সমাজ এক মহাগ্রন্থ। যেখানে প্রত্যেক মানুষ, প্রতিটি ঘটনা একেকটি গল্প। গল্পকার ও গবেষক নূরুননবী শান্ত সমাজ-গ্রন্থের নিবিষ্ট, তীক্ষ্ণ পাঠক। নিবিড় পর্যবেক্ষক হিসেবে তিনি সমাজের অন্তর্নিহিত ও মনস্তাত্ত্বিক ভাঁজ উন্মোচন করেন। অন্তর্দৃষ্টির বলে তিনি হয়ে ওঠেন সমাজ, সংস্কৃতি ও মানুষের জটিল সূত্রের আবিষ্কারক।

নূরুননবী শান্ত নিছক গল্প ফাঁদেন না; বরং তাঁর সামাজিক অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ও বিশ্লেষণ দিয়ে আখ্যান ও চরিত্র নির্মাণ করেন। তাঁর সৃষ্টির ভেতর দিয়ে সমাজের অন্তর্লীন সত্য মূর্ত ও বিমূর্ত– দুই রূপেই প্রকাশ হয়। সুতরাং, আমাদের তাঁর প্রতি বিশেষ মনোযোগী হতে হয়। কারণ, তিনি গল্প লেখার নাম করে সময়ের প্রতিচ্ছবি, সমাজের দ্বন্দ্ব, মানবিক টানাপোড়েন আর জীবনের বহুমাত্রা আমাদের সামনে হাজির করেন।

এই কথাশিল্পীর অনন্যসাধারণ ভাষাভঙ্গি সাহিত্য পাঠকের নব-অনুভবের উৎস হয়ে ওঠে। দুঃখের প্রসঙ্গে তাঁর উপস্থাপন গভীর, অথচ আবেগহীন। এক চমৎকার কৌশলে স্বর ও ভঙিমায় এমন সূক্ষ্ণ প্যাঁচ কষেন যে, দুঃখ যেন মনের ওপর ভারী হয়ে চেপে না বসতে পেরে নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ে যায়। তাঁর ভাষার ধরন এমনই– অতি সরল, অথচ মায়াবী ও আকর্ষণীয়। মনে হয়, যেন শতাব্দীপ্রাচীন পুঁথির আবহ ভেসে আসছে তাঁর কণ্ঠ থেকে– গম্ভীর, মৃদু, মোহনীয়।

‘খিদমতুল মউত’ নূরুননবী শান্তর নতুন গল্পগ্রন্থ। ৯টি গল্পে সাজানো বইটির শুরুতেই ‘অপ্রেমের গল্প’; যেখানে বর্তমান রাজনৈতিক অপক্ষমতা আর নৈরাজ্যের দৌরাত্ম্যের ঘেরাটোপে অস্থির চরিত্রগুলোকে দেখা যায়। প্রতিবাদের স্বরবীজ অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে ক্ষমতার অপকৌশল, জিম্মিদশা চেপে ধরে স্বরতন্ত্র। গল্পে এক স্কুলশিক্ষার্থীকে শিকার হতে দেখি রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের; যেখানে সামাজিক অপক্ষমতার সামনে বিদ্যালয় প্রশাসনকে দাঁড়াতে হয় হাতজোড় করা, কাঁধভাঙা ভঙিতে। প্রেমও আটকা পড়ে রাজনৈতিক অপকৌশলের জালে। মানুষ পালিয়েও বাঁচতে পারে না। মরতেও যে পারে, তা নয়। অদৃশ্য পাগলাগারদের ভেতরে বসে সুন্দর মৃত্যুর স্বপ্ন দেখে।

দ্বিতীয় গল্প ‘কেউ না’। ‘কেউ’ হয়ে ওঠার সাধনাই যেন জীবন। পাশের মানুষটির কেউ একজন হওয়া, সমাজের কেউ হওয়া কিংবা বিশ্বসংসারের কেউ হয়ে ওঠার প্রাণান্ত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই মানুষ প্রাণ বহন করে। নিজেকে ছড়িয়ে দিতে চায় বিশ্বপ্রাণে। কিন্তু ‘কেউ’ হয়ে উঠতে না পারার আক্ষেপে বিরুদ্ধ, নিয়মবাদী, নিয়ন্ত্রক, দাহ্য সমাজে মানুষ ‘কেউ না’ হয়ে বেঁচে থাকে কিনা, তা সে নিজেও জানে না। এ গল্পে সামাজিক জাতিগত ও শ্রেণি বিভাজনের চিত্রটি খেয়াল করি। মুচির ছেলে ‘বয়রক’, যে স্কুলে গিয়েই টের পায় সমাজ তাকে নেবে না। সে উপলব্ধি করে, ‘আমি কেউ না’।

নামগল্প ‘খিদমতুল মউত’। নষ্ট সমাজে সব যেখানে ব্যবসার বস্তু, এমনকি মৃত্যুর নিদানও পণ্য। এখানে একজন মানুষ, যিনি এই পচে যাওয়া সমাজের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে বাঁচতে চান, পারেন না। এমনকি স্বেচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতাও যার নেই। শেষ পর্যন্ত নিজেকে তিনি তুলে দেন স্বেচ্ছামৃত্যুর স্টার্টআপ ‘খিদমতুল মউত’-এর হাতে।

‘খিদমতুল মউত’ আমার কাছে অনেকটা বর্তমান বাংলাদেশের হাসপাতাল বা ক্লিনিকের রূপক মনে হয়, যেখানে গেলে আপনি দুষ্টুচক্রের হাত থেকে রেহাই পাবেন না। গল্পের চরিত্রও শেষ পর্যন্ত রেহাই পান না, পালিয়ে বাঁচতে পারেন না, পড়ে যান দুষ্টুচক্রের জালে। দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষাব্যবস্থা, মেকি বন্ধুত্ব, ক্ষমতালোভীদের উদ্ভট রাজনৈতিক উল্লম্ফন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান– সবই যেন সাজিয়ে রাখা হয়েছে মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করার বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে!
সব গল্প নিয়ে আলাদা করে বলার পরিসর এখানে নেই। উত্তরবঙ্গের ভাষামাধুর্য নবপ্রাণ পেয়েছে নূরুননবী শান্তর ‘খিদমতুল মউত’-এ। এ দেশের বিকলাঙ্গ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে দিশাহীন মানুষের মৃতের মতো বেঁচে থাকার গল্পগুলো পাঠককে নতুন করে ভাবাবে।

খিদমতুল মউত ।। নূরুননবী শান্ত ।। গল্প ।। আইডিয়া প্রকাশন ।। প্রচ্ছদ: বেনামী বাউল ।। পৃষ্ঠা: ১১২ ।। মূল্য: ২০০ টাকা

মাহাবুবা লাভীন, কবি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল বই র জন ত ক ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

দুই মিনিটের বিতর্কিত দৃশ্য দিয়ে আলোচনায়, পরে বলিউডকে বিদায় জানান সেই অভিনেত্রী

বলিউডের ইতিহাসে এমন অনেক অভিনেত্রী আছেন, যাঁরা শূন্য থেকে শুরু করে রাতারাতি পরিচিতি পেয়েছেন; পরে আবার হঠাৎই হারিয়ে গেছেন। কিমি কাতকার তেমনই একজন। ১৯৮০-এর দশকে বলিউডে তিনি ছিলেন আলোচিত ও সাহসী অভিনেত্রীদের একজন।

কিমির উত্থান
আশির দশকটি বলিউডে সৃজনশীল ও পরিবর্তনের সময় ছিল, যেখানে অনেক প্রতিভাবান অভিনেতা-অভিনেত্রী তাঁদের ছাপ ফেলেছেন। কিমি ছিলেন সেই সময়ের অন্যতম উদীয়মান নায়িকা। পর্দায় সাহসী দৃশ্যের জন্য তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান। যদিও তাঁর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত; কিন্তু এর মধ্যেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন।

মুম্বাইতে জন্ম নেওয়া কিমি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মডেল হিসেবে, পরে তিনি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। ১৯৮৫ সালে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব টারজান’ দিয়ে আলোচিত হন তিনি। সিনেমার সাফল্য তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে। হেমন্ত বীরজের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি দর্শকদের মন মাতিয়ে দেন। তবে এ ছবিতেই একটি নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করে রাতারাতি আলোচনায় আসেন। দৃশ্যটি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘সেই সময় আমি জানতাম না এই দৃশ্য কতটা বিতর্কিত হবে। কিন্তু অভিনয় আমার জন্য সব সময় ছিল সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জ।’ এরপর ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে অমিতাভ বচ্চন, অনিল কাপুর, গোবিন্দ ও আদিত্য পঞ্চোলির সঙ্গেও সিনেমা করেন তিনি। তাঁর নাচ ও অভিনয়ের দক্ষতা দর্শকদের কাছে তাঁকে প্রিয় করে তোলে।

‘অ্যাডভেঞ্চার অব টারজান’-এ কিমি কাতকার। আইএমডিবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই মিনিটের বিতর্কিত দৃশ্য দিয়ে আলোচনায়, পরে বলিউডকে বিদায় জানান সেই অভিনেত্রী
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির