সাতক্ষীরায় ঘরের মধ্যে চেতনানাশক ছিটিয়ে চারজনকে অজ্ঞান করে স্বর্ণ ও টাকা লুট
Published: 10th, February 2025 GMT
সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ঘরের মধ্যে চেতনানাশক ছিটিয়ে একটি পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞান করার পর সোনার গয়না ও টাকা লুট করা হয়েছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার দক্ষিণ চুপড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অচেতন অবস্থায় ওই পরিবারের চার সদস্যকে আজ সোমবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অচেতন ব্যক্তিরা হলেন দক্ষিণ চুপড়িয়া গ্রামের সার ও কীটনাশক বিক্রেতা মুজিবর রহমান (৫৫), তাঁর স্ত্রী মেহেরুন্নেছা (৪৫), তাঁদের মেয়ে ফারজানা আক্তার (২৫) ও জামাতা মনির খান (৩০)। এ সময় ঘরে ফারজানা ও মনিরের কন্যাসন্তান সওদামণি থাকলেও সে বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত আছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন মুজিবুর রহমানের ভাতিজা ও ঝাউডাঙা ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, বাড়ির পাশে সার ও কীটনাশকের একটি দোকান আছে তাঁর চাচার। গতকাল রাত ১১টার পর তাঁর চাচা মুজিবর রহমান, চাচি মেহেরুন্নেছা, চাচাতো বোন ফারজানা ও ভগ্নীপতি মনির খান খাওয়াদাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তাঁর আরেক চাচাতো ভাইয়ের ছেলে অসুস্থ হলে মুজিবর রহমানকে ডাকাডাকি করা হয়। তবে ঘর থেকে কারও সাড়া পাওয়া যায়নি।
আজ সকালে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক মুজিবুর রহমানের দোকানে সার কিনতে এসে না পেয়ে বাড়িতে যান। তখন দেখা যায়, মুজিবুর রহমান দরজার মুখে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে ঘরে ঢুকে দেখেন, সবাই ঘরের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। দোতলার চিলেকোঠার দরজা ও নিচের ঘরের জানালা খোলা। ওয়ার্ডরোব, আলমারি, শোকেস ভাঙা। বিভিন্ন জিনিসপত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। ধারণা করা হয়, গভীর রাতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা জানালা দিয়ে চেতনানাশক ছিটিয়ে পরিবারের চারজনকে অচেতন করে সোনার গয়না, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছেন। তবে মুজিবর রহমানের চেতনা না ফেরা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে না।
মুজিবুর রহমানের শ্যালক ঝাউডাঙা ডিগ্রি কলজের শিক্ষক মো.
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অসীম কুমার সরকার বলেন, মুজিবর রহমানসহ তাঁদের পরিবারের চারজনের চেতনা কখন ফিরবে, তা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে মনির খানের শিশুসন্তান আশঙ্কামুক্ত আছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামিনুল হক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ও সদর হাসপাতালে উপপরিদর্শক মেহেদী হাসানকে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ ব র রহম ন স ন র গয়ন র রহম ন র পর ব র র র সদস
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে: সলিমুল্লাহ খান
লেখক ও অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, আমাদের বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে হবে, পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। পুলিশের যে পজিশনে থাকার কথা ছিল সে পজিশনে নেই। পুলিশ যেই আইনে চলে সেখানে পদে পদে সমস্যা আছে। এসব বিষের মাঝেমধ্যে আলোচনা করা উচিত এবং খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, সমাজেরও অংশ। পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তির মূলে যেতে হবে, এটা হলো জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভক্তি। আর এই সমস্যার সমাধান হলো গণতন্ত্র।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইজিপি আব্দুল কায়ুম বলেন, এত বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেল, একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল; ছাত্র-জনতা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছে, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু সঠিকভাবে আমরা এগোতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এই যে একটা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক স্বপ্ন, এই স্বপ্ন যেন ব্যর্থ না হয়। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম, তা কল্পনা করা যায় না। আগেও গণতন্ত্র ছিল না, কিন্তু আমরা সেবা দিতে পেরেছি। তবে গত ১৫ বছরের মতো আমরা দারোয়ানে পরিণত হইনি। গণতন্ত্র থাকলে যে সুবিধাটা হয়, সেটা হলো, পাঁচ বছর পর আপনাকে ভোটারদের কাছে যেতে হবে এবং মেন্ডেট নিতে হবে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। ২০০৯ সালের নির্বাচন যে খুব নিখুঁত হয়েছে, তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না। তার পরবর্তী তিনটা নির্বাচনে যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। যখন একচ্ছত্র ক্ষমতা এসে যায় তখন প্রশাসন ভেঙে পড়ে। এটা ভয়, খুন-গুম ও সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এ সময়টাতে শুধু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা না সব সেক্টরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অতি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়েছে, আমাদের আবার নতুন করে মানুষের সেবা দিতে হবে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং করতে হবে।
সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা পুলিশ সংস্কার কমিশনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে বলেন, সংস্কার কমিশন পুলিশের বিষয়ে বলছে, অনেক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার–যদি এই কথা বলা হয়, তাহলে এই সংস্কার কমিশনের কী দরকার। এই পুলিশ কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন নিয়ে কিছু বলে না গণ্ডগোল কিন্তু ওইখানেও আছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে। যাদের সুবাদে আমরা আজ কথা বলতে পারছি, সেটা কতদিন বলতে পারবো সেটার কোনও গ্যারান্টি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে সম্ভব না।
তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কিন্তু ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার। এটা বদলানো পুলিশের হাতে নাই। পুলিশের অনেক অফিসাররা দুর্নীতিতে জড়িয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন– নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল হুদা, এপেক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির মঞ্জু, কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সায়মা চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা।