কক্সবাজার শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন। একসময় বরইতলীর বিভিন্ন গ্রামে বরই চাষ হতো। তবে এখন হচ্ছে গোলাপের চাষ। এ কারণে ইউনিয়নটি পরিচিত হয়ে উঠেছে গোলাপ গ্রাম নামে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে মহাসড়কের ওপর দিয়ে যেতে অতিক্রম করতে হয় চকরিয়ার এই বরইতলী এলাকা। মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার অংশে দুপাশে চোখে পড়ে লাল গোলাপের বাগান। বাতাসের সঙ্গে ভেসে আসা গোলাপের ঘ্রাণ মোহিত করে সড়কের যাত্রীদেরও।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের দুপাশে বিভিন্ন বাগানজুড়ে ফুটে আছে লাল গোলাপ। দূর থেকে দেখে মনে হয়, কেউ যেন সবুজের ওপর লালগালিচা বিছিয়ে রেখেছে। বেলা ১১টার দিকে সড়কের পূর্বপাশের একটি বাগানে ঢুকে দেখা যায়, সাতজন শ্রমিক বাগান থেকে গোলাপ কাটছেন। দূরে দাঁড়িয়ে গোলাপ কাটার কাজ তদারক করছেন বাগানের মালিক ইদ্রিস আহমদ।

রিপন দে (৪০) নামে বাগানের এক শ্রমিক বলেন, সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ৮ শতাধিক গোলাপ কেটেছেন (সংগ্রহ) তিনি। রিপন জানান, প্রতিদিন সকালের দিকে গোলাপ কাটেন তিনি। তারপর সেই গোলাপ গাড়িতে করে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম। বাগানের নারী শ্রমিক শিল্পী রানি দে (৫৫) বলেন, তিন ঘণ্টায় তিনি সাত শতাধিক গোলাপ কেটেছেন। ১০ বছর ধরে তিনি বাগানে গোলাপ কাটছেন।

বাগানের মালিক ইদ্রিস আহমদের (৬০) সঙ্গেও কথা হয়। তিনি বলেন, ২৩ বছর ধরে তিনি গোলাপ চাষ করে আসছেন। প্রতিবছর তিনি ৫০ লাখের বেশি গোলাপ বিক্রি করেন। আয় করেন ২৫ লাখ টাকার বেশি। অনেক সময় গোলাপ বিক্রি হয় না, গাছেই নষ্ট হয়। তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়। এ ধরনের সময়ে ফুল বিনা মূল্যে বিতরণের জন্যও কাউকে পাওয়া যায় না।

বাগানটির মালিক ও শ্রমিকেরা জানান, ৬ কানির (কানিতে ৪০ শতক) বাগানটিতে গাছ আছে ২৪ হাজার। প্রতিটি গাছে ফুটেছে দুই থেকে পাঁচটি গোলাপ। প্রতিদিন ৬ হাজার গাছ থেকে প্রায় ৩০ হাজার গোলাপ কাটা হয়। তারপর সেই ফুল পাঠানো হয় চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় এলাকার ফুলের দোকানগুলোয়। প্রতিটি গোলাপ সাধারণত পাইকারিতে বিক্রি হয় দেড় টাকায়। ইদ্রিস আহমদ বলেন, গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি করেছেন ১০ টাকা দরে। এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হতে পারে। ওই দিন তিনি ৬০ হাজার গোলাপ বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ইদ্রিস আহমদের দক্ষিণ পাশে আবদুল মান্নানের তিন কানির আরেকটি গোলাপবাগান। এই বাগানের প্রতিটি গাছে ফুটেছে তিন থেকে চারটি লাল গোলাপ। সকালের কয়েক ঘণ্টায় গাছগুলো থেকে কাটা হয় দেড় হাজারের বেশি গোলাপ। এই ফুলও চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় এলাকায় সরবরাহ করা হবে জানিয়ে আবদুল মান্নান (৫৫) বলেন, একসময় বাগানের এ জমিতে তামাকের চাষ হতো। লাভজনক তামাক চাষ বাদ দিয়ে তিনিসহ গ্রামের ৪০ জন চাষি ৬০ কানি জমিতে ছোট-বড় ১৫টি গোলাপবাগান সৃজন করেন। প্রথম দিকে চাষিরা লাভবান হলেও এখন ফুলের বাজার মন্দা।

গোলাপ বাগানে এক নারী শ্রমিক কাজ করছেন। সম্প্রতি চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি দেওয়া স্ববিরোধিতা মনে করছে বিএনপি

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণাকে স্ববিরোধিতা বলে মনে করছে বিএনপি।

জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ চারটি রাজনৈতিক দল। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।

এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় রাস্তায় কর্মসূচি দেওয়া অনেকটা স্ববিরোধিতা। তবে অবশ্যই যেকোনো দলের কর্মসূচি দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। তারা কর্মসূচি দিতে পারে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের দাবির মধ্যে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষেও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি কখনো ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল না। এখন কোনো দল তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এটি নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে চাইলে দিতে পারে। কিন্তু জনগণের নামে এক দলের আদর্শ বা দাবি অন্যদের ওপর আরোপ করা কতটা সঠিক, সেটা দেখতে হবে।

জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলেছি, শুধু প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা আমরা সমর্থন করি না। আগে আইন ছিল না, এখন আইন হয়েছে। কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত। এখন ঢালাওভাবে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে চাইলে তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটা জনগণ বিবেচনা করবে।’

শুরু থেকেই আমরা বলেছি, শুধু প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা আমরা সমর্থন করি না। আগে আইন ছিল না, এখন আইন হয়েছে। কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত। সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি নেতা

সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে, সেটা দেখতে হবে। এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে, নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে, নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো কৌশল কি না, সেটাও দেখতে হবে। যারা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করার অধিকার আছে। তারা যদি রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে কর্মসূচি দেয়, তাদের মাঠের রাজনৈতিক বক্তব্যের জবাব বিএনপি মাঠের বক্তৃতার মাধ্যমেই দেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাজা শরফুদ্দীন চিশতির মাজারে হাত দিলে পরিণাম হবে ভয়াবহ: আহলে সুন্
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • ইতিহাসের দ্রুততম মানবের এখন সিঁড়ি ভাঙতে দম ফুরিয়ে আসে
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • প্রাথমিকে গানের শিক্ষক বাদ দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • পনেরো বছরে থেমে গেল শিশুশিল্পীর জীবন
  • পাকিস্তানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ৫ সেনা নিহত
  • আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি দেওয়া স্ববিরোধিতা মনে করছে বিএনপি
  • ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া