২০২৪ সালের ১৮ জুলাই বিকেল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছিল। প্রতিদিনের মতো জুরাইনে ইট ভাঙার কাজ শেষ করে যাত্রবাড়ীর বাসায় ফিরছিলেন দুই সন্তানের মা পারভীন। সেখানে আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ এক শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে পারভীনের বাঁ চোখে গুলি লেগেছিল।

বরিশালের হাতেম আলী কলেজে আন্দোলন করতে গিয়ে ৪ আগস্ট ডান চোখসহ শরীরের তিন জায়গায় গুলি লেগেছিল শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামের। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চলছিল তাঁরও।

কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পারভীন ও তরিকুল দুজনেই এক চোখ প্রায় হারাতেই বসেছিলেন। তবে গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর গ্রিন রোডের ভিশন আই হাসপাতালে সফলভাবে দুজনের চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

আজ সোমবার বিকেলে পারভীন ও তরিকুলের চোখের ব্যান্ডেজ খোলেন চিকিৎসকেরা। এই প্রতিবেদক তখন সেখানেই ছিলেন। পারভীন ও তরিকুল ক্ষতিগ্রস্ত চোখ দিয়ে এখন কিছুটা দেখতে পাচ্ছেন। চিকিৎসা শেষে ও বিশ্রামের পর তাঁদের দৃষ্টি অনেকটাই ফিরে আসতে পারে বলে আশা করছেন চিকিৎসকেরা।

আজ বিকেলে চোখের ব্যান্ডেজ খোলার পর পারভীন তাঁর চোখে গুলি লাগার ঘটনাটি সবিস্তার বললেন। লক্ষ্মীপুরের মেয়ে পারভীনের বয়স ৩০ বছর। তাঁর দুই ছেলে ৯ বছর বয়সী ইব্রাহিম ও ৪ বছরের ইয়াসিন। স্বামী–সন্তান নিয়ে যাত্রবাড়ী এলাকায় থাকেন তিনি।

পারভীন বললেন, ১৮ জুলাই জুরাইনে কাজ শেষ করে বিকেলে বাসায় ফিরছিলেন। জুরাইনের ব্রিজের নিচে এসে দেখেন, রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই, মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছে। পরে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত হাঁটেন। সেখানেও প্রতিবন্ধকতা দেখে যাত্রাবাড়ীর দিকে মোড় নেন। যাত্রবাড়ী গিয়ে দেখেন, কেউ মারা গেছেন, কারও হাত নেই, কারও পা নেই। রাস্তায় রক্ত আর রক্ত। এ সময় রাস্তার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকা এক ছাত্রকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশ সমানে গুলি করতে থাকে। এতে ওই ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়। একটি গুলি লাগে তাঁর নিজের চোখে। ছাত্রটি তাঁর কোলেই মারা যায় বলে তিনি জানান।

ওই ঘটনার কথা মনে হলে এখনো ঘুমাতে পারেন না পারভীন। আক্ষেপ করে বললেন, ‘ঢাকা শহর আইছিলাম অনেক স্বপ্ন লইয়া। আইয়া তো চোখই হারাইয়া ফালাইলাম। ভিশন আই হাসপাতাল থেকা কয়েকজনে মিল্লা আমারে একটা চোখ দান করছে। আল্লাহ যেন তাদের ভালো করে।’

চোখের ব্যান্ডেজ খোলার পর তরিকুলের চোখ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের

ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে  বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ