যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে কাজের অভিযোগে ৬০৯ অভিবাসী গ্রেপ্তার
Published: 10th, February 2025 GMT
যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে কাজ করার অভিযোগে জানুয়ারিতে ৬০৯ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির অভিবাসন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। যা এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি। খবর এএফপির।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন লেবার সরকারের অবৈধ অভিবাসন এবং মানবপাচারকারী চক্র মোকাবেলা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের আটক করা হয়।
সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৬০৯ জনকে আটক করা হয়েছে। যে সংখ্যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৩৫২ জন। নেইল বার, রেস্টুরেন্ট, কার ওয়াস এবং দোকানসহ ৮০০টিরও বেশি জায়গায় এই অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আরো পড়ুন:
আপত্তিকর বার্তা দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী বরখাস্ত
‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে জাইমা রহমান
গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন পথ দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন, যার মধ্যে ছিল ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া এবং বৈধভাবে মঞ্জুর করা ভিসার অতিরিক্ত সময় ধরে অবস্থান করা।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কেবল জানুয়ারির ৩১ দিনেই ১ হাজার ৯৮ জন ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে।
২০২৪ সালে কিয়ার স্টারমার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তাৎক্ষণিকভাবে তার রক্ষণশীল পূর্বসূরী ঋষি সুনাকের যুক্তরাজ্যে অনথিভুক্ত অভিবাসন রোধ করার পরিকল্পনা বাতিল করে নতুন আগতদের রুয়ান্ডায় নির্বাসিত করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেন, “নিয়োগকর্তারা অনেক দিন ধরেই অবৈধ অভিবাসীদের শোষণ করছেন। অনেক লোক অবৈধভাবে এসে কাজ করছেন। তাদের বিরুদ্বে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তাকে দুর্বল করে দেওয়া এবং দীর্ঘদিন ধরে পার পেয়ে যাওয়া অপরাধী চক্রগুলোকে ধ্বংস করার জন্য আমরা নতুন কঠোর আইনের পাশাপাশি রেকর্ড মাত্রায় আইনের প্রয়োগ বৃদ্ধি করছি।”
গত বছরের জুলাই মাসে লেবার সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত, ৫ হাজার ৪২৪টি পরিদর্শনের মাধ্যমে ৩ হাজার ৯৩০ জনকে অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে।
এছাড়া, মোট ১ হাজার ৯০টি দেওয়ানি জরিমানার নোটিশও জারি করেছে। দোষী সাব্যস্ত হলে, নিয়োগকর্তাদের প্রতি কর্মীর জন্য ৬০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের বৃহত্তম ‘রিটার্ন’ ফ্লাইটগুলোর মধ্যে চারটিও পরিচালিত হয়েছে, ৮০০ জনেরও অবৈধ অভিবাসীকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অবৈধ অভিবাসী কমানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার একটি নতুন সীমান্ত নিরাপত্তা কমান্ডও প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইউরোপোলসহ ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে এ বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।