এই ক্ষোভ প্রকাশ করে। সংগঠনের নেতারা বলেন, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব। নারীর প্রতি বৈষম্য-নির্যাতন দূর করার পক্ষে সমাজের বড় একটি অংশ। তারা চুপ থাকবে না।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘সাম্প্রতিক সময়ে নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বক্তব্য’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে বলা হয়, নারীর পোশাক, সাজসজ্জা, চলাফেরা নিয়ে প্রকাশ্যে অপমান করা হচ্ছে। গণপরিসরে নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। নারীর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিকৃতিতে কালি লেপন, তাঁর নামে করা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য একটি পক্ষ আন্দোলন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা বেড়ে চলেছে। ১৫টি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, এ বছরের শুধু মার্চ মাসে ৪৪২ জন নারী ও কন্যা ধর্ষণ, হত্যা, নিপীড়ন, আত্মহত্যাসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
মূল বক্তব্যে আরও বলা হয়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রতিবেদনে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় পাঁচ দশকের নারী আন্দোলনের অবাস্তবায়িত মূল দাবিগুলোর প্রতিফলন ঘটেছে। সুপারিশ পেশের সঙ্গে সঙ্গে একটি গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। মহিলা পরিষদ আশা করে, এই অপতৎপরতা ও অপকৌশলের বিরুদ্ধে নারীর মানবাধিকার রক্ষায় সরকার, সব রাজনৈতিক দল ও সমাজ এগিয়ে আসবে। নারীবিদ্বেষী প্রচার বন্ধ, নারী সহিংসতা ও মব সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়াসহ ৭ দফা সুপারিশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অবরুদ্ধ রাখার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অগ্রহণযোগ্য। নারীবিষয়ক কমিশনের সুপারিশকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলবে বলেছে একটি গোষ্ঠী। কে কাকে ছুড়ে ফেলবে, সেটা আমরা দেখব। সমতাবিষয়ক সব সুপারিশ সরকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরবর্তী সময়ে যে রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করবে, তাদেরও ২০৩০ সাল পর্যন্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে নারীর অগ্রগতির জন্য কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, এ দেশের জনগণের ওপর নারী সংগঠনগুলোর আস্থা আছে। সমাজের একটি পক্ষ ও গণমাধ্যম নারী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে, নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছে। নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীর অপতৎপরতাকে প্রতিরোধ করবে সমাজ ও নারী আন্দোলন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আশির দশক থেকে মহিলা পরিষদ অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সম্পত্তি, উত্তরাধিকার, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদে নারী-পুরুষকে সমতা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। দত্তক আইনে সমতা চেয়েছে। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদের (সিডো) দুটি ধারার ওপর বাংলাদেশ সরকারের সংরক্ষণ প্রত্যাহার চেয়েছে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে এসব দাবির প্রতিফলন রয়েছে। তবে অতীতেও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠীর আপত্তি ছিল। এবার কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধেও তাদের সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব। বিভিন্ন মতবাদ থাকবেই। রাষ্ট্র পরিচালনায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের উচিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও মাসুদা রেহানা বেগম। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া বেগম শান্তি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।